প্রবীণ নিবাসে কষ্টে দিন কাটে অনেক বাবার

‘বাবা দিবস’ পালিত হল রোববার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়েছে। ফি বছর দিবসটি আসে, আবার নীরবেই চলে যায়। কোথাও হয়তোবা বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নিয়ে খানিকটা আলোচনাও হয়। ব্যস, এ পর্যন্তই। বাস্তবতা হচ্ছে, সন্তানের অবহেলা, ভরণপোষণে অস্বীকৃতি কিংবা লাঞ্ছনার কারণে প্রবীণ নিবাসে কষ্টে কাটে অনেক বাবার দিন। এর বাইরেও সংসারে অনেক বাবা-মা সন্তানের অবহেলার কারণে চরম কষ্টের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন কার্যকরী করার ঘাটতি তাদেরকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দেয়। বিশ্বের প্রায় ৫২টি দেশে ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। বাবা দিবসের প্রচলন বিংশ শতাব্দীর শুরুতে। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিতৃদিবসের সরকারি ছুটি ঘোষণার বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে ‘বাবা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। সন্তান বাবার কথা ভুলে গেলেও বাবা কিন্তু সন্তানের কথ কখনও ভুলতে পারে না। রোববার সকাল ৯টায় কথা হয় ভ্যানচালক হিরন মিয়ার সঙ্গে। পরিবার প্রতিপালনে একমাত্র ভরসা পাঁচ সন্তানের জনক হিরণ মিয়া। ঝড়-বৃষ্টি আর শত বিপদেও নিস্তার নেই। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে তাকে ভ্যান চালাতে হয়। সন্তানদের কথা উঠতেই হিরন বলল, ‘আমি তাদের বাবা-তাদের ছাড়া ঘুমাতে-খেতে পারি না।’ অপত্য স্নেহের এ এক অকৃত্রিম নমুনা। পিতাও কিন্তু পরিণত সন্তানের কাছে যথাযথ আচরণ প্রত্যাশা করেন। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন পার্ক, রাস্তা ও আগারগাঁও প্রবীণ নিবাস ঘুরে দেখা গেছে, বাবাদের কষ্ট ও সন্তানের জন্য আকুতি। কিছু বাবা কাঁদতেও ভয় পাচ্ছেন, যদি সন্তানদের অমঙ্গল হয়! ফুটপাতে থাকা কিংবা বস্তিতে থাকা একজন বাবা শত কষ্ট করেও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। অনুরূপ অনেক সন্তানও বৃদ্ধ বাবার প্রতি শত দারিদ্র্য সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে উচ্চ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এর ব্যতিক্রম ঘটনার অসংখ্য নজির রয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০ বাবা সন্তান-পরিবার থেকে কষ্ট, অবহেলা পেয়ে একাকিত্বের জীবন কাটাচ্ছেন। এক বাবা বললেন, ‘অনেক চেষ্টায় কান্না চেপে রাখি। কিন্তু চোখের জল কেন যেন বাধ মানতে চায় না। শুনেছি, সন্তানের কষ্টে যদি কোনো মা-বাবার চোখে অশ্রু আসে, সেই সন্তানের চরম অমঙ্গল হয়। তাই কান্না চেপে রাখি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক অধ্যাপক বললেন, ‘সন্তানদের কাছে ভালো খাবার জামাকাপড় চাইনি। একটু আশ্রয় শুধু চেয়ে ছিলাম। কাছে থাকতে চেয়েছিলাম। সন্তানেরা যদি একটি কুঁড়েঘরে রাখত তবু তো কুঁড়েঘরের ফাঁক দিয়ে তাদের দেখতে পারতাম।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন, গুলিস্তান পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকা বেশ ক’জন বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারাও আজ বড় একা। এক সময় সবই ছিল, এখন পথে থাকতে হয়। সন্তানরা তাদের দেখছেন না, খাওয়াচ্ছেন না। বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম আতিকুর রহমান যুগান্তরকে জানান, মানুষ দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। তবে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এখনও পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ববোধ যথেষ্ট রয়েছে, যা উচ্চবিত্ত সমাজে দেখা যায় না। তিনি বলেন, কম সন্তান যে পরিবারে সেখানে বেশি অবহেলার ঘটনা চোখে পড়েছে। বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ববোধের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ পৃথিবীতে নেই।

No comments

Powered by Blogger.