রেশনে গুদামের ভাল গম নিতে ‘ওয়ারেন্টি প্রথা’ বাতিল চায় পুলিশ

খাদ্যগুদাম থেকে রেশনের জন্য ভাল গম নিতে ‘ওয়ারেন্টি প্রথা’ বাতিল চেয়েছে পুলিশ। অর্থাৎ গুদাম থেকে পছন্দমতো গম নিতেই এমনটা চাওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৮শে জুন এক চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে ‘এটা সম্ভব নয়’। এভাবেই সর্বশেষ চিঠি চালাচালি হয়েছে পুলিশ বনাম খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য কেলেঙ্কারিতে পচা গমের বিষয়টি জানিয়ে এ পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বেশ কয়েকটি চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে একটি চিঠির সঙ্গে পচা গমের শ্যাম্পল পাঠায় তারা। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে তারা জানিয়েছে, খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ করা গমের আটা অত্যন্ত নিম্নমানের। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর এসব নিম্নমানের গম ও আটা খাচ্ছে। এতে তাদের মনোবল দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, উন্নত চাল-গম বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হলে পুলিশ বাহিনীর মনোবল সুদৃঢ হবে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক হবে। গুদাম থেকে উন্নতমানের চাল-গম সরবরাহের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশ থাকলেও তা সরবরাহ করা হচ্ছে না। এর আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়, খাদ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া চাল ও গম মোটা, দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা ও কাচযুক্ত। পুলিশের পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য, জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশেষ নিরাপত্তা ফোর্সের বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীসহ প্রায় ৩৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকা মহানগর পুলিশের রেশন স্টোর থেকে এসব গম উত্তোলন করে থাকেন। পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠির ভিত্তিতে গত ১৩ই মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পুলিশের জন্য উন্নতমানের গম সরবরাহ করতে একটি চিঠি দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নিরোদ চন্দ্র মণ্ডল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের জেলা/ইউনিটের রেশনসামগ্রী হিসেবে জেলা খাদ্যগুদাম থেকে যে গম সংগ্রহ করা হয়, তা উন্নত নয়। পুলিশ বাহিনী থেকে পাঠানো নিম্নমানের গমের কিছু নমুনাও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পুলিশের অভিযোগের পর গত ২১শে জুন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রাজিল থেকে আনা গমের ব্যাপারে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে চিঠি  দেন। এতে তিনি বলেন, আমি খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেয়ার আগে চারটি প্যাকেজের আওতায় ব্রাজিল থেকে দুই লাখ ৫ হাজার ১২৮ টন গম দুটি সংস্থার কাছ থেকে নেয়া হয়। এই গমের গুণগত মান সরকারি বিনির্দেশের গ্রহণযোগ্যতার প্রান্তসীমায় অবস্থিত ছিল। মহাপরিচালক চিঠিতে লেখেন, মহাপরিচালক হিসেবে আমি যোগদানের পর একটি জাহাজের গম গ্রহণের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু এগুলোর আকার, প্রকার ও বর্ণ চাক্ষুস গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। তাই তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। গমগুলোর আমদানিকারক বিভিন্ন স্থানীয় প্রতিনিধি ওই গম ফেরত নেয়। এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর পুলিশ বাহিনীকে ব্রাজিল থেকে আনা গম সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি পরীক্ষাতেই নিম্নমান হিসেবে চিহ্নিত ওই দেড় লাখ টন গমের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টন গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি ও প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.