কুইজের আনন্দ যজ্ঞে

এবারের বিশ্বকাপে প্রথম আলো পাঠকদের জন্য নানামাত্রিক কুইজের আয়োজন করেছে। এর মধ্যে আছে দেশের ২৮টি জেলায় প্রথম আলো অফিসে কুইজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন পুরস্কার জেতার সুযোগ, সাতটি বিভাগীয় শহরে প্রতিদিনের আলাদা কুইজ আয়োজন, এসএমএস, অনলাইন, সাপ্তাহিক ও পর্বভিত্তিক কুইজ। বিশ্বকাপজুড়ে ভিন্নমাত্রার ১২ কুইজ আয়োজনের পাশাপাশি কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা থেকে শুরু হয়েছে আরেকটি বিশেষ কুইজ। এই এসএমএস কুইজে অংশ নেওয়া যাচ্ছে দেশের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো মোবাইল থেকে। প্রতিদিনের কুইজগুলো ছাপা হয় যেদিন খেলা থাকে সেদিন। তবে পর্বভিত্তিক কুইজগুলো ছাপা হচ্ছে মাসজুড়ে, প্রতিদিনই।
কুইজের পাশাপাশি নতুন একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ‘বিশ্বকাপ ফুটবল ফ্যান অব দ্য ডে’ শিরোনামে। ফুটবল আর প্রিয় দল নিয়ে যারা মজার কাণ্ড করছেন তাঁদের সেই ছবি পাঠাতে বলা হয়েছে। মনোনীত ছবি প্রথম আলোতে ছাপানো ছাড়াও থাকছে প্রত্যেকের জন্য পুরস্কার। ছবি পাঠানোর জন্য যে ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেখানকার ই-মেইলগুলো আসলে সারা দিনের হাসির খোরাক।

হাজারো পুরস্কার
২৮ জেলা আর সাত বিভাগীয় শহরে প্রতিদিনের কুইজে সঠিক উত্তরদাতাদের পুরস্কার দিয়ে দেওয়া হচ্ছে পত্রিকায় নাম ছাপা হওয়ার দিনই। এসি, টিভি, ডিভিডির মতো বড় পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে। আর এসএমএস কুইজে যারা প্রতিদিন ল্যাপটপ, জাবুলানি ফুটবল, ডিজিটাল ক্যামেরা, এলসিডি টিভি জিতছেন তাঁদের পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠান করে।
বিশ্বকাপজুড়ে প্রথম আলোর ১৩টি ভিন্নমাত্রার কুইজে পুরস্কার হিসেবে থাকছে দুটি গাড়ি, ৩৭টি ল্যাপটপ, ২৮টি এসি, একটি মোটরসাইকেল, ২০টি রেফ্রিজারেটর, পাঁচটি এলসিডি টিভি, ৪৬টি রঙিন টিভি, আটটি মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ২৫টি জাবুলানি ফুটবল, চারটি পিডিএ, চারটি এলসিডি মনিটর, ৫৬টি মোবাইল ফোন, ছয়টি ডিজিটাল ক্যামেরা, ৫৪টি ডিভিডি প্লেয়ার, ৭২১টি ইস্তিরি, ৭০০টি ফুটবলসহ তিন হাজার ৪০০টির বেশি পুরস্কার। যেদিন খেলা থাকে তার পরদিন হয় ড্র অনুষ্ঠান। ঢাকার সব ড্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান ফুটবলার, কোচ ও ক্রীড়াব্যক্তিত্বরা। সারা দেশেও স্থানীয় ফুটবলার, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব আর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আসছেন কুইজের ড্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে। ড্র অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই উপস্থিত থাকছেন কুইজে অংশগ্রহণকারীরা। এসএমএস কুইজসহ বড় পুরস্কারের ড্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিথি নিজে ফোন করে সুখবরটি জানাচ্ছেন বিজয়ীকে।

এ এক এলাহি কাণ্ড
প্রতিদিন প্রথম আলোর এসএমএস কুইজে অংশ নিচ্ছেন ৬০ হাজারের বেশি প্রতিযোগী। আর সারা দেশে ২৮ জেলার প্রথম আলো অফিসে প্রতিদিন কুপন পড়ছে অসংখ্য। প্রতিদিন, বিশেষ করে যেদিন প্রতিদিনকার কুইজগুলো ছাপা হচ্ছে, সেদিন সারা দিনই প্রথম আলো অফিসগুলোতে কুইজে অংশগ্রহণকারীদের ভিড় লেগেই থাকে। বিশেষ করে কুইজ জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার আগে আগে লম্বা লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বকাপের এই বাড়তি উন্মাদনায় মুখরিত সারা দেশে প্রথম আলোর কার্যালয়গুলো। পাঠকদের আগ্রহ প্রথম আলোর এই কুইজ আয়োজনে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে। সেই সঙ্গে সারা দেশের বিরাট এই কর্মযজ্ঞ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে প্রথম আলোর কর্মী বাহিনী।

পুরস্কারের আনন্দ, উন্মাদনা এবং...
বিশ্বকাপে মাসজুড়ে কুইজ আর পুরস্কার জেতার উন্মাদনায় অনেক মজার ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন। সবচেয়ে মজা হয় যখন পুরস্কার বিজয়ীকে ফোন করে জানানো হয় সুখবরটি। পুরস্কার জেতার খবর শুনে সবাই অবাক হয়, খুব স্বাভাবিকভাবে। তবে সেই অবাক হওয়ার ভঙ্গিমাটা থাকে একেক জনের একেক রকম। গত ২৫ জুন ২৪ জুনের ল্যাপটপ বিজয়ীকে ফোন করে সুখবরটি জানান সাবেক ফুটবলার ও কোচ সাইফুল বারী। কিন্তু ফোন শুনে কিছুতেই ল্যাপটপ জেতার ঘটনাটি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বিজয়ী আহসান কবীর। যে মোবাইল নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল সেই নম্বরে পরে অনেকবার তিনি ফোন করেছেন, কিন্তু প্রতিবারই অবিশ্বাস করে গেছেন। তাঁকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছিল না যে তিনি সত্যিই একটি ল্যাপটপ পেতে যাচ্ছেন। দুই দিন পর প্রথম আলোতে বিজয়ী হিসেবে নিজের নাম দেখে আবেগে আপ্লুত আহসান কবীর ফোন করে ধন্যবাদ জানান কুইজ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের। ১৮ জুনের জাবুলানি ফুটবল বিজয়ী তানভির শিকদারকে যখন ফোন করে জানানো হলো, তাঁর পাঠানো এসএমএস ওই দিনের কুইজ বিজয়ী, তখন তিনি এসএমএস পাঠানোর কথা সরাসরি অস্বীকার করে বসলেন। ‘আমি তো কোনো এসএমএস-ই পাঠাইনি, বিজয়ী হব কীভাবে?’ কোনোভাবেই তাঁকে বোঝানো যাচ্ছিল না। আসলে তিনি মনে করেছিলেন, কেউ হয়তো মজা করছে তাঁর সঙ্গে। পরে রাতে তিনি ফোন করে জানালেন, আসলে তাঁর স্কুলপড়ুয়া ছেলে বাবাকে না বলে লুকিয়ে এসএমএস পাঠিয়েছিল কুইজে। বাবা তাকে জিজ্ঞেস করলেও ভয়ে সে কথা স্বীকার করেনি সে। পরে পুরস্কারের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে এসএমএস পাঠানোর কথা বলে বাবাকে।
পুরস্কার নেওয়া নিয়েও মজা হচ্ছে অনেক। ঢাকায় এ পর্যন্ত যে তিনজন বিজয়ী এসি পেয়েছেন, তাঁদের তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে কিংবা মেসে থাকেন। তাই দামি পুরস্কার পাওয়ার আনন্দের পাশে আরেকটি প্রশ্ন চলে আসে, এটা দিয়ে কী করবেন তাঁরা, কোথায় রাখবেন? একজন তো পুরস্কার পাওয়ার পর অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরাসরি চলে গেলেন ট্রান্সকম ডিজিটাল শোরুমে, এসির দাম যাচাই করতে। তারপর প্রথম আলো থেকেই শুরু করলেন ফোনে খোঁজ নেওয়া—এসি বিক্রয়ের জন্য। আবার এর উল্টোটাও হয়েছে। গত ২৬ জুনের ল্যাপটপ বিজয়ী ছিলেন কুমিল্লার সাগরিকা দাস। পুরস্কার নেওয়ার পর তাঁর মা জানালেন, ‘আমার মেয়ে সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছে। আমি একটা কম্পিউটার কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে ল্যাপটপটা পেয়ে গেলাম। খুব উপকার হলো।’
কুইজগুলোর সঙ্গে একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে প্রতিদিন প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য। প্রথম আলোর কুইজ ব্যবস্থাপনা দলের তিনজন কর্মী সারা দিন এই ফোন ধরছেন। এত ফোন আসছে যে সেই ফোনের উত্তর দিতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন রীতিমতো। ঘটছে অনেক মজার ঘটনাও। কেউ হয়তো ফোন করে অনুরোধ করছেন, ‘ভাই, আমি খুব অভাবী, গাড়িটা পুরোনো হয়ে গেছে। আমাকে কুইজের গাড়িটা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, প্লিজ!’ কেউ আবার ফোন করে জিজ্ঞেস করছেন, পুরস্কার পাওয়ার শর্টকাট কোনো সিস্টেম আছে কি না। এসবের পাশাপাশি নানান কথার ফুলঝুরি তো আছেই।

No comments

Powered by Blogger.