মোবাইলে প্রেমের ফাঁদ : অভিনব কায়দায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন মধ্যবয়সী প্রেমিকা

মোবাইল ফোনে প্রেমের অভিনয় করে এক সেনা সদস্যের কাছ থেকে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এসে পুলিশের হাতে ধরা খেলেন মিনারা (৪০) নামের এক নারী। বৃহস্পতিবার রাতে হোসেনপুর থানা পুলিশ কথিত ওই প্রেমিকাকে আটক করে। পুলিশ জানায়, মোবাইল ফোনে প্রেমিকা আর সাক্ষাতে প্রেমিকার বড় বোনের অভিনয় করে হোসেনপুর পৌর এলাকার হনুমানতলা গ্রামের হোসাইন আলীর ছেলে মো: এনামুল হক জুয়েলের কাছ থেকে তার স্বজনদের চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মিনারা। প্রতারক মিনারা ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাকাটি পূর্বপাড়া গ্রামের মো: শহীদুল্লাহর স্ত্রী। এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার এনামুল হক জুয়েল বাদি হয়ে হোসেনপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। জুয়েল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে কর্মরত রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারী প্রতারক চক্রের সদস্য। প্রেমের ফাঁদে ফেলে লোকজনের সাথে প্রতারণা করাই তার পেশা। পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, সেনা সদস্য এনামুল হক জুয়েলের সাথে প্রায় চার বছর আগে ঘটনাচক্রে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় মিনারার। ফোনে তিনি নিজেকে স্বর্ণা বলে পরিচয় দিতেন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী বলে জানান। এভাবেই ফোনে কথা বলে বলে জুয়েলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন কথিত স্বর্ণা। একপর্যায়ে মিনারা (স্বর্ণা) তার প্রেমিক জুয়েলকে জানান, তার এক ভাই জেলা প্রশাসক ও আরেক ভাই সচিবালয়ে বড় পদে চাকরি করেন। তাদের চাকরি দেয়ার ক্ষমতাও রয়েছে। ভালো একটি সুযোগ ভেবে বছরখানেক আগে জুয়েল তার ছোট বোন ইতি আক্তার ও মামাতো ভাই বুলবুলকে চাকরি দেয়া যাবে কি না জানতে চান। মিনারা জানান, দু’জনকে চাকরি দিলে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। তার কথামতো ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ২৩১১৫১৪১৯২২ নম্বর হিসাবে ছয় লাখ টাকা জমা দেন জুয়েল। পরে স্বর্ণার বড় বোন সেজে মিনারা টাকা ওঠানোর জন্য জুয়েলের বাড়ি থেকে তার এটিএম কার্ড নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ওই টাকা উঠিয়ে কার্ডটি ফেরত দেন।
এরপর গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি জুয়েলের বাড়ি থেকে নগদ আরো দুই লাখ টাকা নিয়ে যান মিনারা। বাকি দুই লাখ টাকা চাকরি হওয়ার পর পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয় সেনা সদস্য জুয়েলকে। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও চাকরি না হওয়ায় জুয়েল ফোনে তার প্রেমিকা স্বর্ণার (মিনারা) কাছে টাকা ফেরত চান। তখন থেকেই শুরু হয় টালবাহানা। একপর্যায়ে জুয়েল প্রতারণা শিকার হয়েছেন বলে বুঝতে পারেন। কয়েক দিন আগে জুয়েল তার প্রেমিকাকে ফোন করে জানান, তার এক ভাগ্নের একটি চাকরি দরকার, কোনো সুযোগ আছে কি না। প্রেমিকা তাকে জানান, ফায়ার সার্ভিসে লোক নিচ্ছে, সেখানে ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে। এ জন্য চার লাখ টাকা লাগবে। সেনা সদস্য জুয়েল জানান, তিনি স্বর্ণাকে বিশ্বাস করেছিলেন। এ জন্যই আট লাখ টাকা তাকে দেয়া হয়। কিন্তু স্বর্ণাই যে বড় বোন নাদিরা সেজে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, সেটি বুঝতে তার অনেক দেরি হয়ে যায়। পরে চার লাখ টাকা নিতে স্বর্ণাকে ফোন করেন তিনি। যথারীতি বড় বোন নাদিরা সেজে স্বর্ণা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাকা নিতে আসেন তার বাসায়। এ সময় তাকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলামের সাথে গতকাল শুক্রবার কথা হলে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে সেনা সদস্য জুয়েল পুরো বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে সহযোগিতা চান। আমরা তাকে এ ধরনের একটি ফাঁদ পাতার পরামর্শ দিই। নাদিরা ওই ফাঁদে ধরা দেন এবং তাকে আটক করে পুলিশ। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে নাদিরা চাকরি দেয়ার নামে জুয়েলের সাথে প্রতারণা করে আট লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তা ছাড়া স্বর্ণা সেজে ফোনে সেনা সদস্যের সাথে প্রেম করার কথাও স্বীকার করেছেন ওই মধ্যবয়স্ক নারী। এ ঘটনায় আর কে কে জড়িত রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তদন্তের স্বার্থে আপাতত ওই নামগুলো জানানো যাচ্ছে না। তবে এরা সঙ্ঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্রের সদস্য। দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মানুষের সাথে এভাবেই প্রতারণা করে আসছিল।

No comments

Powered by Blogger.