নির্বাচনে জিততে হবে তবে আচরণবিধি লংঘন নয়

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘন না করার জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের বিজয়ের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে সরকারি দলে জয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন তিনি। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। এছাড়া এ আলোচনায় স্থান পেয়েছে সিটি নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গণসংযোগ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিরিজ জয় করাসহ সমসাময়িক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাণবন্ত এ আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ বৈঠকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, নিয়ম মেনে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন মাসে পেট্রলবোমা ও আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মেরে আবার তারাই যদি জয়ী হয় তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা যাবে। কাজেই এ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে। সরকারের ইতিবাচক দিকগুলো প্রচার করতে হবে।
সন্ত্রাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযান চলবে। বিশেষ করে যেসব জেলায় বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের সময় বেশি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, সেসব এলাকায় এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার সময় যেসব জেলায় কোনো ঘটনা ঘটেনি, সেসব জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিল ঢাকা ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের অফিসও। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জেলাগুলোর উন্নয়ন ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অবহিত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জেলায় যেসব প্রকল্প চলমান আছে তা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন এবং বলেন, এতে নতুন প্রকল্প নিতে সুবিধা হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বাবলম্বী দেশ গড়তে প্রতি জেলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য কেউ প্রস্তাব দিলে সেগুলো অনুমোদন করা হবে। সুনামগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং ইন্সটিটিউট হওয়া একান্ত প্রয়োজন। মানিকগঞ্জের আরিচাঘাটে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। হাওর এলাকার উন্নয়নে হাওর বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিদ্যুতের সুবিধা পায়নি যেসব এলাকা সেখানে সোলার প্যানেল দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হওয়া ব্যক্তিদের কবর খুঁজে বের করে চিহ্নিত করা ও যাদের নাম পাওয়া যাবে না তাদের জন্য নাম না জানা অনেক শহীদ লিখে চিহ্নিত করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
রফতানি হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ : সাবমেরিন ক্যাবলের ইন্টারনেটের অব্যহৃত ব্যান্ডউইথ ভারতের কাছে রফতানি করা হবে। এ জন্য ভারতের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভা বৈঠকে ভারতের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট বিটুইন ভারত সঞ্চার নিগাম লিমিটেড (বিএসএনএল) অ্যান্ড বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) ফর লিজিং অব ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইথ ফর ইন্টারনেট অ্যাট আখাউড়া (জিরো পয়েন্ট) শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ১০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ বিএসএনএলের কাছে বাণিজ্যিকভিত্তিতে লিজ দেয়া হবে। এর মাধ্যমে আমরা বছরে ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা (এক দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার) পাব।
ভারত চাইলে ১০ জিবিপিএস পর্যায়ক্রমে ৪০ জিবিপিএসে উন্নীত করা যাবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চুক্তির মেয়াদ হবে ৩ বছর। ১০ জিবিপিএসের বেশি রফতানির ক্ষেত্রে দুই পক্ষ আলোচনা করে মূল্য নির্ধারণ করা হবে। ব্যান্ডউইথ বলতে একটি নেটওয়ার্ক বা মডেম কানেকশনের মাধ্যমে পাঠানো ডাটার পরিমাণ বোঝায়। এটি সাধারণত বাইটস পার সেকেন্ড বা বিপিএস দিয়ে পরিমাপ করা হয়।
মোশাররাফ হোসাইন বলেন, রফতানির জন্য ক্যাবল কক্সবাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হয়ে আগরতলা জিরো পয়েন্ট দিয়ে ভারতে যাবে। বাংলাদেশ অংশে সীমান্ত পর্যন্ত ক্যাবল স্থাপনে সরকারই খরচ বহন করবে। আমাদের অলরেডি আছে। ভারতের অংশের জন্য ভারতের প্রতিষ্ঠানই খরচ বহন করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিএসসিসিএল আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবল কনসোর্টিয়াম সিমিউ-৪ ও সিমিউ-৫-এর সদস্য। সিমিউ-৪-এর আওতায় আমরা ইতিমধ্যে কাজ করছি। এর আওতায় আমরা ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাচ্ছি। সিমিউ-৫-এর সঙ্গে যুক্ত হলে আমাদের ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) অনেক বেড়ে যাবে। সে সময় আমরা সেখানে আরও এক হাজার ৩০০ জিবিপিএস পাব। তখন আমাদের মোট ক্যাপাসিটি হবে এক হাজার ৫০০ জিবিপিএস। ২০০ জিবিপিএসের মধ্যে ৩০ জিবিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে জানিয়ে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, ১৭০ জিবিপিএস অব্যহৃত রয়েছে। এ পর্যায়ে কিছু রফতানি করব। আমরা যখন ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট নিয়ে যাবে তখন আমাদের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ কাজে লাগবে। বৈঠকে মাগুরা-১ এর শূন্য আসনে প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে ২২ ও ২৩ এপ্রিল দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং ২৪ এপ্রিল আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে ওই বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ড এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ যুগান্তরকে এ তথ্য জানান। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আগ্রহী প্রার্থীরা দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন : এশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনদিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছেন। ইন্দোনেশিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী এ সফর করছেন। এ সম্মেলনে এশিয়া-আফ্রিকা নয়া কৌশলগত উদ্যোগের ১০ বছরপূর্তি উদযাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান ছাড়াও একটি প্লেনারি অধিবেশনে যোগ দেবেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিরাপত্তা, প্রটোকল ও মিডিয়া টিমের সদস্যসহ ৫৯ জনের প্রতিনিধি দল থাকছে। এবার দ্বিতীয় এশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৫ সালে। এ সফরে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত যোগযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জাপান, নেপাল, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশীদের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি রাজনৈতিক দল বিদেশীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। বিদেশীরা ওই দেশের মানুষের চাকরি দখল করছে বলে অভিযোগে এ হামলা করা হয়েছে। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা বিদেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ওই ঘটনায় বাংলাদেশীদের ৪-৫টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশীদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন।
ইয়েমেন থেকে আজ আসছেন ১৩৭ বাংলাদেশী : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আজ বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ উড়োজাহাজ ইয়েমেনের পাশের দেশ জিবুতি গিয়ে সেখান থেকে আরও ১৩৭ বাংলাদেশীকে নিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ঢাকায় ফিরে আসবে। প্রতিমন্ত্রীর ধারণা, ফিরে আসা ৫০৮ জনসহ ইয়েমেনে মোট বাংলাদেশীর সংখ্যা ৭০০ থেকে ৮০০ জন হবে।
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি : ভারতের সঙ্গে সই হওয়া সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আসাম সীমান্তের অংশ বাদ দিচ্ছে বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবর সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের দেখার বিষয় নয়। সীমান্ত চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে বলে ভারত আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে।

No comments

Powered by Blogger.