বর্ষবরণে যৌন হয়রানি- পুলিশ ‘কেলাস’ বক্তব্য দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে

টিএসসিতে যৌন হয়রানির ঘটনার বিষয়ে পুলিশ ‘কেলাস’ বক্তব্য দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বিবস্ত্র হয়েছে কি হয়নি সেটি মুখ্য বিষয় নয়, যৌন হয়রানি হওয়াটাই মুখ্য বিষয়। আমরা আশা করবো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেয়া দুই-তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা করেন। মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারে না। তাদেরও এ ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে। পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেইদিনের ঘটনায় পুলিশ গতানুগতিক ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন ছাত্র সন্দেহভাজন দু’জনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিল। বলা হচ্ছে, পুলিশের অবহেলায় তারা পালিয়ে গেছে। পুলিশের এই ধরনের ভূমিকা হতাশাজনক। এটি কর্তব্যে অবহেলার শামিল। এমনকি সিসি ক্যামেরা দেখে দোষীদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রেও পুলিশ অনাগ্রহ দেখিয়েছে বলে কমিশনে অভিযোগ এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি সহ আরো অনেক স্থানে নারীকে
বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতন করা হয়। হরণ করা হয় নারীর সতীত্বকে।
বর্ষবরণের নামে যা করা হয়েছে তার দায়ভার কে নেবে? এভাবে
বাংলা উৎসব গুলি বা নববর্ষতে যদি নারীর শ্লীনতাহানি,
নারীর প্রতি পাশবিক অত্যাচার,নববর্ষ মানে যদি হয়
আমার দেশের ধর্ষিতা মা-বোনদের করুন আর্তনাদ!
পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুই নম্বর গেটে একদল সংঘবদ্ধ যুবক ভিড়ের মধ্যে নারীদের যৌন হয়রানি করে। এসময় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সংসদের সম্পাদক লিটন নন্দীসহ কয়েকজন তরুণ নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে যৌন হয়রানির শিকার নারীদের উদ্ধার করেন। পাশে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তারা এগিয়ে যাননি। লিটন নন্দীর ভাষ্যমতে, একজন নারীকে প্রায় বিবস্ত্র করা হয়েছিল। এসময় তিনি নিজের পাঞ্জাবি খুলে ওই নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করেন। এ ঘটনায় লিটন নন্দীসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ করার পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঘটনার সত্যানুসন্ধান করতে একজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনার সময় পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার প্রসঙ্গটিও খতিয়ে দেখছেন। এছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন শাহবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে বখাটেদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে সিসিটিভির ফুটেজের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, টিএসসিতে বস্ত্র হরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে কেউ কেউ যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকতে পারেন। তারা এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বা ভিকটিমদের গোপনীয়ভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল মগবাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বক্তব্য তুলে ধরেন কমিশন চেয়ারম্যান। এসময় কমিশনের দুই সদস্য মাহফুজা খানম ও এ্যারোমা দত্তও উপস্থিত ছিলেন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, ১৬ নম্বর সিসিক্যামেরায় এ ধরনের ফুটেজ রয়েছে। তা প্রকাশ করতে হবে এমনটা আমরা আশা করছি না। এতে করে ভিকটিম আবার ভিকটিমাইজ হবে। তবে আমরা আশা করবো পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। তিনি বলেন, সিসিটিভিতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। এক প্রশ্নের জবাবে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ভিকটিম খুঁজে বের করে তাদের যেচে সাহায্য করতে যাওয়াটা বিড়ম্বনার হতে পারে। তবে কেউ যদি সাহায্য চায় তাহলে আমরা সকল প্রকার সাহায্য করবো। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় লজ্জা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘সকল নারীর কাছে’ ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানি ও লাঞ্ছনার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিস্মিত, মর্মাহত ও লজ্জিত। এ ঘটনা আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে কী হিংস্রতা ও নগ্নতা আমাদের মনের গহিনে বাসা বেঁধেছে। কী ঘৃণ্য মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসেছে। তিনি বলেন, একই এলাকায় ২০০১ সালে বাঁধনের ওপর বর্বরতা চালানো হয়েছিল। আমরা যুগপৎভাবে লক্ষ্য করছি জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রতিহত করার জন্য নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নারীদের হেনস্তা করা হয়েছে। এ ধরনের বর্বরতা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে যারা নানাভাবে সুবিধা নিতে চায় বিশেষ করে জঙ্গিবাদী ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান শক্তি। এরা জনপরিসরে নারীর উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না। তারা ধর্মকে পুঁজি করে জনপ্রিয় ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে যে পহেলা বৈশাখ উদযাপন ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইরানের যদি নওরোজ উদযাপন ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় তাহলে বাংলাদেশে তা হবে কেন? আসলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সর্বজনীনতা মানতে পারছে না। তারা বিভক্তি তৈরি করতে চায়। সুদৃঢ় সাংস্কৃতিক ঐক্যে ফাটল ধরাতে চায়। তারা একে অনৈসলামিক সংস্কৃতি বলছে। ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে পহেলা বৈশাখের সর্বজনীন রূপকে ধ্বংস করতে চায়। তিনি বলেন, ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় পুলিশের তৎপরতা যেন লোক দেখানো না হয়। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে কালক্ষেপণ বা দীর্ঘসূত্রতা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল অভিযুক্তদের বহিষ্কার বা পুলিশ সদস্য ক্লোজ করাই একমাত্র সমাধান নয়। বিচারের মাধ্যমে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গণমাধ্যমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। গণমাধ্যমের এই ভূমিকাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কোন কারণেই যেন নারীর প্রতি যৌন হয়রানির এ প্রসঙ্গটি গণমাধ্যম থেকে হারিয়ে না যায়। আমরা অনুরোধ করবো এ অপরাধের চূড়ান্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত যেন গণমাধ্যমে বিষয়টির ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের মাঠে থাকা প্রার্থীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ কিংবা দুঃখপ্রকাশ না করায় তাদের সমালোচনা করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, যারা আগামী দিনের নগরপিতা হবেন, এই বিষয়ে তাদের নীরবতা আমাদের বিচলিত করছে। আমরা আগামী দিনের জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি বন্ধে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার চাই।
কমিশন সদস্য মাহফুজা খানম বলেন, পুলিশের দায়িত্বে চরম অবহেলা ছিল। প্রশাসন এখন যৌন হয়রানির মাত্রা নির্ধারণ করতে ব্যস্ত। শুধুমাত্র বস্ত্রহরণ হলেই যৌন হয়রানি হয় তা নয়। বরং কারো প্রতি কটূবাক্য বা অশালীন মন্তব্য যৌন হয়রানির অন্তর্ভুক্ত। পুলিশ এসব আমলে নিচ্ছে না।
বর্ষবরণে যৌন হয়রানি- শাস্তির দাবিতে উত্তাল ঢাবি
পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে নারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ৬ষ্ঠ দিনের মতো উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দাবি বখাটেদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা এবং দায়িত্বে অবহেলা করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও কর্তব্যরত পুলিশের পদত্যাগ। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এবার এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া টিএসসি কেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও একই দাবিতে আন্দোলন শুরু করছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে জোর প্রতিবাদ। কিন্তু দেশব্যাপী তোলপাড় করা এই ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও সরকার সমর্থক বাম ছাত্রসংগঠনগুলো। ঘটনার দুই দিন পর গণমাধ্যমগুলোতে একটি প্রতিবাদ বার্তা পাঠিয়েই কাজ সেরেছে ছাত্রলীগ। সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদ জানিয়ে সরব থাকলেও আন্দোলনের মাঠে নেই তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে শ্লীলতাহানির ঘটনাকে কোন রং না দিয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
বর্ষবরণের শ্লীলতাহানির ঘটনায় প্রথম প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। এ আন্দোলনে পরে একে একে ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রফেডারেশন যোগ দেয়। বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে ফুঁসে উঠে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সারা দেশে। সরকারের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলো প্রথম থেকেই নিরবতা পালন করে আসছে। ঘটনার দুই দিন পর ছাত্রলীগ গণমাধ্যমে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে দায় সারে। দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার সমর্থক বাম ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিয়ে ছাত্রলীগ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করলেও এবার তা দেখা যাচ্ছে না। সরকার সমর্থক বাম ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত দলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, জাসদ (ছাত্রলীগ), বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র সমিতি। সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিল। এজন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এ কারণে ছাত্রলীগ এই আন্দোলনে কোন কর্মসূচি ঘোষণা করছে না। এ ছাড়া এই ঘটনাকে পুঁজি করে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ সুবিধা আদায় করতে পারে তাই সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতি কোন নির্দেশ নাই বলে সূত্র জানায়। ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল বাম সংগঠনগুলো আন্দোলন করলেও সরকার সমর্থক বাম সংগঠনগুলো কোন কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের আন্দোলনে একত্মতা ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২১ ও ২২শে এপ্রিল কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা বলেন, সভ্য সমাজে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার হওয়া উচিত। সিটি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছি না। তবে তিনি কর্মসূচির বিষয় মাথায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন: এদিকে ঘটনার ৬ষ্ঠ দিনে সকাল সাড়ে ১১টায় অপরাজেয় বাংলায় মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এস এম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক এম এম আকাশ, ক্রিমিনোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান, টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, সমিতির সাবেক সহসভাপতি আখতার হোসাইন খান, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন, এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. কামাল উদ্দিন প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের কোন কালক্ষেপণ করা যাবে না। ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ সময় তিনি অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সরকারকে ৭ দিনের আলটিমেটাম দেন। ক্রিমিনোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান বলেন, বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু আবেগ দিয়ে কথা বললে চলবে না। সাবেক সহসভাপতি আখতার হোসেন খানে বলেন, নির্দিষ্ট কোন সংগঠনকে দায়ী না করে মূলত কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে এবং এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে দুপুর ১টায় অপর একটি মানববন্ধনে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে রং নির্বিশেষে কেন শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। ঘটনার সময় কোন থানার ওসি দায়িত্বে ছিল যিনি অপরাধ দমন করতে এগিয়ে আসেন নি এবং কোন প্রক্টর খেলছিলেন তাদেরও বিচার করতে হবে। অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ঘটনাকে হালকা করার জন্য এর উপর এখন রং লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। এসব রং ছড়ানো বন্ধ করে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন। একই মানববন্ধন থেকে অধ্যাপক মশিউর রহমান ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম ঘোষণা করেন। সকাল ১১টায় ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে অপরাজেয় বাংলা থেকে কার্জন হল পর্যন্ত একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ নয়, এবার হবে প্রতিরোধ স্লোগানে এ মানববন্ধনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের হাজারও মানুষ অংশ নেয়। মানববন্ধনে অংশ নেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনসহ চলচ্চিত্র শিল্পের কর্মীরা। মানববন্ধন শেষে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তৃতা করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী, অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি, শারমিন লাকী, বন্যা মির্জা।
৫জন বখাটেকে শনাক্ত করা হলেও এখনও কাউকে আটক করতে না পারায় হাসান তারেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। দায়িত্ব অবহেলা করার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক এ এম আমজাদ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অপসারণের জোর দাবি জানান তিনি। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। প্রক্টরকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অপসারণ করা  না হলে ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে যাবেন বলে হাসান তারেক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তবে এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ কোন চাপ অনুভব করছে না বলে জানান। তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। তাদের দাবি অযৌক্তিক। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ছাড়া দুপুর আড়াইটায় রাজু ভাস্কর্যে টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো মানববন্ধন করে।

No comments

Powered by Blogger.