বিশ্বে কণ্ঠস্বর সমস্যায় ৭৫ লাখ মানুষ

আজ বিশ্ব কণ্ঠ দিবস। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘শেয়ার ইউর ভয়েস’। বিশ্বে ২০০২ থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেফনেস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের তথ্য মতে, সারা বিশ্বে সব বয়সের ৭৫ লাখ মানুষ কোনো না কোনো কণ্ঠস্বরজনিত সমস্যায় ভুগছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশির ভাগ মানুষই কণ্ঠস্বর সম্পর্কে সচেতন নন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ারও অনেক পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তারা। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপে দেখা যায়, যেসব শিক্ষক কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে সারাক্ষণ কথা বলছেন, তাদের ১১ শতাংশ কণ্ঠের সমস্যায় ভুগছেন। অন্য পেশার ক্ষেত্রে এটা ৬ দশমিক ২ ভাগ। আরেকটি জরিপে জানা যায়, ২০ শতাংশ শিক্ষক তাদের চাকরি হারিয়েছেন কণ্ঠের সমস্যার জন্য, যেখানে অন্য পেশাজীবীদের জন্য এই হার ৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কণ্ঠনালির সমস্যার লক্ষণ হল গলা ব্যথা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, কাশি, কিছু গিলতে অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। যদি ঘন ঘন কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয় বা দুই সপ্তাহে ভালো না হয়, তবে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে। কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের প্রধান কারণ কণ্ঠনালির ভাইরাসজনিত তীব্র প্রদাহ। শ্বাসনালির ভাইরাস প্রদাহে কণ্ঠনালি ফুলে যায়, যাতে কণ্ঠনালির কম্পনের সমস্যা সৃষ্টি করে, ফলে স্বর পরিবর্তন হয়।
আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণের কারণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ বা ল্যারিনজাইটিস হতে পারে। তীব্র প্রদাহ অবস্থায় যদি কেউ জোরে কথা বলে তা কণ্ঠনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কণ্ঠনালির ভাইরাসজনিত তীব্র প্রদাহ ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হলে, দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে। পাকস্থলীর এসিড রিফ্ল্যাক্সের জন্যও দীর্ঘমেয়াদি কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত গরম চা বা পানীয় পান করলে, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে। এছাড়া অতি উচ্চস্বরে, অতিরিক্ত কথা বলা, দীর্ঘমেয়াদি বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালির প্রদাহ দেখা দিতে পারে। গলা ও শব্দযন্ত্রের মাংসপেশির সংকোচন এবং কথা বলার সময় ঠিকভাবে শ্বাস না নিলে শ্বাসযন্ত্রের অবসাদ হয়। কথা বলতে কষ্ট হয়। ফলে কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং কণ্ঠনালিতে পলিপ বা নডিউল, এমনকি রক্তক্ষরণও হতে পারে। প্রচণ্ড উচ্চস্বরে চিৎকার করলে বা গলায় অধিক শক্তি দিয়ে কথা বললে বা গলায় আঘাত পেলে হঠাৎ কথা বলা বন্ধ হতে পারে। কণ্ঠনালির সূক্ষ্ম রক্তনালি ছিঁড়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এছাড়া কণ্ঠনালির স্নায়ুর দুর্বলতা বা কোনো সমস্যার জন্য কণ্ঠনালির পরিবর্তন হতে পারে। ভাইরাসজনিত প্রদাহের জন্য স্নায়ুর দুর্বলতা হয়। সাধারণত একদিকের স্নায়ুর প্যারালাইসিস হয়, দু’দিকের স্নায়ু একই সঙ্গে আক্রান্ত হওয়া খুবই বিরল। একদিকের স্নায়ু প্যারালাইসিসের কারণ হচ্ছে ভাইরাল ইনফেকশন, টিউমার, ক্যান্সার ও থাইরয়েড অপারেশন। কণ্ঠনালির প্যারালাইসিসের জন্য ফ্যাসফেসে আওয়াজ হয় এবং এটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। কয়েক মাসের মধ্যে একদিকের প্যারালাইসিস ভালো হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের মতে, আমাদের দেশে গলার ক্যান্সার বা কণ্ঠনালির ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি। স্বরের পরিবর্তন ১৫ দিনের মধ্যে ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। কণ্ঠনালির ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। কণ্ঠ সুস্থ ও সুন্দর রাখার বিষয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু যুগান্তরকে বলেন, পানি কণ্ঠনালিকে আর্দ্র রাখে। আর্দ্র কণ্ঠনালি শুষ্ক কণ্ঠনালি থেকে বেশি ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিন লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দেয়া উচিত। এতে কণ্ঠনালির অবসাদ দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ধূমপান, অ্যালকোহল পান, অতিরিক্ত গরম পানীয় পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ব কণ্ঠ দিবস উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ফোনসার্জনস অব বাংলাদেশ র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আজ সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে র‌্যালি শুরু হবে। এছাড়া সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ব্লকের মাল্টিপারপাস হলরুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.