তৈরি পোশাকের জাপানি বাজার ধরার সুযোগ আছে বাংলাদেশের -সিপিডির সংলাপে গুণগত মান বাড়ানোর তাগিদ

জাপান বিশ্বের অন্যতম বৃহত্ তৈরি পোশাক আমদানিকারক দেশ। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পোশাক আমদানি করে। এর মধ্যে শুধু চীন থেকে দেশটি ৮০ শতাংশ পোশাক আমদানি করে থাকে। আর বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব ১ শতাংশের কম।
কিন্তু সম্প্রতি জাপান সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন থেকে পোশাক আমদানি কমিয়ে অন্য দেশ থেকে আমদানি করবে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ থেকে জাপানের বাজারে প্রচুর পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি হবে।
গতকাল রোববার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের নতুন বাজার জাপান’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশীয় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, জাপানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া গেলেও রুলস অব অরিজিনের শর্ত কঠিন হওয়ায় রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। রুলস অব অরিজিন শিথিল করা হলে আগামী এক বছরের মধ্যে জাপানে ১০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি সম্ভব হবে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান প্রধান অতিথি এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিশেষ অতিথি ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, জাপানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রুলস অব অরিজিনের শর্ত বাংলাদেশের অনুকূলে না হওয়ায় রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে জাপানের সঙ্গে সরকারিভাবে এসব শর্ত শিথিল করার জন্য আলোচনা করা হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাপানে তৈরি পোশাকের বাজার বাড়াতে হলে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ইপিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাপান খুবই উন্নতমানের পোশাক তৈরি করে থাকে। তাই জাপানি ক্রেতাদের উপযোগী পোশাক তৈরির জন্য ডিজাইন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও গুণগত মানোন্নয়নে দেশে জাপানি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
আমীর খসরু স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় রুলস অব অরিজিন শিথিল করার জন্য জাপানের প্রতি আহ্বান জানান।
সংলাপের সম্মানিত অতিথি ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত তামোতসু শিনোতসুকা বলেন, জাপানে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য তিনি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
নির্ধারিত আলোচক বিকেএমইএর সভাপতি মো. ফজলুল হক নিট পোশাকের রপ্তানিতে তিন স্তরবিশিষ্ট রুলস অব অরিজিনের পরিবর্তে দুই স্তর করা হলে অচিরেই জাপানে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, দেশের উদ্যোক্তারা জাপানের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এ জন্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, জাপান তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও বাজার ধরা সম্ভব হয়নি। কারণ, জাপানিরা গুণগত মানের ব্যাপারে কোনো ধরনের আপস করে না। তিনি জাপানে বাজার বাড়ানোর অংশ হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুত্সহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে জাপানের বাজারে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের ৯৮ দশমিক ৬০ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে। আর জাপানে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাকের বাজার রয়েছে। কিন্তু এ বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব খুবই কম।

No comments

Powered by Blogger.