কৃষক মেরে শিল্পপতি বাঁচাচ্ছেন মোদি

ভারতে বিজেপি সরকারের জমি অধিগ্রহণ অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সভাপতিত্বে দিল্লির রামলীলা ময়দানে মহাকিষাণ সভা বা দিনমজুর কৃষক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে উপস্থিত হন সোনিয়া ও রাহুল। মোদি সরকারকে ‘জনবিরোধী’ বলে আখ্যা দেন সোনিয়া। অন্যদিকে দু’মাস অজ্ঞাতবাসে থাকার পর জনসমক্ষে আসা রাহুল গান্ধী মোদিকে ‘গরিবের শত্রু’ ও ‘কৃষকবিরোধী বলে’ অভিহিত করেন।
এদিন কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী জমিগ্রহণ নিয়ে বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। মোদি সরকারকে জনবিরোধী আখ্যায়িত করে সোনিয়া বলেন, ‘মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণরূপে কৃষকবিরোধী। গরিব ও অসহায়দের শত্র“ তিনি।’ জমি অধ্যাদেশ বিল প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সোনিয়া বলেন, সরকারের গণবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তার দল তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা কয়েক হাজার কৃষকদের সমাবেশে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতা থেকে এখন বাইরে রয়েছি। কিন্তু কৃষকদের ন্যায্য দাবি নিয়ে লড়াই কখনো দুর্বল হতে দেব না। মোদি সরকারের কাজকর্ম সম্পূর্ণভাবে কৃষক, শ্রমিক এবং গরীবের বিরুদ্ধে। এই সরকারের কথা এবং কাজের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। গত ১১ মাসে তারা গভীর সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষক ও দুর্বলদের অধিকারের জন্য লড়াই করব। সরকারের এই ধরনের জবরদস্তি আমরা সফল হতে দেব না।’ তিনি বলেন, ‘আজ সেসব লোক কোথায়, যারা বলেছিল, আমরা ক্ষমতায় এলে একজন কৃষকও আত্মহত্যা করবে না।’ অসময়ের বৃষ্টি কৃষকদের ক্ষতি করেছে। সরকার কিছুই করেনি। আজ কৃষক ঋণে জর্জরিত। অভাবে আত্মহত্যা করছে। গরিবের উন্নয়নের এত প্রতিশ্র“তি কই? কোথায় সেই পরিবর্তন?
জনগণ বুঝতে পেরেছে, মোদি ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’ কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কৃষকরা বঞ্চিত হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘গরিবের শত্র“’ ও ‘কৃষকবিরোধী বলে’ অভিহিত করেছেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী। নরেন্দ্র মোদিকে বড়লোকের বন্ধু আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, মোদির মেইক ইন ইন্ডিয়া কৃষকদের জমি দখলের ফন্দি। গরিবের টাকা দিয়ে শিল্পপতিদের ঋণ শোধ করছেন মোদিজি। রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমি আপনাদের বলছি, মোদিজি কীভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। বড় শিল্পপতিদের কাছ থেকে মোদি হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারে চমক লাগিয়েছেন। এখন কীভাবে শোধ করবেন সেই ঋণ? তাই এখন আপনাদের জমি নিয়ে শিল্পপতিদের দিতে চান। মোদি গরিব কৃষকদের মেরে বড়লোক বন্ধুদের বাঁচাতে চান।’ রাহুল আরও বলেন, গুজরাট মডেলের মাধ্যমে মোদি দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে কৃষকের জমি দখল করতে হয়। আর তা শিল্পপতিদের দিয়ে বড় বড় ভবন বানাতে হয়। এই কাজ তিনি সারা দেশে করতে চান। এটাই মোদি মডেল। ভিত্তি দুর্বল করো, তারপর মই লাগিয়ে ভবনে রঙ চঙ করে দেখাও যে, বিল্ডিং কেমন জ্বলজ্বল করছে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বলেন, সরকারের পদক্ষেপ কৃষকদের আঘাত করেছে। অথচ মোদি গরিব ও তরুণদের কাছে ‘স্বপ্ন বিক্রি’ করে ক্ষমতায় এসেছেন। মনমোহনের সরকার গরিবদের উন্নয়নে কাজ করেছেন বলে জানান তিনি। মনমোহন বলেন, ‘আমাদের সরকার কৃষকদের ৭০ হাজার কোটি রুপি ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে। আমরা গমের জন্য মূল্য নির্ধারণ বাড়িয়ে কৃষকদের উপকার করেছি। গমের এমএসপি (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস) ৫৪০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ১৪০০ রুপি করেছি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, মোদি সরকার রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। আবার এখন কৃষকদের জমি কেড়ে নিতে চাচ্ছেন। ইন্ডিয়া টুডে।

No comments

Powered by Blogger.