এবারে আক্রমণের লক্ষ্য সিনেটর রুবিও

মাত্র তিন দিন পর, ৯ ফেব্রুয়ারি, নিউ হ্যাম্পশায়ারে অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন নির্বাচন-প্রক্রিয়ার পরবর্তী প্রাক-নির্বাচনী ভোট। এর আগে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হলো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের সর্বশেষ বিতর্ক।
এই বিতর্ক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর জেব বুশ ও নিউ জার্সির চলতি গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টির জন্য। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত আইওয়া ককাসে তাঁরা দুজনেই বেধড়ক মার খেয়ে নিজেদের তাবৎ ডিম জমা রেখেছেন নিউ হ্যাম্পশায়ারের ঝুড়িতে। জনমত এগিয়ে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সিনেটর টেড ক্রুজ তাঁদের অতি দক্ষিণপন্থী ও আক্রমণাত্মক অবস্থানের কারণে গোড়া থেকে রিপাবলিকান ‘ইস্টাবলিশমেন্ট’-এর সমর্থন হারিয়েছেন। এ দুজনের বদলে ওয়াশিংটনের রিপাবলিকান নেতৃত্ব খুব ভরসা করেছিল জেব বুশের ওপর, কিন্তু বিস্তর অর্থ ব্যয়ের পরেও তিনি কিছুতেই পেরে উঠছেন না। সে কারণে ওয়াশিংটনের রিপাবলিকান নেতৃত্ব এখন নজর দিয়েছে তুলনামূলকভাবে মধ্যপন্থী মার্কো রুবিওর ওপর।
রুবিওকে পর্যুদস্ত না করা গেলে সরে দাঁড়াতে হতে পারে বুশ ও ক্রিস্টিকে। সেই হিসেবে বিতর্কের শুরু থেকেই আক্রান্ত হলেন রুবিও, আর সে আক্রমণে নেতৃত্ব দিলেন ক্রিস ক্রিস্টি। বয়সে তরুণ ও দেখতে বালকসুলভ রুবিওকে ক্রিস্টি এর আগে ‘বুদবুদে থাকা বালক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। গতকালের বিতর্কে ঠিক সে কথা না বললেও ক্রিসের পরিহাস ছিল স্পষ্ট। বলেন, এই নবীন সিনেটর এতটা অনভিজ্ঞ যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কোনো উল্লেখযোগ্য অর্জনই নেই। রুবিওর দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘নিজের সিদ্ধান্তের জন্য দায়বদ্ধ হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত তুমি আজ পর্যন্ত একবারও নাওনি। প্রতিদিন সকালে উঠে তোমার মাথায় ঘোরে আজ তুমি কী ভাষণ দেবে, যা তোমার হয়ে কেউ লিখে রাখবে।’
কথাটা যে একদম মিথ্যে নয়, রুবিও নিজেই সে প্রমাণ দিলেন। ওবামার মতো রুবিও একজন অনভিজ্ঞ রাজনীতিক, তাঁর হাতে রাষ্ট্রের ভার দেওয়া যায় না, ক্রিস্টির এই ভর্ৎসনার জবাবে রুবিও সরোষে বললেন, ‘ওবামাকে যারা অনভিজ্ঞ ভাবে, তারা ভুল করছে। ওবামা ঠিক জানে সে কী চায়, সে চায় আমেরিকাকে বদলে দিতে।’ কোনো যতি ছাড়া পালটা শেল হানলেন ক্রিস্টি। ‘ওই তো, তুমি আবার শেখানো কথা বলছ।’ যেন হাইস্কুলের ছাত্রকে পড়া শেখাচ্ছেন, এইভাবে কিঞ্চিৎ উপহাসের সুরে ক্রিস্টি বললেন, ‘ব্যাপারটা কি জানো মার্কো, তুমি যখন প্রেসিডেন্ট হবে, অন্যের বলে দেওয়া ৩০ সেকেন্ডের বুলি কপচে তুমি পার পাবে না।’
ব্যাপারটা রীতিমতো ফার্সে পরিণত হয় যখন এক মুহূর্ত পরেই রুবিও ‘ওবামা ঠিক জানে সে কী করছে,’ সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পুনরাবৃত্তি করেন। দুই হাত তুলে অতি উৎফুল্ল ক্রিস্টি বলে ওঠেন, ‘ওই তো, ওই তো, সেই শেখানো ২৫ সেকেন্ডের বুলি।’
আইওয়া ককাসে সর্বাধিক ভোট পেয়ে এক নম্বরে থাকা টেড ক্রুজ ও তাঁর নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিতর্কে হাড্ডাহাড্ডি লড়বেন, এমন আশা করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল তাঁরা দুজনেই এক ধরনের ‘অলিখিত সন্ধি’ করে একে ওপরের ওপর আক্রমণ থেকে বিরত থাকেন। এর আগে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ভোট চুরি করে আইওয়াতে জিতেছেন ক্রুজ। ভোট গ্রহণের ঠিক আগে ক্রুজের দল থেকে এক ই-মেইল বার্তায় জানানো হয় শল্যচিকিৎসক বেন কারসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, ফলে তাঁর সমর্থকেরা যেন ভোট নষ্ট না করে ক্রুজকে তাঁদের সমর্থন জানান। বেন কারসন জানিয়েছেন, এই দাবি মিথ্যা এবং ক্রুজ কারচুপির মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। গতকালের বিতর্কের শুরুতে ক্রুজ স্বীকার করেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর কমিটির পক্ষ থেকে বার্তাটি বিলি করা হয়েছিল, তিনি সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
ট্রাম্প-ক্রুজ লড়াই না ঘটলেও গভর্নর জেব বুশ ট্রাম্পকে একহাত নিয়ে ছাড়েন। আটলান্টিক সিটিতে একবার এক বিধবার পুরোনো বাড়ি গণস্বার্থে ব্যবহারের অজুহাতে সরকারি প্রভাব খাটিয়ে ট্রাম্প তা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। বুশ অভিযোগ তোলেন, ট্রাম্প গণস্বার্থের বদলে নিজের ক্যাসিনোর জন্য সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। ট্রাম্প যুক্তি দেখান, ‘এমিনেন্ট ডোমেইন’ নামে পরিচিত এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আমেরিকার অনেক রাস্তাঘাট ও সেতু হয়েছে। বুশ তাঁকে বাধা দিয়ে বলেন, সেখানে গণস্বার্থের জন্য কিছুই করা হয়নি। ট্রাম্প কিছু একটা বলতে চাওয়ার আগেই বুশ বলেন, ট্রাম্প আজ নিজেকে ‘টাফ গাই’ বা শক্ত মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে।’ স্পষ্টতই বিরক্ত ট্রাম্প বুশের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলে ওঠেন, ‘চুপ, আমাকে বলতে দিন।’ তাঁর সে কথা শুনে হল ভর্তি লোক ট্রাম্পের প্রতি ‘দুয়ো দুয়ো’ ধ্বনি দিয়ে ওঠেন।
গতকালের এই নরম-গরম বিতর্কের ফলে মঙ্গলবারের প্রাইমারির ফলাফলে যে বড় ধরনের হেরফের হবে, তা মনে হয় না। রুবিও হয়তো তার্কিক হিসেবে নিজের সুনাম কিঞ্চিৎ খুইয়েছেন, কিন্তু প্রতিযোগিতায় তাঁর তৃতীয় অবস্থানের পরিবর্তন না হওয়ার কথা। ৩৫ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন ট্রাম্প, তাঁর চেয়ে ১০ শতাংশ কম সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ক্রুজ। তাঁদের অবস্থাও অপরিবর্তিত। বুশ আইওতে পেয়েছিলেন মাত্র ২ শতাংশ ভোট। এই মুহূর্তে নিউ হ্যাম্পশায়ারে তাঁর সমর্থন ১০ শতাংশ। তিনি যদি রুবিওর চেয়ে খুব বেশি খারাপ করেন, তাহলে তাঁকে হয়তো সরে দাঁড়াতে হবে। বাকি দুই গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি ও জন কেইশিচ, যাঁদের নির্বাচনী তহবিল প্রায় শূন্যের কোঠায়, তাঁরা মঙ্গলবারের পর টিকে থাকবেন, খুব আশাবাদী কেউও সে কথা আর বলে না। একই কথা বেন কারসনের ব্যাপারেও

No comments

Powered by Blogger.