১১ বছর শিকলে বাঁধা জীবন

এগারো বছর ধরে শিকলে বাঁধা জীবন কাটছে বাসন্তী রানীর। মানসিক সমস্যায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তার এ অবস্থার কারণ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁশের তৈরি একটি বিশেষ বেঞ্চে তাকে পায়ে লোহার মোটা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। শীর্ণ ও রোগাক্রান্ত দেহে বাসন্তী শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখে তার চারপাশ। কথা বলে যৎসামান্য। পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম লক্ষ্মীরহাট ডাঙ্গাপাড়া। এ গ্রামে প্রায় ৩০ বছর আগে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক শিশু। বাবা-মা অনেক আদরে নাম রাখেন বাসন্তী রানী। বাবা হরিপদ রায় পেশায় কামার হলেও স্বপ্ন দেখতেন মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করবেন। মেয়ে স্কুলে বেশ ভালোই পড়াশোনা করছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার আচরণ পাল্টাতে থাকে। কখনও প্রলাপ বকতো। গ্রামে যার তার বাড়িতে গিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে আসতো। এ নিয়ে বাবা হরিপদের কাছে প্রায়ই নালিশ করতো স্থানীয়রা। অনেকে মারধরও করতো। অনেককে দিতে হতো জরিমানা। গরিব বাবা হরিপদ মেয়েকে সুস্থ করার জন্য স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করতে না পেরে বাসন্তীর পায়ে লোহার শিকল পড়িয়ে গাছে বেঁধে রাখা শুরু করেন। বাসন্তীর ভাবি পবিত্রা  রানী খাবারসহ তার প্রয়োজনীয় সহায়তা করলেও শিকলে বাঁধা জীবন থেকে মুক্তি মিলেনি। স্থানীয় অনেকের মতে, উন্নত চিকিৎসা করলে বাসন্তী ফিরে পেতে পারেন তার স্বাভাবিক জীবন। তিনিও বাঁচতে পারেন অন্য মানুষের মতো।
দেবীগঞ্জের দেবীডুবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাসন্তীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। এ বিষয়ে আমার দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
বাসন্তীর বাবা বলেন, অর্থের অভাবে তার উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। অন্যের বাড়ি যাওয়ার জন্য কেউ কেউ তাকে মারধর করতো। অনেকে নানা অভিযোগ করাসহ ক্ষতিপূরণ বাবদ কাউকে কাউকে দিতে হতো জরিমানা। এ অবস্থায় আমরা তাকে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করি। তাকে রাতে ঘরে রাখলেও দিনে এমন করেই রাখা হয়।

No comments

Powered by Blogger.