ডাইনি অপবাদ দিয়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে আফ্রিকায়

ডাইনি বা খারাপ আত্মা ভর করেছে, কালো জাদুর চর্চা করছে—এ ধরনের অপবাদ দিয়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু অংশে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, এ ধরনের অপবাদে নির্যাতিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনাথ, পথশিশু ও প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডাইনি বা কালো জাদুকর হিসেবে আখ্যা দেওয়া শিশুদের আগুনে ফেলে দেওয়া, মারধর এবং হত্যার মতো শাস্তি দেওয়া হয়। গবেষকেরা বলছেন, একটি শিশু ডাইনি বা শয়তান জাদুকর হতে পারে—ওই অঞ্চলে এমন বিশ্বাসের প্রচলন অপেক্ষাকৃত নতুন। ১০-২০ বছর আগেও সাধারণত নারী ও বৃদ্ধদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনা হতো।
ইউনিসেফ বলছে, এ ধরনের অভিযোগ এনে অসহায় শিশুদের নির্যাতন করার হার বাড়ার একটি কারণ নগরায়ণ। পাশাপাশি যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অসহায় শিশুরা এভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। শিশুদের লালনপালনের খরচ বেড়ে যাওয়া এ ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে। সংস্থার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ডাকিনিবিদ্যার এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে খুব বেশি কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। তবে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এক ধরনের অন্যায় এবং এই অন্যায় প্রতিরোধে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ নেবে তারা।
আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকিনিবিদ্যা বা কালো জাদুর চর্চার অভিযোগ আনা হয়েছে—এমন বেশির ভাগ শিশুর বয়স আট থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। প্রায়ই এই বয়সের শিশুরা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয় এবং মাঝেমধ্যেই তাদের হত্যা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের চোখে-কানে পেট্রল ঢেলে দেওয়া হয়। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে, এমনটি করলে শিশুর ভেতর থেকে ‘শয়তানের আত্মা’ বের হয়ে যায়।
জানা গেছে, ‘শিশুর ওপর ভরকারী শয়তানি আত্মা’ তাড়াতে স্থানীয় ধর্মীয় মোড়লেরা মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে থাকেন। সম্প্রতি নাইজেরিয়ায় এ ধরনের এক মোড়লকে আটক করা হয়। তিনি প্রতিটি শয়তান তাড়ানোর কাজে আড়াই শ ডলারের বেশি অর্থ নিতেন।
ইউনিসেফের পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার আঞ্চলিক শিশু নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মকর্তা জোয়াকিম থেইস বলেন, কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসায় ২০ হাজারের বেশি পথশিশু ‘ডাইনিতে ভর করেছে’—এমন অপবাদের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই মারধর এবং বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জোর করে শিশুদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়, তারা ডাইনি বা তাদের ওপর খারাপ আত্মা ভর করেছে। এ ধরনের অপবাদে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনাটাও একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.