কাজের জন্য বিদেশে যেতে সহজে ঋণদেওয়া হবে

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নামে নতুন একটি ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
কাজ বা চাকরির উদ্দেশ্যে যাঁরা বিদেশ যেতে চান, তাঁদের এ ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হবে। এ ঋণ তাঁরা পরে শোধ করে দেবেন। ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে সুদ নেওয়া হবে নামমাত্র। তবে ঋণের বিপরীতে তেমন কোনো জামানত নেওয়া হবে না।
মন্ত্রিসভায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে খানিকটা সংশোধনী আনা হয়েছে। আগের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার কথা ছিল। এই ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেবে সরকার।
গতকাল রোববার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন-২০১০’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ব্যাংকটি সীমিত আকারে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে ভবিষ্যতে তফসিলি ব্যাংকে রূপান্তরিত হতে পারবে।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গঠনের ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সূত্র জানায়, বিদেশগামী কর্মীদের কাছ থেকে বিদেশে যাওয়ার সময় সামান্য সার্ভিস চার্জ আদায় করা হয়। এই অর্থ জমা হয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল নামক একটি তহবিলে। তহবিলে বর্তমানে ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে। ব্যাংক গঠনের মূল অর্থ আসবে এ তহবিল থেকে। ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এতে সরকার পাঁচ কোটি টাকা জোগান দেবে। বাকি ৯৫ কোটি টাকা আসবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে। অর্থাৎ সরকার ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল এ ব্যাংকের উদ্যোক্তা।
তবে ব্যাংকটি প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কোনো ব্যাংক হবে না। বরং কর্মসংস্থান ব্যাংক বা আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিশেষায়িত ব্যাংক হবে। ব্যাংকটি কখনো মূলধন বা আর্থিক সংকটে পড়লে সরকারের কাছ থেকে অনুদান বা ঋণ নিতে পারবে।
সূত্র জানায়, বিদেশে যেতে শুধু ঋণের সুযোগ দেওয়াই এই ব্যাংকের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, বরং বিদেশ থেকে দেশে পরিজনের কাছে পাঠানো অর্থ পরিবারের সদস্যরা শুধু ভোগে ব্যয় না করে যেন উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাতে উৎসাহিত করাও এ ব্যাংক গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকটি গঠিত হলে বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানো সম্পর্কিত সব ধরনের প্রতারণা বন্ধ হবে।
শুরু থেকেই তফসিলি ব্যাংক গঠনের দাবি ছিল প্রবাসীদের। কিন্তু আর কোনো তফসিলি ব্যাংকের নিবন্ধন দিতে সরকার নারাজ। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তফসিলি ব্যাংকের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকও নেতিবাচক জবাব দিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, অনুমোদিত আইনের খসড়াটি শিগগির ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরে এর খুঁটিনাটি যাচাই করে দেখবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তারপর এটি উপস্থাপন করা হবে জাতীয় সংসদে। সংসদে পাস হওয়ার পর ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

No comments

Powered by Blogger.