কেউ খোঁজ নেয়নি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লা (১৯) মারা যাওয়ার পর থেকে গত চার দিন তাঁর বাড়িতে চুলা জ্বলেনি। মা হালিমা বেগম পুত্রশোকে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। প্রতিবেশীরা খাবার দিয়ে যাচ্ছেন, তা খেয়েই দিন কাটছে দরিদ্র, শোকাতুর পরিবারটির। এই প্রতিবেশীরা ছাড়া কেউ খোঁজ নেয়নি তাঁদের।
নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে হাফিজুর গত মঙ্গলবার মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, শীতের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বারান্দায় থাকা এবং রাতের বেলা ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যাওয়ার কারণে হাফিজুর ঠান্ডায় আক্রান্ত হন।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের হাফিজুর এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে প্রথম বর্ষ ভর্তি হন। মাত্র এক মাস আগে ছাত্রলীগের নেতাদের মাধ্যমে এসএম হলে উঠেছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় ২৭ জানুয়ারি তিনি বাড়ি চলে যান। অবস্থা খারাপ হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে আসার পথে গত মঙ্গলবার ফেরিতে মারা যান তিনি।
শনিবার প্রথম আলোর শেষের পাতায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের করুণ মৃত্যু’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতিবিদ পরিবারটির খবর নেননি। বাড়িটি ঘিরে শুধু কয়েকজন সংবাদকর্মীর আনাগোনা দেখা গেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ নেই হাফিজুরের বাবা ইসহাক মোল্লার। তাঁর স্বগতোক্তি, ‘কেউ খোঁজ নেয়নি। গরিব মানুষের দিকে কে চায়, গরিব মানুষ তো গরিব মানুষ।’ ইসহাক মোল্লা বলেন, ‘হলের বড় ভাইয়েরা হাফিজুরের ওপর অত্যাচার করত। ঠান্ডার মধ্যে দাঁড় করায়া রাখত। এভাবেই অসুস্থ হয়ে মারা যায় আমার বাজান।’ তিনি বলেন, ‘হাফিজুর আমাকে বলেছে, বাবা আমিও এক-দুই বছর পর বড় ভাই হব। তখন নতুন ছেলেদের নিয়া এই অত্যাচার বন্ধ কইরা দিব।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফকির আবদুস সাত্তার বলেন, ‘এই মেধাবী ছেলের মৃত্যুর পেছনে কোনো অমানবিক ঘটনা ঘটে থাকলে তারা যে দল বা গোষ্ঠীরই হোক না কেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে আর কেউ এ জাতীয় নির্মম ঘটনা ঘটাতে না পারে।’
সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী জাফরও একই কথা বললেন, ‘হাফিজুর মেধাবী ছেলে ছিল। যারা ওর এ মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।’
হাফিজুরের বাবা বলেন, ‘মামলা করব কার বিরুদ্ধে। আমার বাজান চইলা গেছে। আমার হাফিজুর তো আর ফিইরা আসবে না। তবে এক হাফিজুর চইলা গেছে, কিন্তু হাজার হাফিজুর বাঁইচা আছে। হাফিজুরের মায়ের বুক খালি হইছে। আর কোনো হাফিজুরের মায়ের বুক যেন খালি না হয়।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমি সংবাদপত্রে বিষয়টি দেখেছি। কিন্তু অভিযোগ আসলেই এতটা গুরুতর কি না, সেটা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’ উপাচার্য রোববার এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন বলে জানান।

No comments

Powered by Blogger.