বিডিআর বিদ্রোহের সেই দিন ও আজকের ভাবনা by এবিএম মূসা

নির্মম একটি হত্যাযজ্ঞের নাতিদীর্ঘ সময় পার করে বিডিআর বিদ্রোহের আসামিদের তথা অভিযুক্তদের অথবা হত্যাকারীদের বিচার শুরু হয়েছে। প্রক্রিয়াগত কারণে একটি বছর সময় লেগেছে। তাই বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়েছে বলে ইতিপূর্বে কেউ কেউ মন্তব্য করেছিলেন। সংশয় প্রকাশ নিয়ে প্রচারণায় প্রশ্নটি ছিল, আদৌ কি ‘বিচার’ হবে। সরকার কি কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি অথবা বিড়ম্বনার কথা ভাবছে? তার পরও সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে একটি বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে নাকি হত্যাকাণ্ডের অথবা উভয়ের বিচার হবে। নানা ধরনের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনার মিশ্র বিচারপদ্ধতি নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাবে বিচারের সূচনা বিলম্বিত হয়েছিল। সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে, বিচারপদ্ধতি নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের বিজ্ঞ আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ তার অবসান ঘটিয়েছেন। বিচারপদ্ধতিকে দুটি অংশে বিভক্ত করার যে যুক্তি তিনি দিয়েছিলেন তা স্বজনহারানো সেনাপরিজন এবং বিডিআর পরিবার উভয়েই সঠিক বলে গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে বিডিআরের আইনি বেসামরিক অবস্থান ও অধিকার স্বীকৃত হওয়ায় তাঁরাও সুবিচার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যে আইনি বিষয়ের জটিলতার ইতি ঘটেছে তা ছিল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কার কী ধরনের অথবা কোন বিধানমতে বিচার হবে তা নিয়ে ধোঁয়াটে পরিস্থিতি। দুটি পদ্ধতির উল্লেখ করা হয়েছিল, পক্ষে-বিপক্ষে সংশ্লিষ্ট মহল উভয় পক্ষে বিজ্ঞ মতামত দিয়েছিল। এক. সেনা আইনে না হলেও বিডিআর আইনে হবে সবার বিচার অথবা দুই. বিদ্রোহ ও হত্যা-খুন-লাশ গুমের বিচার হবে দেশের প্রচলিত দণ্ডবিধি অনুযায়ী। অর্থাত্ শুধু বিদ্রোহ নয়, হত্যাজনিত অপরাধ ফৌজদারি অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। সেনা আইনের কথাও শুনেছিলাম, পরে বোধহয় এই প্রক্রিয়া বিবেচিত হয়নি। অভিযুক্ত বিডিআরের সদস্যরা যারা সরাসরি বিদ্রোহ করেছিল, উসকানি দিয়েছিল, সংঘবদ্ধ করেছিল অথবা পরিস্থিতিজনিত কারণে জড়িয়ে পড়েছিল তারা কোন ধরনের আইন ভঙ্গের অপরাধ করেছিল তা নিয়ে আমরা অনেকে বিভ্রান্ত ছিলাম। সেই বিভ্রান্তির অবসান ঘটেছে। তাই আজ বিডিআর দপ্তর ও উপদপ্তরে তাদের প্রাথমিক বিচার চলছে। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিডিআর আইনেই বিচার হচ্ছে, তাই এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না।
এক বছর আগে বিদ্রোহের সময় যে নৃশংস, নির্মম ও রহস্যময় হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল দ্বিতীয় অধ্যায়ে সেই বিচারকার্যটি হবে সাধারণ ফৌজদারি আইনের দণ্ডবিধিতে। শ্রদ্ধেয় আইনমন্ত্রীর এই অভিমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী বিদ্রোহের চলমান বিচার শেষে আরেকটি বিচারপ্রক্রিয়া বিশেষ আদালতে শুরু হবে। অর্থাত্ সমগ্র বিচারকাজ, আমার মনে হয়, বিদ্রোহ আর হত্যা দুই বিচারিক মানদণ্ডে বিবেচিত হওয়ার কারণে প্রথমটির কার্যক্রমে যে সত্য উদ্ঘাটিত হবে, তারই ভিত্তিতে দ্বিতীয় বিচারকাজ সহজতর হবে। বিদ্রোহ ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচিত হবে।
এক বছর আগের আজকের দিনে সংঘটিত নাটকীয় ও নারকীয় ঘটনার বিচারের সূচনা নিয়ে আলোচনা করা গেল। কিন্তু সেই বিদ্রোহ কী উদ্দেশ্যমূলক ব্যর্থ অভ্যুত্থান এবং নৃশংস খুন— এই দুই ‘রেট্রোসপেক্ট’ বা নতুন ভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আমরা এক অদ্ভুত জাতি, সময়ের বিবর্তনে জাতীয় জীবনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী, এমনকি ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারত এমন ঘটনাকে শুধু তাত্ক্ষণিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যা ঘটেছিল তা কতদূর যেতে পারত তা নিয়ে পরবর্তী সময়ে ভাবি না, শুধু বিভিন্ন আঙ্গিকে স্মৃতিচারণা করি। জাতির ক্ষুদ্রাকার ইতিহাসে সামান্য স্থান পায়। ঘটনাপ্রবাহ কীভাবে রোধ করা হয়েছিল, ঘটনার দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি কীভাবে রোধ করা হয়েছিল অথবা সূচনার গভীরতা কতখানি ছিল তার গভীরে কখনো যাই না। তাই আজকে যখন একটি বিশেষ ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া চলছে তাকে প্রভাবান্বিত না করেও অতীতকে সামনে আনতে হচ্ছে। কারণ যা ঘটেছিল, তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাটি দূর করতে হলে বারবার অতীতের পটভূমিকে সামনে আনতে হবে। যেমন অতিসম্প্রতি বিচারের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে কয়েকজন খুনির ফাঁসি কার্যকর করার পর। বাকিদেরও হয়তো একদিন, সকালে বা কোনো সময়ে, ফাঁসির কাঠে ঝোলানো হবে। এ নিয়ে অনেকের উল্লাস আর অর্থহীন স্বস্তিবোধের সমালোচনা করে লিখেছি, ‘কতিপয় খুনির বিচার ও ফাঁসি হয়েছে কিন্তু ষড়যন্ত্রের বিচার হয়নি’, কতিপয় ‘বিপথগামী সেনাসদস্যের’ অপকর্ম বলে কেউ পার পেতে পারেন না। একটি ষড়যন্ত্রভিত্তিক অভ্যুত্থান সেই রহস্যের উদ্ঘাটন করতে হবে।
অতীতের সেই প্রেক্ষাপটে বলছি, বিডিআর বিদ্রোহের বিচারপ্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটবে। বিদ্রোহীদের জেল হবে, খুনিদের ফাঁসি হবে। কিন্তু অনেকগুলো ‘কী ও কেন’ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে তো? দুটি কমিটি, বস্তুত তিনটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। সাহারা খাতুনের কমিটির বিলুপ্তি ঘটিয়ে আনিস উজ জামানকে তৃতীয়টির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই দুটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কোথায়? এমনকি তদন্ত কোন পথে চলেছিল, আদৌ পরিসমাপ্তি ঘটেছে কি না, কী জানা গেল আর কী অজ্ঞাত রয়ে গেল তা প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। জেল আর ফাঁসি কি ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ তারিখের ইতিহাসের শেষ অধ্যায়? তদন্ত কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল কি না ভবিষ্যত্ পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য তা জানা প্রয়োজন। সেই জানাটি পূর্ণাঙ্গ ও প্রকাশ্য হতে হবে। অথচ এখন মনে হচ্ছে, তদন্তের কথাটি আমরা ভুলেই গেছি।
বস্তুত এক বছরের আগের পরিস্থিতিটি নিয়ে আজকের ভাবনায় ‘সময় ও সমাধান’ বিশেষ বিবেচনায় আসছে। প্রথমে সময় নিয়ে ভাবনাটিকে প্রাধান্য দেব। সময়কে প্রাধান্য দেব, কারণ একেবারে অশুভ মুহূর্তের প্রারম্ভে যদি নবনির্বাচিত সরকার-প্রধান শেখ হাসিনা ত্বরিত অথচ ধীরস্থিরভাবে সংকট ‘মোকাবিলা ও সমাধানের’ পথটি খুঁজে না পেতেন তা হলে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে ১৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়কালের দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি ঘটত। এই ‘সময়টির’ গুরুত্ব আমার ভাবনায় একটি অদ্ভুত কারণে নিজস্ব ভাবনায় অবস্থান নিয়েছে।
ব্যাপার হলো আমার একটি অবহিতির সঙ্গে সংকটের পূর্ণাঙ্গ চিত্রটি প্রধানমন্ত্রীর জানার ও গৃহীত কতিপয় পদক্ষেপে কাকতালীয় সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভূতপূর্ব প্রত্যুত্পন্নমতিতায়, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও সরকার পরিচালনায় যে দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছিলেন, তাও আমার সময় নির্ধারণের হিসাব-নিকাশের সঙ্গে হয়তো একটুখানি সম্পর্কযুক্ত। অথবা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা ও চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। আমার এই ধারণা সত্য নাও হতে পারে।
তাই বলছিলাম একটি চরম দুর্যোগপূর্ণ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর জানার ও সংকটের গুরুত্ব অনুভব করে তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়েছে। সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই কারণে আমার বর্ণিত সেই দিন আর সেই সময়ে ফিরে যাই। দিনটি অবশ্য ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ, কিন্তু সময়? কখনো মনে হয় সকাল নয়টা, হয়তো দশটা, আট-সাড়ে আটটাও হতে পারে। আমার সর্বসময়ের একজন সাথী, সব কাজের সহায়ক সেদিন সকালে একটি টেলিফোন পেল। অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন তাকে জানাল আমাকে একটি জরুরি বার্তা দিতে চান। নিজের পরিচয় দিলেন বিডিআরের একজন মধ্য অবস্থানের নায়ক অথবা সুবেদার। অতঃপর মোবাইল ফোনে তিনি বার্তাটি দিলেন, পিলখানায় ভীষণ গোলমাল চলছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি, অনেক কিছু ঘটছে, ঘটতে পারে। এই সংবাদটি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চান। তাঁর সঙ্গে তাত্ক্ষণিক যোগাযোগ করা প্রয়োজন। বার্তাটি আমার কাছে শুধু উদ্বেগের কারণ নয়, একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির আভাস মনে হলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে আমি যোগাযোগ করব কী করে? হয়তো তিনি অনেক কিছু জানেন, কিন্তু আমার জানাটিও তাঁকে জানানোর গুরুত্ব রয়েছে।
যা হোক মোবাইল টেলিফোনে পাওয়া বার্তাটি আমার কাছে ভয়ঙ্কর ও ভবিষ্যত্ সংকটের আভাস বলে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো। মনে পড়ল উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিনের কথা। দপ্তরের এই একটিমাত্র মহাশয়কে আমি যখন তখন যোগাযোগ করতে পারি। ড. আলাউদ্দিন সব শুনে বললেন, তিনি তখন প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান যমুনার পথে। মোবাইল সেটসহ আমার সহচরকে যমুনায় ড. আলাউদ্দিনের কাছে পাঠালাম। তিনি সেটটি হস্তান্তর করলেন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকীকে। পরে জেনেছি সেটি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছেছিল। পরবর্তী যে ঘটনাবলি বর্ণনা অপ্রাসঙ্গিক বা প্রাসঙ্গিক তা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেই বিভিন্ন সূত্রে বিডিআর অভ্যুত্থানের খবর যথাসময়ে পেয়েছিলেন। অসীম ধৈর্য ও ধীশক্তির প্রয়োগে তিনি ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছেন। একটি বিস্ফোরিত অগ্ন্যুত্পাতকে ছাইচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে ফেলেছেন। আমার প্রেরিত বাণী হয়তো শুধু তাঁকে যথাযথ ব্যক্তিদের সঙ্গে তাত্ক্ষণিক যোগাযোগের সুযোগ করে দিয়েছিল। আমার এই ধারণা সঠিক নাও হতে পারে, কারণ ইতিমধ্যে দুই মন্ত্রী পিলখানার প্রবেশদ্বারে হাজির হয়েছিলেন।
এক বছর পর অতীতের স্মরণে জাতি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এমন অভূতপূর্ব সংকটের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার একটি অসাধারণ বিজ্ঞ ও সাহসী ভূমিকাটি পরবর্তী সময়ে আলোচিত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কোনো এক মহল, রাজনৈতিক বলা যায়, একটি অদ্ভুত বিতণ্ডার সূত্রপাত করেছিল। প্রথমত প্রধানমন্ত্রী কি বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাত্ক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্রোহের নিরসন ঘটিয়ে একটি ব্যাপক রক্তপাতের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করেছিলেন। অথবা দুই. তাত্ক্ষণিকভাবে বিডিআর দপ্তরে সেনা অভিযান চালানোর হুকুম দিয়ে বিদ্রোহ পুরোপুরি দমন করাটাই কি সঠিক পন্থা হতো? দুটি বিষয় নিয়েই আমি গত বছর ঘটনার পরপর বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি সেই সময়ে তাঁর পরিপক্ব চিন্তাশক্তি তথা ম্যাচুরিটি ও পরিমিত মাত্রায় যথাসময়ে ও পরবর্তী সময়ে গৃহীত কতিপয় পদক্ষেপের সাফল্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছি।
আমার প্রতিবেদনের সর্বশেষ মন্তব্য হচ্ছে, প্রতিবছর ঘুরে-ফিরে ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সালটি আসবে। গণমাধ্যমে কয়েক বছর আলোচনার ঝড় বয়ে যাবে। ইতিমধ্যে বিচার শেষ হবে, কারও জেল বা কারও ফাঁসি হবে। নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার সেনাসদস্য অথবা হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া সিপাহিদের একসময়ে স্বজনহারার দুঃখ ভুলবেন? কিন্তু সেই ঘটনা, সেই দিনটি হঠাত্ করে ঘটে যাওয়া অথবা পরিকল্পিত অভ্যুত্থানের রহস্যটি কি কোনো দিন জানা যাবে? দুটি তদন্ত কমিটির ভূমিকা, তাদের কার্যক্রম ও ভবিষ্যত্ নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ কি কোনো দিন জানা যাবে?
আমার উপরিউক্ত পর্যালোচনার সারমর্ম উপলব্ধি করার সুবিধার্থে সেদিনের ঘটনার অব্যবহিত পরে প্রথম আলোতে প্রকাশিত কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার কয়েকটি বক্তব্য পুনরুদ্ধৃত করছি। ১. লে. জে. (অব.) আতিকুর রহমান—‘এ নিছক বিদ্রোহ ছিল না। ষড়যন্ত্র ছিল।’ জানতে চাই তদন্ত কমিটি এ সম্পর্কে কী বলেছে কিংবা আদৌ কিছু বলেছে কি না। ২. লে. জে. (অব.) হারুন-অর-রশিদ—‘হঠাত্ করে ঘটেনি। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যে সংঘটিত ঘটনাকে স্বাভাবিক ক্ষোভের প্রকাশ বলা যায়না।’ উল্লেখ্য, কোনো কোনো মহল কিন্তু তখন ‘ক্ষোভের প্রকাশ’ ধারণাটিকেই প্রাধান্য দিয়েছিল। তদন্ত কমিটিও কি এমন কোনো আভাস পেয়েছিল? যদি পেয়ে থাকে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ক্ষোভের উত্পত্তি না হয় তা নিয়ে কি কোনো সুপারিশ করেছে?
একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর বিশৃঙ্খল বিদ্রোহ অথবা সীমিত অভ্যুত্থান কিংবা জিঘাংসামূলক হত্যাকাণ্ডের সব বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যে ভবিষ্যতের জন্য, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, সেই ভাবনাটি কি কেউ ভাবছেন কিংবা ভাবনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন? তদন্ত রিপোর্টটির হদিস পেলেই এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক।

No comments

Powered by Blogger.