বাংলাদেশের সাফ প্রস্তুতিতে নানা জট

কাল দুপুরে নিজের বাসায় বসে সাফ ফুটবল নিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন। প্রস্তুতি কবে শুরু জানতে চাইলে মনে হলো এডসন সিলভা ডিডো এখনো অন্ধকারেই আছেন, ‘আমি জানি না লিগ (বাংলাদেশ লিগ) কবে স্থগিত হবে। সম্ভবত ১২-১৩ নভেম্বর শুরু করতে পারব।’
লিগ কবে স্থগিত হচ্ছে, সেটা জানা গেল বাফুফে অফিসে এসে। বাফুফের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃতীয় রাউন্ড শেষে এই লিগ বন্ধ করে সাফ ফুটবলের প্রস্তুতিতে নামবে বাংলাদেশ দল। ৭ নভেম্বর তৃতীয় রাউন্ড শেষ। সে ক্ষেত্রে তো পরদিনই সাফ ফুটবলের জন্য অনুশীলনে নেমে পড়তে বাধা নেই।
কোচের কথায় বোঝা গেল, এ বিষয়গুলো নিয়ে বাফুফের জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ হয় না। না হলে ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান বাদল রায় কেন তত্ক্ষণাত্ বাফুফের এক কর্মীকে ডেকে বলবেন, ‘বিকেএসপিতে চিঠি লিখে ৭ তারিখ থেকে মাঠ চান। দরকার হলে ওই দিনই দল পাঠিয়ে দেব বিকেএসপি।’
ব্যবস্থাপনা কমিটি দল পাঠাতে চায় বিকেএসপিতে। কিন্তু ডিডো বলছেন, ঢাকাতেই সাফ ক্যাম্প করার পরিকল্পনা তাঁর। কেন তিনি ঢাকায় অনুশীলন করতে চান তার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘সাফ ফুটবল যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হবে তাই এখানে প্র্যাকটিস করলেই সবচেয়ে ভালো হবে।’ এই কথা শুনে বাদল রায় তো বিস্মিত, ‘বিএকএসপিতে ক্যাম্প হবে, এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। কোচ বললে তো আর হবে না।’ বাদল রায়ের ক্ষোভ, ‘‘কোচ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ডিঙিয়ে ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়ে সাফের জন্য ছয় সপ্তাহ সময় চেয়েছেন শুনলাম। ফেডারেশন কাপের পর সব খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সসহ মূল্যায়ন রিপোর্ট চেয়েছিলাম, বললেন এটা নাকি ‘পুওর শো’ হয়েছে।’’
সাফ ফুটবলের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট সামনে, তখন কি না ব্যবস্থাপনা কমিটি আর কোচের মধ্যে দূরত্ব এমন বেড়ে গেল! এটা গেল একটা দিক। সামনে আরও বড় সমস্যারই আশঙ্কা জাগছে। ডিডোর আগের ক্যাম্প থেকে বহিষ্কার হওয়া ৮ ফুটবলারকে সাফ ক্যাম্পে রাখা না-রাখা নিয়ে এরই মধ্যে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
একটি সূত্রের খবর, ওই আটজনের মধ্যে শুধু স্ট্রাইকার এমিলি ও লেফট ব্যাক ওয়ালি ফয়সালকে দলে জায়গা দিতে পারেন ডিডো। বাকি ছয়জনের মধ্যে উইঙ্গার জাহিদ, স্টপার রজনী ও আরিফ দলে না থাকলে ব্যবস্থাপনা কমিটি সেটা মেনে নেবে বলে মনে হয় না। বাদল রায়ের কথা, ‘দেখি কোচ কী করেন। তবে ভালো পারফর্ম করেও কাউকে বাদ দিলে আমরা তা মানব না।’
কোচ কাকে দলে নেবেন, এটা পুরোপুরি তাঁর এখতিয়ার। সেই স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে ফেডারেশন কাপ ও লিগ দেখে ডিডো ২০ জন খেলোয়াড় বাছাই করেছেন। ৫ জনকে রেখেছেন পর্যবেক্ষণে। তাঁর নির্বাচিত ২০ জনের মধ্যে একজন একেবারেই নতুন (রহমতগঞ্জের খেলোয়াড়)। ২৫ জনের প্রাথমিক দলে একটা বড় ধরনের চমক থাকতে পারে। বাদ পড়তে পারেন এমন একজন, স্কোয়াডে যাঁর জায়গা পাকা বলেই ধরে নেন অনেকে। তাহলে কি চ্যালেঞ্জ কাপের মতো তারুণ্য-নির্ভর দল নিয়ে ৪-১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সাফ ফুটবলের চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছেন ডিডো?
‘তরুণ বা সিনিয়র বুঝি না, যারা আমার নজর কেড়েছে বা কাড়তে পারবে, তাদেরই দলে নেব। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার নেই’—বললেন ডিডো। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত মাঠে না নামলেও গোলরক্ষক আমিনুলের ওপরই আস্থা রাখছেন। ইনজুরি থেকে সেরে ওঠা আমিনুল সরাসরি সাফ ফুটবল দিয়ে মাঠে ফিরবেন।
দল একটা বেছে নিচ্ছেন ডিডো, কিন্তু সেটি তাঁর মনমতো হচ্ছে? ‘না, এটা আমার মনমতো হচ্ছে না। আমার পছন্দের কয়েক খেলোয়াড়কে দেখি সাইড বেঞ্চে। এটা ক্লাবগুলোর নিজস্ব ব্যাপার হলেও আমি হতাশ, সবাইকে ভালো করে দেখতে পারলাম না।’ খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়েও তাঁর অসন্তোষ, ‘জাতীয় দলের ক্যাম্পের পর এখন ওদের ফিটনেস অনেক নেমে গেছে।’ হাতে মাত্র সপ্তাহ তিনেক সময়, কতটা কী করতে পারবেন? কিন্তু বাংলাদেশের ব্রাজিলিয়ান কোচ তাঁর হাতে সর্বরোগের কোনো ওষুধ দেখেন না, ‘ক্লাবগুলোতে ট্রেনার নেই। এ জন্য ফিটনেসের লেবেলটা নিচের দিকে। এখন আর কী করব। আমি তো আর জাদুকর নই যে সব ঠিক করে ফেলব।

No comments

Powered by Blogger.