সংসদে কড়া সমালোচনা ও তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফও সংসদে অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন। অর্থমন্ত্রীর কথাবার্তায় সরকারক বিব্রত মন্তব্য করে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, অর্থমন্ত্রীর কিছু কথাবার্তায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আগেও তিনি অর্থমন্ত্রীকে কথা কম বলার পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে সেলিম বলেন, আপনার বয়স হয়ে গেছে, কখন কী বলে ফেলেন—ঠিক থাকে না। আজ রোববার সংসদ অধিবেশনে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে অনড় থাকায় অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব বাজেট পেশ করা। এই সংসদের ৩৫০ জন জনগণের প্রতিনিধি ঠিক করবেন জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে, কোনটা থাকবে না। আপনি একগুঁয়েমি সিস্টেম বন্ধ করেন, কথা কম বলেন।’ ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, এই সামান্য টাকার জন্য গোটা জাতির কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হবে। আবগারি শুল্ক আগের অবস্থায় রাখার দাবি জানিয়ে হানিফ বলেন, অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক করেছেন, জানা নেই। তিনি বলেন, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এ টাকা কিছু নয়। তাহলে কেন সামান্য টাকার জন্য সারা দেশে মানুষের মধ্যে আক্ষেপ তৈরি করলেন। মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বাজেট নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় চলছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা নির্বাচনী বাজেট নয়।
তাহলে মাননীয় অর্থমন্ত্রী কবে নির্বাচনী বাজেট দেবেন? ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সরকার দলের এই সদস্য বলেন, অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেছেন গণহারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বছরে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট আহরণের নজির নেই। এটা যৌক্তিক নয়। ব্যাংকখাতে লুটপাটের অভিযোগ এনে হানিফ বলেন, বেসিক ব্যাংককে এক হাজার কোটি টাকা মূলধন দেওয়া হচ্ছে। কার টাকা কেন দিচ্ছেন? তাঁরা দুর্নীতির জন্য লুটপাট করবে আর মূলধন দিতে হবে আমাদের? প্রয়োজনে এই ব্যাংকগুলোর বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করা হোক। সরকারি টাকা এভাবে লুটপাট করতে দেওয়া যাবে না। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্বাচনের আগে জনগণকে ‘বিভ্রান্ত’ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলের আরেক সাংসদ সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আল্লাহ তাঁকে (অর্থমন্ত্রী) সুযোগ দেবে কি না জানি না। কিন্তু যাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে, তাঁরা যাতে নির্বাচন করতে পারে সেটা খেয়াল করতে হবে।’ আবুল কালাম ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি করে বলেন, এমনিতে সুদ কম। এর ওপর শুল্ক বাড়ালে তা হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। সুদ এমনিতেই কম। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার না কমানোর দাবি জানিয়ে আবুল কালাম বলেন, ১০ শতাংশ বাড়ালে খরচ হবে এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু উপকার পাবে লাখ লাখ মানুষ। এটা সিনিয়র সিটিজেনরা পান। তাঁরা কোথাও হাত পাততে পারে না। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঋণ খেলাপিদের বিশাল লিস্ট দিছেন। কই তাদের তো ধরতে পারেন না। ব্যাংকের টাকা পাচার বন্ধ করতে পারছেন না। আর নিম্নমধ্যবিত্তের ওপর কর চাপিয়ে দিচ্ছেন।’

No comments

Powered by Blogger.