সত্যিকারের গল্প যখন হার মানায় রূপকথাকে

রোনালদোর সঙ্গে অনেক বারই দেখা হয়েছে মার্তুনিসের
স্পোর্টিংয়ের জার্সি গায়ে মার্তুনিস
বাস্তবতা কখনো কখনো হার মানায় কল্পকাহিনিকে। সত্যিকারের জীবনের গল্পও অনেক বেশি রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে সেলুলয়েডের চেয়ে। যেমনটা ঘটেছে মার্তুনিসের সঙ্গে। ২০০৪ সালে সুনামিকে অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকা মার্তুনিস নাম লিখিয়েছেন স্পোর্টিং লিসবনে। এই ক্লাবের হয়েই ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ক্রিস্টিয়ানোর রোনালদোর। এইখানেই গল্পটা হার মানাচ্ছে রূপকথাকে। ২০০৪ সালে বড়দিনের পর দিন ভয়াবহ সুনামিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মারা গিয়েছিল সোয়া দুই লাখেরও বেশি মানুষ। মারা গিয়েছিল মার্তুনিসের দুই ভাই আর তাঁর মা। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার সাত বছর বয়সী ছোট্ট মার্তুনিস অলৌকিকভাবে বেঁচে ছিল টানা ২১ দিন। সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল সে। পরনে ছিল প্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের জার্সি। এর পরই সেই আকস্মিক সুনামি। মার্তুনিস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে টিকে ছিল টানা তিন সপ্তাহ। এর পর একজন সাংবাদিক অর্ধমৃত মার্তুনিসকে আবিষ্কার করেন। সুনামি-সারভাইভর হিসেবে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে যায় তার খবর। যে খবর চোখে পড়ে রোনালদোর। মার্তুনিসের পরনে নিজের সাত নম্বর জার্সিটি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন রোনালদো।
পর্তুগিজ তারকা তখন ছুটে যান ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে। দেখা করে মার্তুনিসের সঙ্গে। এর পর নিয়মিত তার খোঁজ নিয়েছেন। মার্তুনিসের বাড়ি নতুন করে বানিয়ে দিয়েছেন। রোনালদোর দাতব্য সংস্থা নিয়মিত কাজ করেছে শিশুদের জন্য।
আরও কয়েকবার দেখাও হয়েছে দুজনের। মার্তুনিসও ফুটবল বিশ্বে, বিশেষ করে পর্তুগালে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পর্তুগালের কিংবদন্তি ইউসেবিওর সঙ্গেও দেখা হয়েছিল তাঁর। দেখা হয়েছিল ফিফা প্রধান সেপ ব্ল্যাটারের সঙ্গেও। অবশেষে গতকাল স্পোর্টিংয়ের ১০৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ক্লাবের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো, ১৮ বছর বয়সী মার্তুনিস যোগ দিচ্ছে ক্লাবের একাডেমিতে। যদি নিজের প্রতিভা আর সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারে, রোনালদোর মতো তাঁরও অভিষেক হবে সিনিয়র দলে।
গল্পটা তাই এখনো শেষ হয়নি। সেদিনই গল্পটা কোনো সার্থক উপন্যাস হয়ে উঠবে, যেদিন মার্তুনিস নাম লেখাবেন শীর্ষ পেশাদার ফুটবলে!

No comments

Powered by Blogger.