সরকারি কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী না হলে বরখাস্ত -সংসদীয় কমিটির সুপারিশ by কাজী সোহাগ

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন শর্ত। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নামে শর্তটি পূরণ না হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। তার আগে চেতনায় ঘাটতি আছে কি নেই বা চেতনায় বিশ্বাসী নন তা নিয়ে তদন্ত করবে সংশ্লিষ্টরা। সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৫ এর খসড়ায় এ সুপারিশ যোগ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সুপারিশ শেষে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। ২৪শে জুন সংসদীয় কমিটির নবম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী-চাকরিতে প্রবেশ ও অবস্থানের জন্য রাখতে হবে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ বিষয়ে ‘অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’। এতে আইনটির জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশে কিছু সংশোধনী এনেছে সংসদীয় কমিটি। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি বিষয় যুক্ত ও বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। স্থায়ী কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, “যদি কোন সরকারি কর্মচারীর আচার, আচরণ ও কার্যাবলীতে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশের আদর্শিক ভিত্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নহেন অথবা তাহার মধ্যে এই ভিত্তি ও চেতনার ঘাটতি রহিয়াছে অথবা তিনি এই ভিত্তি ও চেতনার বিপক্ষে কাজ করিতেছেন, তাহা হইলে তদন্ত সাপেক্ষে তিনি চাকরি হইতে বরখাস্ত হইবেন এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৫ অনুচ্ছেদ ও ইহার ১, ২, ২ (ই) ও ৩ উপ-অনুচ্ছেদের আলোকে ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষ অথবা ক্ষেত্রবিশেষে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না কমিটির সদস্য মুন্সীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। গতকাল মানবজমিনকে তিনি বলেন, ওই দিনের বৈঠকে এ নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয়নি। সভাপতি সাহেব সুপারিশ আকারে তা পাঠিয়ে দিয়েছেন। কমিটির অপর সদস্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি খোরশেদ আরা হক দাবি করেন, ওই শর্তটি আসলে তার মতামতের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এ নিয়ে কমিটির সদস্যরা তকে অকুণ্ঠ চিত্তে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, সত্যিকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়ে বসে আছেন। এটা অন্যায়। এ কারণে আমি বলেছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না এমন কাউকে সরকারি চাকরিতে রাখা যাবে না। চেতনা বা বিশ্বাস কিভাবে তদন্তের আওতায় আনা যাবে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্তকারীরা বিষয়টি উদঘাটন করতে পারবেন। এ নিয়ে তাদের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। এছাড়া সংসদীয় কমিটি আইনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, “যেহেতু ধারাবাহিক সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়া জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ধারণ করিয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভ্যুদয়; সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে এবং চাকরিতে অবস্থানের আবশ্যকীয় শর্ত হিসেবে উপরি-উক্ত বিষয়ে অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস আবশ্যক এবং তদ্বারা সব সরকারি কর্মকাণ্ড ও কার্যাবলী পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। সেহেতু রাষ্ট্রের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ লাভ নিশ্চিত হইতে পারে”। এইচ এন আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, আমিনা আহমেদ ও খোরশেদ আরা হক। এছাড়া, বিশেষ আমন্ত্রণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী  ইসমাত আরা সাদেক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.