অভিশাপ জয়ে দুঙ্গার শুরু

ওয়াল্ট ডিজনি ‘ডোপি’ নামে একটি অ্যানিমেশন চরিত্র তৈরি করেছিলেন। খর্বকায় ‘ডোপি’ কথা বলতে পারত না। ছোটবেলায় আকারে ক্ষুদ্র ছিলেন ও কম কথা বলতেন বলে ব্রাজিলের এক ফুটবলারের ডাকনামও হয়ে গিয়েছিল—ডোপি।
এই ‘ডোপি’ বড় হয়েছেন, অনেক বড়। কিন্তু সেই ডোপির মতোই কেমন যেন অসহায় একটা জীবন কাটাতে হয় তাঁকেও। এত কিছু করলেন, এত কিছু এনে দিলেন দেশবাসীর জন্য; তার পরও তাদের কাছে নায়ক হয়ে ওঠা হয় না তাঁর!
অধিনায়ক হিসেবে একটি বিশ্বকাপ, কোচ হিসেবে একটি কোপা আমেরিকা ও একটি কনফেডারেশনস কাপ জিতেছেন। তার পরও ‘ভিলেন’ হয়েই থাকতে হয় একালের ‘ডোপি’, কার্লোস দুঙ্গাকে। এত সাফল্যের পরও তাঁর দেশের সাংবাদিকেরাই প্রার্থনা করেন, দুঙ্গা যেন ব্যর্থ হন। তবে সাংবাদিকদের ধিক্কার আর তাচ্ছিল্যকে উপেক্ষা করে দুঙ্গা ঠিকই আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ে শুভযাত্রা করে ফেললেন।
পরশু উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে সেই যাত্রাটা ভালোয় ভালোয় শুরু করতে পেরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস অন্তত ফেলতে পেরেছেন দুঙ্গা। যদিও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন দলের খেলায়, ‘শুরুটা সব সময়ই খুব কঠিন হয়। অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয় বলে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এটা ঠিক যে আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। কিন্তু এটাই ফুটবল।’
দুঙ্গার শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৯৪ সালে। পেলের বিদায়ের পর দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে বিশ্বকাপ ছুঁতে পারছিল না ব্রাজিল। সেই সময়ে হঠাৎ করেই দলের নেতৃত্ব পেয়ে ব্রাজিলকে বদলে ফেলা শুরু করেছিলেন দুঙ্গা। জয়ের জন্য ফুটবল খেলে দেশটিকে এনে দিয়েছিলেন চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা।
কোথায় সেই ট্রফি নিয়ে সবাই মেতে উঠবে, তা না ব্রাজিলিয়ানরা চিৎকার শুরু করল—এ বিশ্বকাপ আমাদের নয়, দুঙ্গার। দুঙ্গা নাকি ব্রাজিলের সৃজনশীল খেলা নষ্ট করে, কেবল জয়মুখী ফুটবল খেলেছেন। ১২ বছর পর আবার যখন কোচ হয়ে ব্রাজিল জাতীয় দলে ফিরলেন চারদিকে সেই একই রব।
দুঙ্গার দল ম্যাচের পর ম্যাচ জিতছে, টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্ট জিতছে; কিন্তু ব্রাজিলিয়ানদের মন ভরে না। তাঁরা দুঙ্গাকে গালি দিয়েই চলেছেন। সাধারণ লোকের কথা বলে লাভ কী! সক্রেটিস, কার্লোস আলবার্তোরাও সমানে বলে চলেছেন, এই ব্রাজিল ‘ব্রাজিলিয়ান ফুটবল’ খেলে না।
শুধু সাবেকেরা এসব কথা বললে সমস্যা ছিল না। সংবাদমাধ্যমও দুঙ্গাকে নিয়ে শাপশাপান্ত করতেই থাকে। বাড়তে থাকে দুঙ্গার সঙ্গে সাংবাদিকদের দূরত্ব। দুঙ্গা সাংবাদিকদের এই ‘গালাগাল’ এড়াতে দল নিয়ে আরও নিভৃতচারী হয়ে উঠলেন, সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারও কখনো কখনো বন্ধ হয়ে গেল তাঁর অনুশীলনে। এই নিয়ে সাংবাদিকদের ক্ষোভ আরও বেড়ে গেল বিশ্বকাপে এসে।
আর না পেরে সেদিন খেলা শুরুর আগে দুঙ্গা করুণভাবে বললেন, ‘আমি তো সব সময় দলকে সমর্থন দিই। যদি আপনাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দিই, একটু কড়া কথা বলি; আপনারা বলেন আমি লোকটাই নাকি উগ্র। আপনারা আমাকে আঘাত করেন, রাত-দিন আক্রমণ করেন। একটু উত্তর দিলেই আপনারা বলেন, আমি সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছি।’
যত যাই হোক, যেভাবে বিশ্বকাপটা শুরু করলেন, সেভাবে এগিয়ে যেতে পারলে ব্রাজিল দুঙ্গার পাশেই থাকবে। তখন কোথায় হারিয়ে যাবে এই আক্রমণকারীরা!

No comments

Powered by Blogger.