গাজীপুর খাদ্য গুদামে চালের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন by ইকবাল আহমদ সরকার

এবার গাজীপুর সরকারি গোডাউন থেকে খাবারের অনুপযোগী অত্যন্ত নিম্নমানের চাল দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গোডাউন থেকে পচা, পোকায় খাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত, পাথরের গুঁড়ো মেশানো ও ভেজা চাল সররাহের অভিযোগ রয়েছে। এসব চাল খেতে না পেরে তা বেঁচে দেয়া হচ্ছে মুরগির খাবারের কারখানায়। অবশ্য নিম্নমানের চালের পাশাপাশি ভালমানের চালও রয়েছে ওই গোডাউনে। এ ছাড়া ডিও লেটার অনুযায়ী চাল নিতে গিয়ে গ্রহীতরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দাবি, গাজীপুরের গোডাউনের সব চাল-গমের মানই খুব ভাল। সরজমিন গাজীপুর নগর ভবনের পাশের জয়দেবপুর সরকারি গোডাউনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই গোডাউন থেকে গত রোববার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের বন্দি ও কারারক্ষীদের জন্য সরবরাহের জন্য চাল তোলা হয় ট্রাকে। ওই চাল নিম্নমানের হওয়ায় প্রথমে তা নিতে আপত্তি জানায় কারারক্ষী। পরে ওই কারাগারের চাল সরবরাহকারী ঠিকাদারের প্রতিনিধিও তা নিতে আপত্তি জানায়। এ নিয়ে গোডাউনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এএসআই জহিরুল ইসলামের সঙ্গে ঠিকাদারের প্রতিনিধির বাকবিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে হইচই বেধে গেলে ট্রাকভর্তি ওই চালের বদলে নতুন করে ভালমানের চাল দেয়া হয় কারাগারের জন্য। এ বিষয়ে গোডাউনের সামনে থাকা কাশিমপুর কারাগারের কারারক্ষী আজাহার জানান, কারাগারের জন্য এক ট্রাক খারাপ চাল তোলা হয়। রোজার দিন পোকায় খাওয়া, খারাপ মানের এসব চাল কারাগারে থাকা বন্দি ও নিজেরা খেতে পারবো না বিধায়, তা না নিয়ে ফেরত দেয়া হয়েছে। পরে ওই চালের বদলে কারাগারের জন্য ভাল চাল দেয়া হয়েছে। ওই সময় গোডাউনের ভেতরে লোকজনের সঙ্গে পাওয়া যায় জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি ও কৃষিফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন নেতা আবদুল মজিদকে। তার এন্তার অভিযোগ। সাংবাদিকদের জানালেন, এক বছর আগে মন্ত্রী তাকে ঈদের মাঠের জন্য চালের ডিও লেটার দিয়েছেন। এক বছরে তাকে জেলা খাদ্য অফিস, ডিআর অফিসসহ নানা অফিসে বিড়ম্বনা ভোগ করতে হয়েছে এ চাল নিতে গিয়ে। আবার বাড়তি টাকাও খরচ করতে হয়েছে এর জন্য। এখন গোডাউনে এসে তিনি জানলেন চাল নেয়া যাবে না। বিক্রি করে দিতে হবে গোডাউনের সিন্ডিকেটের লোকদের কাছে। তাও আবার বেঁচতে হবে মাত্র ১৪ হাজার টাকা টন দরে। যেখানে বাজারে চালের মূল্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা টন। প্রায় একই সময়ে গোডাউন থেকে চাল নিতে আসা সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিশ গোডাউনের লোকজনকে ধমকে বলেন, আমার তিন টন চাল, ভাল চাল দেবেন। এক বস্তা চালও খারাপ দিলে কিন্তু অবস্থা খারাপ করে দেবো। আমি ৪২ বছর ধরে জনগণের কাজ করছি। এ সময় গোডাউনে থাকা একটি খোলা বস্তার খুবই নিম্নমানের চাল দেখিয়ে উপস্থিত লোকজন জানান, এ চাল খাওয়ার উপযোগী নয়। চালের মান ও চাল গ্রহণকারীদের ক্ষোভের প্রসঙ্গে জানতে গিয়ে গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে আরও ভয়াবহ চিত্র জানা গেছে। রোববার বিকাল ৩টায় গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লীনা আহমেদ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি অফিসে নেই। তিনি যেই রুমের টেবিল-চেয়ারে বসে বর্তমানে অফিস করেন, সেই টেবিল- চেয়ারের ওপর ঝুলতে দেখা গেছে লুঙ্গি-গামছা ইত্যাদি কাপড়-চোপড়। টেবিলের ওপর নানা ধরনের জিনিসপত্র। কর্মচারীরা জানালেন এটা আবাসিক অফিস। পাশের রুমের কর্মচারীদের সামনে দেখা মেলে গোডাউন থেকে চাল নিতে আসা বিভিন্ন এলাকার কয়েকজনকে। তাদেরই একজন হলেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। চাল- গম না নিয়ে বেঁচে দেয়ার প্রসঙ্গে ওই ইউপি সদস্য জানালেন, গোডাউনের চালের ভাত খাওয়ার উপযোগী নয়।
কেউ খেতে পারবে না। কিছুদিন আগে টিআর-কাবিখা প্রকল্পের যে চাল দেয়া হয়েছে সেই চাল প্রজেক্টের শ্রমিকরা নেয়নি, তাই মুরগির খাবারের কারখানায় বেঁচে দিয়ে শ্রমিকদের টাকা দেয়া হয়েছে। ওই চাল পচা, পোকায় খাওয়া, গন্ধ, পাথরের গুঁড়ো, ভেজা-জমাটবাঁধা ছিল। এজন্য গোডাউন থেকে চাল না তুলে বেঁচে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। চালের মান নিয়ে নানা শ্রেণী-পেশার লোকজনের ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন বলেন, চালের মান যেভাবে যাচাই করা হয়, এ চালও সেভাবে যাচাই করা হয়েছে। এখানে ভাল চাল আসে। গোডাউনে আনার পর ভালভাবে তা যত্ন করা হয়, পোকামাকড় মুক্ত রাখা হয়। গাজীপুরের গোডাউনের চালের মান খুব ভাল। গমের মানও খুবই ভাল। তবে গোডাউনের কর্মকর্তা এমনকি জেলা খাদ্য কর্তকর্তাও গোডাউনের গম সাংবাদিকদের দেখাতে রাজি হননি।

No comments

Powered by Blogger.