সেনা মোতায়েন প্রশ্নে দ্বিধায় ইসি

আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বিকাল পর্যন্ত পাঁচ নির্বাচন কমিশনারের দুইজন মতামত দেননি। আজ ওই দুই কমিশনারের মতামত পেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। ইসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে রয়েছেন। অন্য একজন নির্বাচন কমিশনার সিইসির অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। তবে অপর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী পরিষ্কারভাবে কিছু জানাননি। অবশিষ্ট দুই নির্বাচন কমিশনার গতকাল পর্যন্ত তাদের মতামত সিইসির কাছে পাঠাননি। অবশ্য এই দুই কমিশনার আগে থেকেই সেনাবাহিনী ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করার পক্ষে। ফলে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন সিইসি। এ ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে সংখ্যাগরিষ্ঠ কমিশনারের মতামত প্রয়োজন হয়। আর অতীতের কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নজির না থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে। ওই সূত্র আরও জানায়, মূলত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করে। তাই তাদের ওপর কমিশন আস্থা রাখতে পারে। গতকাল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্তব্য করেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হুকুম করলেই সেনাবাহিনী চলে আসবে এটা সাংবিধানিকভাবে ঠিক নয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত কোন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন হয়নি। সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জোরদার হলেও পুলিশ, বিজিবি ও আনসার দিয়ে বিগত সিটি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা গেছে। এদিকে রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনে সেনাবাহিনী ছাড়াই কিভাবে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অধিকাংশ বাহিনীর কর্মকর্তারা সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই বলে মতামত দেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বাহিনীগুলোকে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকল বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বাহিনীগুলো জানিয়েছে, তাদের প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি প্রস্তুতি রয়েছে। ওই বৈঠক থেকে বের হয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের জানান, সেনা মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ ছাড়া প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রপলিটন পুলিশের কমিশনাররা বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তারা যা করা দরকার সবকিছুই করবেন। এদিকে নির্বাচন কমিশনের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বেশির ভাগ প্রার্থীই সেনা মোতায়েনের পক্ষে। ইসির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তারা সিইসির কাছে এ দাবি জানিয়েছিলেন। এরপর অনেক প্রার্থী ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কার কথা  কমিশন বরাবর লিখিতভাবে জানান। এজন্য তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সেনা মোতায়েনের আবেদন করে। প্রার্থীদের এই আবেদন কমিশন গুরুত্ব সহকারে দেখছে। যে কারণে সিইসির অবস্থান সেনা মোতায়েনের পক্ষে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে ২৬ থেকে ২৯শে এপ্রিল তিন সিটিতে সেনা মোতায়েন হতে পারে। গতকাল মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম জানান, সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধীন। দুই তিনদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। গণমাধ্যমে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রকাশিত খবর নজরে আনলে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে কিভাবে জেনেছেন আমি জানি না। ওই পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই আপনাদের জানিয়ে দিতাম। সচিব বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাদের জানাতে পারি না। অবশ্য রোববার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পর সিইসি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দু-এক দিনের মধ্যেই সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে। উল্লেখ্য, গত ১৯শে মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এই তিন সিটির ভোটগ্রহণ হবে ২৮শে এপ্রিল।

No comments

Powered by Blogger.