সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজার অস্থির

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক সামান্য বেড়েছিল গত সপ্তাহের শেষ দিনে। লেনদেন কমলেও দিনশেষে সূচকের এ সবুজ সংকেত কিছুটা হলেও স্বস্তি জুগিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এর বাইরে সপ্তাহের পুরো সময়টাই দেশের শেয়ারবাজার ছিল অস্থিতিশীল। মূলত নীতিনির্ধারকদের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহের প্রথম দিনটি শুরু হয়েছিল বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে। আগের সপ্তাহের শেষ দিনে এসইসি শেয়ারের বিপরীতে ঋণসীমা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা কার্যকর হয় গত রোববার থেকে। আর হঠাৎ করে বিনিয়োগকারীদের ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ দিন মূল্যসূচকে বড় ধরনের দরপতন ঘটে। একই সঙ্গে কমে লেনদেনের পরিমাণও।
ঋণসীমা কমানোর সপক্ষে এসইসির যুক্তি ছিল, অতিরিক্ত তারল্যপ্রবাহের কারণে বাজারে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছিল। এই ঝুঁকি কমাতেই বাজারে হস্তক্ষেপ করেছে তারা।
কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ হস্তক্ষেপ এক দিনের ব্যবধানেই অসাড় প্রমাণিত হয়। সোমবার থেকে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। বাড়তে থাকে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। এ পর্যায়ে এসইসি বাজার নিয়ন্ত্রণে বেছে নেয় ভিন্ন কৌশল। অনেকটা পুলিশি কায়দায় বড় বড় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষস্থানীয় ৫০ জন গ্রাহকের লেনদেনের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায়। উদ্দেশ্য, এসব গ্রাহকের লেনদেনে কোনো অনিয়ম রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা। একই সঙ্গে তাদের নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে কি না, তাও যাচাই করে দেখতে চায় এসইসি।
সপ্তাহের শেষ দিকে এসে ৫৪টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া এসইসির এ চিঠির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তালিকায় থাকতে পারে—এমন বিনিয়োগকারী তো বটেই, সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। তাই বাজার আবার কমতে শুরু করে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণে এসইসির কৌশল কিছুটা সফল হলেও বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকেরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি।
তাঁরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে বাজারে তারল্যপ্রবাহ বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় শেয়ারের সরবরাহ বাড়েনি। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই শেয়ারের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় শেয়ারের সরবরাহ না বাড়িয়ে সূচক নিয়ন্ত্রণের কৃত্রিম প্রচেষ্টা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাজার পরিস্থিতি: ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে সাত হাজার ২৪৪ কোটি টাকা, আগের সপ্তাহে চেয়ে যা ৩৩ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ১০ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে যেখানে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল দুই হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, সেখানে গত সপ্তাহে তা নেমে এসেছে এক হাজার ৪৪৯ কোটি টাকায়। সে হিসেবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে প্রতিদিনকার গড় লেনদেন কমেছে ৭১৭ কোটি টাকা।
লেনদেনের পাশাপাশি ডিএসইতে সাধারণ মূল্যসূচকেরও পতন ঘটেছে। সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর সাধারণ সূচক ছিল ছয় হাজার ৪৩২ পয়েন্ট। আর সপ্তাহশেষে তা প্রায় ১২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৩০৯ পয়েন্টে। এ সময় ডিএসইতে ২৫৭টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৮৬টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে মাত্র ৭১টির।
দাম বাড়ার শীর্ষ ১০: ম্যারিকো বাংলাদেশ, আইসিবিএমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি এমসিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড, গ্রামীণ মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, আইসিবি এমএমসিএল তৃতীয় এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড ও আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড।
দাম কমার শীর্ষ ১০: ম্যাকসন্স স্পিনিং, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সমতা লেদার, মেঘনাপেট, দেশ গার্মেন্টস, আলফা টোব্যাকো, বিডি অটোকারস ও সোনালি আঁশ।

No comments

Powered by Blogger.