খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাঃ মুহুর্মুহু ইট নিক্ষেপ আহত ২৫, খালেদা জিয়ার গাড়ি ভাঙচুর, হামলার পরও খালেদা জিয়ার প্রচারণা অব্যাহত

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাঃ মুহুর্মুহু ইট-পাটকেল নিক্ষেপ,
২৫ জন গুরুতর আহত, খালেদা জিয়ার গাড়ি ভাঙচুর
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করতে এক যুবক
হাতুড়ি নিয়ে মাইক্রোবাসের দিকে এগিয়ে যায়।
হামলার পরও খালেদা জিয়ার প্রচারণা অব্যাহত
রাজধানীতে নির্বাচনী প্রচারণার তৃতীয় দিনে কারওয়ানবাজারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সম্মিলিত এ হামলায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীসহ কমপক্ষে ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ইট-পাটকেল-লাঠি ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়েছে বহরে থাকা এক ডজনেরও বেশি গাড়ি। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িও হামলার শিকার হয়েছে। ঢিল ছুড়ে মারা হয়েছে খালেদা জিয়াকে লক্ষ্য করে। তবে তিনি অক্ষত অবস্থায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পেরেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিক্ষোভ ও আগামীকাল বুধবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি বাদে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
গতকাল সোমবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়াই তৃতীয় দিনের মতো নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। সকাল ৯টায় খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। যদিও আগের দুই দিন পুলিশি নিরাপত্তা পেয়েছিলেন তিনি। গুলশান থেকে সরাসরি রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ানবাজারে বিকেল সাড়ে ৫টায় এসে উপস্থিত হন। কাঁচাবাজারে গণসংযোগ শুরু করেন তিনি।
পৌঁনে ৬টায় কারওয়ানবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উল্টো দিকে গাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে পূর্বমুখী হয়ে বক্তব্য রাখছিলেন খালেদা জিয়া। এ সময় উল্টো দিকে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বেশ কয়েকজন যুবক গাড়িবহরে হামলা শুরু করে। তাদের অনেকের হাতে ছিল লাঠি। তারা এলোপাতাড়ি ইট ও ডাবের খোল ছুড়তে থাকে। যানজটের কারণে খালেদা জিয়ার গাড়ি সামনের দিকে এগোতে পারছিল না। হামলাকারীদের অনেকে খালেদা জিয়ার গাড়ি ল্য করে ইট ছুড়তে থাকে। তার গাড়ির ছাদ ও কাচে বেশ কয়েকটি ইটের টুকরা পড়তে দেখা গেছে। এ সময় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী ও খালেদা জিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা তার গাড়ি ঘিরে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করার চেষ্টা করেন। হামলায় নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে কয়েকজনের মাথা ফেটে যায়। গাড়িতে খালেদা জিয়া সাধারণত বসেন দ্বিতীয় সারিতে। ওই বরাবর তার গাড়ির ডান কাচ ইটের আঘাতে ফেটে যায়। একই সময়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়ির ঠিক পেছনে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত একাধিক মাইক্রোবাসে লাঠি, লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাঙচুর চালাতে থাকে। খালেদা জিয়ার বহরে থাকা অতিরিক্ত গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় নিরাপত্তাবাহিনীর (সিএসএফ) কমপক্ষে পাঁচ-ছয়টি গাড়ি। খালেদা জিয়াকে লক্ষ্য করেও ঢিল মারতে থাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাকে হামলা থেকে রক্ষা করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সিএসএফ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। খালেদা জিয়ার গাড়িতে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে থাকতে দেখা গেছে। আহতদের ইউনাইটেডসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গাড়ি সামনের দিকে এগোতে থাকলে হামলাকারীরাও ধাওয়া দিয়ে ভাঙচুর চালাতে থাকে। একপর্যায়ে এফডিসি হয়ে মগবাজারের দিকে চলে আসে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। কারওয়ানবাজারের পাইকারি মাছের আড়তের কাছাকাছি পর্যন্ত হামলাকারীরা তার গাড়িবহরকে ধাওয়া করে। পরে হামলাকারীরা কারওয়ানবাজারে মিছিল করে। এ সময় ‘কারওয়ানবাজারের মাটি, ছাত্রলীগের ঘাঁটি’- এমন স্লোগানও দেয়া হয়।
আহত যারা : হামলায় আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, সিএসএফ (চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী) সদস্য ফজলুল করিম, ফারুক হোসেন ও খালেদা জিয়ার অতিরিক্ত গাড়ির ড্রাইভার শাহজাদা শাহেদকে।
পরিণতি ভালো হবে না : খালেদা জিয়া
নির্বাচনী প্রচারণায় কারওয়ানবাজার এলাকায় গাড়িবহরে হামলা
চালানোর সময় খালেদা জিয়া গাড়ির ভেতরে ঢুকছেন : নয়া দিগন্ত
নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বাস প্রতীকে ভোট চাইতে গিয়ে রাজধানীর কাওরান বাজারে হামলার শিকার হন তিনি। হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ ধরনের হামলার পরণতি হবে খুবই ভয়াবহ। কারা এগুলো করছে আমরা জানি। তাদের গুণ্ডামি দেখে নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা এ দেশের মানুষের ভোটের ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। অবৈধ এ সরকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব জায়গায় চুরি করছে। এ চোরদের জনগণ ভোট দেবে না।’
হামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-গ-১৩২৬১২) গ্লাস ভেঙে গেছে। এছাড়া তার নিরাপত্তা টিম-সিএসএফের চারটি গাড়িসহ অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলায় সিএসএফ সদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
হামলার পরও খালেদা জিয়ার প্রচারণা অব্যাহতঃ নেতাকর্মীদের ঢল, মগ প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ :
হামলার পর বাসায় না ফিরে মালিবাগ এলাকায় মির্জা আব্বাসের পে প্রচারণা শুরু করেন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা ৭টায় তিনি মালিবাগ এলাকায় গণসংযোগ করেন। সেখান থেকে যান রাজারবাগ এলাকায়। সেখানে জনগণের কাছে মির্জা আব্বাসের পে ‘মগ’ মার্কায় ভোট চান। মগের পে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন শাজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের বাসা সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে খালেদা জিয়া সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চান।
এরপর তিনি যান খিলগাঁও। খিলগাঁও এলাকা থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে পুলিশি প্রটোকল দেয়া শুরু হয়। এরপর তার গাড়িবহর মালিবাগ রেলগেট, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া হয়ে পশ্চিম হাজীপাড়া, রামপুরায় যায়।
বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী এ সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে ঘিরে রাখেন এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দেন। তাদের মুখে শোনা যায়- ‘খালেদার ওপর হামলা কেন খুনি হাসিনা জবাব চাই’, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’।

No comments

Powered by Blogger.