রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হচ্ছে আজ থেকে

‘সিটিং’ আর ‘গেট লক’ নামের বাস-মিনিবাস সার্ভিস আজ রোববার থেকে বন্ধ হচ্ছে। যারা এই সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় চলবে গণপরিবহন। এমনটিই জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির নেতৃবৃন্দ। এ দিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এয়ায়েত উল্লাহ ৪ এপ্রিল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছিলেন, ১৫ এপ্রিল (শনিবার) থেকে রাজধানীতে কোনো সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে বাস-মিনিবাস চলাচল করতে পারবে না। কিন্তু তার এই ঘোষণা কেউই মানেননি। এই সুযোগে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের সুপারভাইজারেরা যাত্রীদের কাছ থেকে ‘সিটিং সার্ভিসের’ দোহাই দিয়ে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করেছেন। এ নিয়ে দিনভর বাকবিতণ্ডা লেগেই ছিল যাত্রী ও বাসের সুপারভাইজারদের মধ্যে। বিকেলে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৬ এপ্রিল রোববার থেকেই সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা কার্যকর হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাধারণ যাত্রীরা জানতেন, শনিবার থেকেই সিটিং সার্ভিস নামের কোনো বাস-মিনিবাস রাজধানীতে চলাচল করছে না। এরপরও রাজধানীজুড়ে যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোতে সিটিং সার্ভিসের নামেই প্রতারণা চলেছে পরিবহন সমিতির নেতৃবৃন্দকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। যাত্রাবাড়ী থেকে মুগদা স্টেডিয়াম পর্যন্ত তুরাগ ও ছালছাবিল পরিবহনে ৫ টাকা করে ভাড়া নেয়া হয়। নিয়মিত এ রুটে যাতায়াত করছেন ুদ্র ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তিনি শনিবার সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে মুগদা স্টেডিয়ামে যাচ্ছিলেন রাইদা নামের পরিবহনে। কিছু দূর যাওয়ার পর সুপারভাইজার তার কাছে ভাড়া চান। পাঁচ টাকা ভাড়া দিলে সুপারভাইজার উত্তেজিত হয়ে তার কাছে ১৫ টাকা দাবি করে। এ সময় যাত্রী সুপারভাইকে বলেন, ‘ভাই আমি তো যাত্রাবাড়ী থেকে উঠেছি। স্টেডিয়ামের সামনে নামব। ১৫ টাকা দেবো কী কারণে? তুরাগ, ছালছাবিল তো পাঁচ টাকাই নেয় ভাড়া।
তখন সুপারভাইজার তাকে বলেন, ‘তাহলে আপনি ওই গাড়িতেই যান। শুধু রাইদা পরিবহন নয়, এই চিত্র ছিল গতকাল বেশির ভাগ বাস-মিনিবাসেই। মিরপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পথে চলাচলকারী দিশারী পরিবহনে লোকাল যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। আবার জিরানী-মতিঝিল, সাভার-যাত্রাবাড়ী পথে চলা লাব্বাইক পরিবহন সিটিং সার্ভিস হিসেবেই চলেছে বলে ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। অপর দিকে যানবাহন থেকে অবৈধ হুক অ্যাঙ্গেল খুলে ফেলা, সিটিং সার্ভিস বন্ধসহ পরিবহন খাতের সমস্যা সমাধানে করণীয় ঠিক করতে পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপ (বিআরটিএ) ও মালিক-শ্রমিক নেতারা বিকেল ৪টায় এলেনবাড়ীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক শুরু করেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল। ১৫ এপ্রিলের পর যাত্রীদের কাছ থেকে কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির নেতা খন্দকার এয়ায়েত উল্লাহ। একই সাথে তিনি বলেছিলেন, ভাড়ার তালিকা বাসের ভেতর দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে। ছাদের ওপরে ক্যারিয়ার, সাইড অ্যাঙেল ও ভেতরের অতিরিক্ত আসন খুলে ফেলতে হবে। প্রতিটি বাস ও মিনিবাসে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা আসন সংরণ করতে হবে। এক মাসের মধ্যে রঙচটা, রঙবিহীন, জরাজীর্ণ বাস মেরামত করে রাস্তায় নামাতে হবে। মোটরযান আইন অনুসারে, সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। চালকের আসনসহ মিনিবাসে ৩১টি আসন থাকবে। এর বেশি আসন হলে তা বাস। মালিক-শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সিটিং সার্ভিস বন্ধে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তৎপরতা চালাবে। অপর দিকে সিটিং সার্ভিস বন্ধে মালিক সমিতি পাঁচটি পরিদর্শন দল (ভিজিল্যান্স টিম) গঠন করেছে। আজ রোববার থেকে আসাদগেট, আগারগাঁও, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে, রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে ও যাত্রাবাড়ীর চাংপাই রোডে অবস্থান নেবে।

No comments

Powered by Blogger.