বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আবারো সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন প্রকল্প

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আবারো রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আকার হতে পারে পাঁচ কোটি মার্কিন ডলার। এর পুরোটাই বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে বাংলাদেশ প্রদান করবে। এর আগে ২০০৪ সালেও একই ধরনের একটি প্রকল্পে সরকারি ব্যাংকগুলোকে আধুনিকায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে কাক্সিত সফলতা আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন আবারো ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়নের জন্য প্রায় একই ধরনের এই প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে একটি মিশন দেশে আসছে। মিশনটি ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে আলোচনা করবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত দেশীয় পরিচালক মার্টিন রামা ইআরডির অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আযমের কাছে এই প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে একটি চিঠি পাঠান। এতে উল্লেখ করা হয়, এই প্রকল্পের বিষয় নিয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বরের ৮-১৯ পর্যন্ত একটি আলোচনা হয়েছিল। আগামী ১০-১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আলোচনায় এ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রকল্পের কার্যক্রম, তার ফলাফল ও প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই প্রকল্পে সরকারের অর্থায়নের পরিমাণ কী হবে এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার বিষয়ে নিয়েও আলোচনা করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের টিম বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে আলোচনা করবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ইআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ব্যাংক নিরীক্ষক, আইটি সলিউশন প্রোভাডার, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন, রিচার্স পলিসি ইনস্টিটিউট প্রভৃতি।
বিশ্বব্যাংকের টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সংস্থাটির লিড ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর সেস্পালিস্ট মারিয়াস ভিসমানটাস।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথম বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পের বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে যে, এই প্রকল্পে দু’টি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এর একটি হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও অন্যটি হচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। কিন্তু আমরা এই শর্ত মানতে রাজি নই। আগামী আলোচনায় এই বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে।
এর আগে বিশ্বব্যাংকের ঋণে হাতে নেয়া হয় ৩০০০ কোটি টাকার ‘রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক আধুনিকীকরণ ও আর্থিক খাত সংস্কার’ শীর্ষক প্রকল্প। এটি শুরু হয় ২০০৪ সালের ১ জুলাই। ২০০৯ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা করা সম্ভব হয়নি।
এখন আবার নতুন করে সরকারি ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন প্রকল্পের বিষয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইআরডির এক সূত্র জানায়, এই প্রকল্পে মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরামর্শ দিয়ে প্রচুর অর্থ বিদেশী নিয়ে যান। এর আগে নেয়া ব্যাংক আধুনিকায়ন প্রকল্পেও তা লক্ষ করা গেছে। এবারই তার কোনো ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়, বাস্তবে তা কতটুকু কাজে লাগে তা নিয়ে সমীক্ষা হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে

No comments

Powered by Blogger.