রিমান্ডে শাহাবুদ্দিন নাগরীর অসংলগ্ন তথ্য

ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক কাস্টমস কমিশনার, কবি-লেখক ও সঙ্গীতশিল্পী শাহাবুদ্দিন নাগরী রিমান্ডে যেসব তথ্য দিচ্ছেন তাতে অসংলগ্নতা রয়েছে। ঘটনার সময় নুরুল ইসলামের বাড়িতে তার অবস্থান ছিল- এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ এবং শাহাবুদ্দিন নাগরীর মোবাইল ফোনের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। পুলিশ শাহাবুদ্দিন নাগরীর পাশাপাশি নুরুল ইসলামের স্ত্রী নূরানী আক্তার সুমি এবং শাহাবুদ্দিনের গাড়িচালক সেলিমকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। রিমান্ডের প্রথম দিনে তারা কেউ হত্যার কথা স্বীকার করেননি।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নুরুল ইসলামের স্ত্রী নূরানী আক্তার সুমির সঙ্গে পরকীয়া ছিল শাহাবুদ্দিনের। এর জেরেই নুরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে। রিমান্ডে নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুমিও তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় শাহাবুদ্দিন নাগরীর গাড়িচালক সেলিমকেও গ্রেফতার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম ও সুমি দম্পতির কোনো সন্তান নেই। নুরুল ইসলাম গাড়িতে খাবার সরবরাহের ব্যবসা করতেন। নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নুরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুমি এবং সুমির বন্ধু শাহাবুদ্দিন নাগরীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তারা এখন পর্যন্ত হত্যার কথা স্বীকার করেননি। তাদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, শাহাবুদ্দিন নাগরীর সঙ্গে সুমির পরকীয়া চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এক বছর আগে সুমিকে একটি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন শাহাবুদ্দিন। এ নিয়ে নুরুল ইসলামের সঙ্গে সুমির বিভিন্ন সময় ঝগড়াও হয়েছে। ব্যবসায়ীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ ডোম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে শাহাবুদ্দিন নাগরীর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে ঘটনার সময় শাহাবুদ্দিন ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন।
এমনকি ঘটনার আগের দিনও তিনি ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নুরুল ইসলামকে হত্যার পর তার স্ত্রী পুলিশকে বলেছিল খাট থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর পর নুরুল ইসলামের মৃতদেহ যেভাবে পড়েছিল তা দেখেই সন্দেহ তৈরি হয়। তখন দেখা যায়, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলা ও মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে। নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুমি আরও দাবি করেছিলেন, তার স্বামী অসুস্থ ছিলেন। অসাবধানতাবশত খাট থেকে পড়ে মারা গেছেন। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, নুরুল ইসলামের বড় ধরনের কোনো রোগ ছিল না। সামান্য জ্বর-ঠাণ্ডা ছিল তার। ডায়াবেটিস থাকলেও তার মাত্রাও খুব বেশি ছিল না। খাট থেকে পড়ে তার মৃত্যুর বিষয়টি এ কারণেই পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ ডোম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের নিজ বাসার বেডরুমের খাটের নিচ থেকে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন নুরুল ইসলামের বোন শাহানা রহমান কাজল বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুমি এবং স্ত্রীর বন্ধু শাহাবুদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করেন।

No comments

Powered by Blogger.