পাট নিয়ে পরস্পরবিরোধিতা

পাট আমাদের অন্যতম অর্থকরী ফসল। এ খাতের বিকাশ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। অথচ তা নিয়েই পরস্পরবিরোধী অবস্থান প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। অর্থমন্ত্রী নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে বলেছেন, ‘লোকসান কমাতে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) একেবারে বন্ধ করে দেয়া উচিত। এদের কোনো কাজ নেই। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্ট হরিলুটে জড়িত।’ অন্যদিকে পাট প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিগত সরকারগুলো বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে পাট খাত ধ্বংস করেছে আর বর্তমান সরকার এ খাত চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘বিজেএমসি যে লোকসান দেয় তা যৌক্তিক, কারণ এ খাতের সঙ্গে ৬০ হাজার শ্রমিক জড়িত, তাদের বেতন-ভাতা দিতে হয়।’ স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন দেশের প্রধান অর্থকরী পণ্য ছিল পাট। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিজেএমসি ছিল দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রধান প্রতিষ্ঠান। দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল সংস্থাটির অধীনে থাকা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পাটকল। বর্তমানে সংস্থাটির আগের সেই অবস্থা আর নেই। বেশিরভাগ পাটকল ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সেসব পাটকলের অনেকগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে বিজেএমসির অধীনে রয়েছে ২৬টি মিল। এসব মিলেরও কোনো কোনোটির উৎপাদন বন্ধ থাকে মাঝেমধ্যে। সন্দেহ নেই, এর অন্যতম কারণ লোকসান। এটি সত্য, নানা কারণে বিজেএমসিকে লোকসান দিতে হচ্ছে। দুর্নীতি, মাথাভারি প্রশাসন, সরকার কর্তৃক সময়মতো পাট কেনার অর্থছাড় না দেয়া ইত্যাদি এর কিছু কারণ। কিন্তু তাই বলে সংস্থাটি বন্ধ করে দেয়া হলে সেটা হবে মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার শামিল। মনে রাখা দরকার, জনবলের দিক থেকে বিজেএমসি এখনও দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তাছাড়া সরকার যখন নতুন করে পাট খাতের উন্নয়নের কথা ভাবছে,
তখন বিজেএমসি নিয়ে এ ধরনের মনোভাব নেতিবাচক বার্তাই বহন করে। অর্থমন্ত্রী হয়তো বাজেটের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিজেএমসি বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন। কারণ সংস্থাটির জন্য দেয়া ভর্তুকি প্রতি বছর বাজেটের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বছরের পর বছর ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া কাজের কথা নয়। তাই যা করা প্রয়োজন তা হল সংস্থাটির লোকসান কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ। এ উদ্যোগ নানাভাবেই নেয়া যায়। প্রথমত, দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করা। দ্বিতীয়ত, পাটকলে পুরনো যন্ত্রপাতির বদলে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন। তৃতীয়ত, ভরা মৌসুমে পাট কেনার অর্থছাড় করা। চতুর্থত, পাটের বহুমুখী পণ্য তৈরি করে নতুন বাজারের সন্ধান। সর্বোপরি, পাট ও পাটশিল্পের উন্নয়নে সময়োপযোগী নীতি নির্ধারণ। পাট খাতের রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। পাট পরিবেশবান্ধব পণ্য হওয়ায় বিশ্বে প্লাস্টিক পণ্যের বদলে পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়ছে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বিজেএমসি। সংস্থাটিকে সেভাবে কাজে লাগাতে হবে। বিজেএমসি বন্ধ করে দিয়ে পাট খাতকে এগিয়ে নেয়া যাবে না, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করে আরও এগিয়ে নেয়ার উপায় খুঁজতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.