ভারতে হামলার পেছনে আইএসআই

সন্ত্রাসবাদী ডেভিড কোলম্যান হেডলির স্বীকারোক্তি, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে অর্থ, অস্ত্র ও নৈতিকভাবে সাহায্য দিয়ে আসছে। আইএসআইয়ের সহায়তায়ই মুম্বাই হামলা হয়। পাকিস্তানের কোন কোন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল, জেরার মুখে সে কথাও হেডলি জানিয়েছেন।
পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া হেডলি এখন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর কারাগারে বন্দী। মুম্বাই হামলায় এই অভিযুক্ত ব্যক্তির ভিডিও জেরা গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। মুম্বাইয়ের টাডা আদালতে চলা এই জেরার জবাবে গতকাল মঙ্গলবার হেডলি বলেন, লস্কর-ই-তাইয়েবা, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে আইএসআই নিয়মিত সাহায্য দিয়ে এসেছে। এই তিন সংগঠনই ইউনাইটেড জিহাদি কাউন্সিলের অধীনে কাজ করে আসছে।
জেরার মুখে হেডলি গতকাল জানান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছাড়াও তিনি আইএসআই ও লস্কর-ই-তাইয়েবার হয়ে কাজ করছিলেন। তিনি জানান, আইএসআই কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার রিয়াজ নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন লস্কর কমান্ডার জাকিউর রহমান লাকভির সঙ্গে। তাঁকেই তিনি সব রকম সাহায্য করতেন। রিয়াজ ছিলেন লাকভির ‘প্রশিক্ষক’। এই লাকভিই ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই হামলার মূল হোতা বলে অভিযোগ করে আসছে ভারত।
হেডলির বাবা পাকিস্তানি, মা মার্কিন নাগরিক। জন্ম ওয়াশিংটনে। বাবা ছিলেন পাকিস্তানি কূটনীতিক।
হেডলির আসল নাম সৈয়দ দাউদ গিলানি। বয়স ৫৫। হেডলিকে মার্কিন ফেডারেল পুলিশ ২০০৯ সালে ১৮ অক্টোবর শিকাগোর বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ, তিনি ডেনমার্কের এক সংবাদপত্র অফিসে হামলার চক্রান্তকারী। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বাই হামলার চক্রান্তের অভিযোগ আনা হয়। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি।
সন্দেহ এড়াতে ভারতে এসে হেডলি নাম পাল্টে হন ডেভিড কোলম্যান হেডলি। ভুয়া তথ্য দিয়ে আমেরিকা থেকে ভিসা নিয়ে মোট নয়বার তিনি ভারতে আসেন। প্রথম আসা ২০০৬ সালে; লস্কর শীর্ষ নেতা সাজিদ মীরের নির্দেশে। তখনই তিনি মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ভিডিওগ্রাফ করেন। জেরায় তিনি বলেছেন, তাঁর দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই হাফিজ সাঈদ মুম্বাই হামলার নির্দেশ দেন—যদিও সেই বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুবার হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কেন ব্যর্থ, সেই কথাও জেরায় হেডলি জানান। বলেন, ৮ সেপ্টেম্বরের হামলার জন্য করাচি থেকে যে নৌকায় তাঁরা আসছিলেন, তা সাগরের নিচে পাথরে ধাক্কা খায়। সেই ধাক্কায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সাগরে পড়ে যায়। নৌকায় মোট ১০ জন ছিলেন। পরের মাসেও তাঁরা বিফল হন। চূড়ান্ত হামলা অবশ্য ওই ১০ জনই করেছিলেন বলে হেডলির দাবি।

No comments

Powered by Blogger.