ডাল ও পিয়াজের দাম চড়া

২০ দিনে দেশী মসুর ডালের কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা, চড়া পিয়াজের বাজারও। এছাড়া মাছ, মাংস, ভোজ্যতেলসহ সব ধরনের কাঁচা পণ্যের দাম বাড়তি। তবে সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মাত্র ৪ পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছে। টিসিবির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি দেশী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৮০ টাকা। যা কয়েক দিন আগেও ছিল ৩০০ থেকে ৩২৫ টাকা। একইভাবে প্রতিলিটার পাম অয়েল (সুপার) বিক্রি হচ্ছে  ৬২ থেকে ৬৫ টাকা। যা ছিল ৬১ থেকে ৬৩ টাকা, ফার্মের মুরগির ডিম ২৮ থেকে ৩২ টাকা। যা ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। এদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে পিয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গত শুক্রবার টনপ্রতি ১৭৫ ডলার বাড়িয়ে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৪২৫ ডলার নির্ধারণ করেছে ভারত সরকার। তারই প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে শুরু করেছে।  সে অজুহাতে ইতিমধ্যে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন পিয়াজ ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর খুচরা বাজারে পিয়াজের দাম কেজিপ্রতি গড়ে ৪ টাকা বেড়ে গেছে। বর্তমানে দেশী পিয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত। তবে আমদানি মূল্য বাড়ায় পিয়াজ আনছেন না ব্যবসায়ীরা। এরপরও আমদানি করা পিয়াজের দাম পাইকারিতে কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়েছে। ভারতীয় পিয়াজের দর বৃদ্ধির কারণে দেশী পিয়াজের দামও বেড়েছে। শ্যামবাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পিয়াজ ২৮ থেকে ২৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েক দিন আগেও ছিল ২৬ থেকে ২৭ টাকা। গত শুক্রবারও রাজধানীর বাজারে পিয়াজের দর কেজিতে ২ টাকা কমেছিল। কিন্তু রোববার ভারতের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধির খবরে কেজিপ্রতি আমদানি করা পিয়াজ ৪ টাকা ও দেশী পিয়াজ ২ টাকা বেড়ে যায়। খুচরায় ভারতীয় পিয়াজ ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা দরে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। দেশী পিয়াজ ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকস্মিকভাবে ভারতের আমদানি মূল্যবৃদ্ধির খবরে দেশের মজুতদাররা কৌশলে পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা। যোগাযোগ করা হলে দেশের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি মো. গোলাম মাওলা বলেন, ভারত পিয়াজের দাম বাড়িয়েছে। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারে। ইতিমধ্যে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে গেছে। তবে আর যেন বাড়তে না পারে সেক্ষেত্রে সরকারকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া, দফায় দফায় বাড়ছে মসুর ডালের দাম। গত ২০ দিনে কয়েক দফায় দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতিকেজি দেশী মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। যা কিছু দিন আগেও ছিল মাত্র ৯৮ থেকে ১০০ টাকা। বিক্রেতা বোরহান উদ্দিন বলেন, মাত্র ২০ দিনে দেশী মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশী মসুর ডালের অবিকল ডাল আসে নেপাল থেকে। তা অনেকে দেশী বলে চালিয়ে দিতো। কিন্তু নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হওয়ায় এবার সেখান থেকে কোন ডাল আসছে না। সে কারণে দেশী ডালের দাম বাড়ছে। এর বাইরে আদার দামেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে দাম বেড়ে মানভেদে প্রতিকেজি আদা সর্বনিম্ন ১০০ থেকে সর্ব্বোচ্চ ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরুতে সর্বোচ্চ দাম ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় ঠেকেছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ধনে পাতা ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, প্রতিকেজি বেগুন ৮০ টাকা, আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী ডাল (সাধারণ) ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা, বিদেশী (সাধারণ) ৯৫ থেকে ১০০ টাকা, মুগের ডাল (সরু) ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, মোটা ৯৫ থেকে ১০০ টাকা, ছোলা (বিদেশী আস্ত) ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, খেসারি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, মাশকলাই ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি দেশীয় শুকনামরিচ  ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, ভারতীয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, হলুদ  ১৬০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চায়না ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কেজিপ্রতি মিষ্টিকুমড়া ২০ থেকে ২৪ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, ঝিংগা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা, বরবটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, কচুরলতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, চিচিংগা ২৫ থেকে ৩২ টাকা, পটল ২০ থেকে ২৮ টাকা, ঢেঁড়স ২০ থেকে ৩০ টাকা, টমেটো ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, করল্লা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, কেজিপ্রতি গরুর মাংস ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা, খাসির মাংস ৫০০ থেকে ৫৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে খেজুরের। কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। প্রতিকেজি খেজুর ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের দাম খুবই চড়া। প্রতিকেজি ইলিশ ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, মান ও ওজন ভেদে প্রতিকেজি রুই মাছ ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কাওরান বাজার কিচেন মার্কেট সেক্রেটারি লোকমান হোসেন বলেন, বেশির ভাগ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে। অতীতের যে কোন রমজানের তুলনায় দাম এবার সহনীয়। তবুও কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়তি। এর জন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, তারা বেশি মুনাফার আশায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.