পুলিশি পাহারায় দরপত্র জমা -দ্রুত অনলাইনে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে

সরকারি ক্রয়, নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী বা তাঁদের আশীর্বাদপুষ্ট মহল জোর করে দরপত্র ছিনতাই করে। অনেক সময় অন্যরা দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগই পান না। ফলে দক্ষ ঠিকাদারেরা কাজ পান না। প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকা লুটপাট হয়ে যায়। উন্নয়ন-সহযোগী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংগতভাবেই স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলে। মর্যাদাসম্পন্ন যেকোনো জাতির জন্য এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার।
দরপত্র-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীর সাবধানবাণী শোনা গেছে, কিন্তু কাজ হয়নি। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি দরপত্র ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ যাবতীয় অপকর্ম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়নই আসল কথা।
সব সন্ত্রাসীই সরকারি বা প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদে মহাপরাক্রমশালীরূপে আবির্ভূত হয়। সরকার যদি এদের পরাভূত করতে যথার্থই আন্তরিক হয়, তাহলে প্রথমে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের মাথার ওপর থেকে সরকারি আশীর্বাদের ছাতাটি সরিয়ে নিতে হবে। সরকার এই সহজ কাজটি করতে কতটা প্রস্তুত, সেটাই বড় প্রশ্ন।
মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, এসব অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির কথাও বলা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে পুলিশ ও সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে কাজ করবে। গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিতে কোনো মন্ত্রী, সাংসদ বা সরকারি দলের কেউ তদবির করতে পারবেন না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটিও ভালো, কিন্তু অংশিক ভালো মাত্র। কারণ, তদবিরে কেউ ছাড়া পেলে শুধু সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়ী করার কথা বলা হয়েছে। তার মানে তদবিরকারীরা থাকবেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটা হতে পারে না। যাঁরা থানা-পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা দরকার।
সম্প্রতি পুলিশি পাহারায় ঢাকা সিটি করপোরেশনে কোরবানির পশুর হাটের ইজারা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বোঝা যায়, উদ্যোগটি সুফল দেবে। কিন্তু ১ নভেম্বর প্রথম আলোর ইন্টারনেট জরিপে দেখা যায়, এক হাজার ২১ জন পাঠকের মাত্র ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ মনে করেন, পুলিশি ব্যবস্থায় টেন্ডারবাজি বন্ধ হতে পারে। এই আস্থাহীনতার পেছনে রয়েছে মানুষের দীর্ঘদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা। তাই দ্রুত অনলাইনে দরপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থায় যেতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও কারিগরি ব্যবস্থা চালু করা হোক। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সুযোগ কমবে।

No comments

Powered by Blogger.