পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ঢাকার অঙ্গীকার মির্জা আব্বাসের

পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ঢাকার অঙ্গীকার নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাস। ১০ দফায় ৯৮টি প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে। মামলা থাকার কারণে মির্জা আব্বাসের পক্ষে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে বিশ্বায়নের উপযোগী ঢাকা গড়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। ইশতেহারের ১০ দফাগুলো হল- নাগরিক সেবা, নাগরিক বিনোদন, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা খাত, পরিবেশ উন্নয়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির ঢাকা, সমাজসেবা, জননিরাপত্তা, নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা উন্নীতকরণ। এই ১০টি বিষয় সম্পর্কিত ৯৮টি প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছেন মির্জা আব্বাস। ইশতেহারে আব্বাসের বক্তব্য পড়ে শোনান আফরোজা আব্বাস। ইশতেহারে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি ঢাকার সন্তান। এই নগরবাসীতেই আমি বেড়ে উঠেছি। নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নগরবাসীর চিন্তা-চেতনার শরিক আমিও। তাই আমি নির্বাচিত হলে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে সবার বাসযোগ্য বিশ্বায়নের উপযোগী করে ঢাকাকে গড়ে তুলব।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আফরোজা আব্বাস বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় যারা আমাদের সহযোগিতা করছে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি পাবনার মেয়ে, এখন ঢাকার বউ। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। তাই আমি ঢাকাবাসীর সহযোগিতা চাই। ঢাকাবাসীকে আমার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আব্বাসপত্নী বলেন, নির্বাচনে নীরব বিপ্লব হবে, মির্জা আব্বাস জয়ী হবেন। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপনের দাবি জানান আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, মির্জা আব্বাস এই এলাকার সন্তান। তার প্রচারণা চালানোর অধিকার আছে। কিন্তু সরকার সেই অধিকার থেকে আব্বাসকে বঞ্চিত করছে। নির্বাচিত হলে ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আফরোজা আব্বাস বলেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে মির্জা আব্বাস তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাধা দেয়ার নিন্দা জানিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়ক ব্রি. জে. (অব.) আসম হান্নান শাহ বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। এজন্য তারা খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। বাধা দিয়ে লাভ হবে না। ২৮ এপ্রিল ভোট বিপ্লব হবে। তিনি বলেন, মির্জা আব্বাসের পক্ষে দক্ষিণ সিটিতে জোয়ার উঠেছে। তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে সর্বত্র বাধা দেয়া হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ঘাবড়ে গেছেন। তাই তিনি খালেদা জিয়া সম্পর্কে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হান্নান শাহ বলেন, আমাদের কাজ হবে ভোট কেন্দ্রগুলোকে পাহারা দেয়া। যাতে করে ভোটচোররা চুরি করতে না পারে।
ইশতেহার অনুষ্ঠানে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নাগরিক সেবা : ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সমন্বয়ে বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলা, শহরের হোল্ডিং ট্যাক্স ঢাকাবাসীর মতের ভিত্তিতে নির্ধারণ, অনলাইন দ্রুত জবাবদিহিতামূলক অভিযোগ কেন্দ্র চালু, প্র্রতিটি ওয়ার্ডে অভিযোগ বক্স স্থাপন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সংস্কার, সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সড়কবাতি স্থাপন, মতিঝিলে ও নগরভবনের সামনে ‘ডিজিটাল শেয়ার ডিসপ্লে’ বোর্ড স্থাপন, নাগরিক সেবা কার্যক্রম ওয়ার্ড পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ, বাজারের পরিকল্পিত আধুনিকায়ন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতকরণ ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ, কবরস্থান ও শ্মশানের উন্নয়ন, ওয়ার্ডভিত্তিক আধুনিক শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র (ডে কেয়ার সেন্টার) স্থাপন, শহরের নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
নাগরিক বিনোদন : বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা এবং নদীতীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ এবং বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা, শিশুপার্কের সম্প্রসারণ ও শিশুদের খেলার মাঠের সংখ্যা বাড়ানো, পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কার এবং আধুনিক পর্যটন সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ, উন্মুক্ত উদ্যানগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন, খেলাধুলার মান উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের পর সেখানে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটের সংস্কার, ফুটওভার ব্রিজে এসকেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) স্থাপন, বাস সার্ভিসগুলোর মান উন্নয়ন, যাত্রী বিশ্রামাগার ও বাস-বে নির্মাণ, ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ, ফুটপাত প্রশস্তকরণ, টার্মিনাল, রেলস্টেশনগুলো থেকে নিরাপদ সিটি পরিবহন ব্যবস্থা চালুকরণ, ওয়ার্ডভিত্তিক যানজট নিরসনে প্রশিক্ষিত কমিউনিটি পুলিশ প্রদান, হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাটের খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ নিশ্চিতকরণ, নারী ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা : পথচারী ও বাসযাত্রীদের জন্য আধুনিক টয়লেট, প্রতিটি বাজারে ফরমালিন মুক্তকরণের কার্যকর উদ্যোগ ও পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, সিটি কর্পোরেশনের নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহ আধুনিকীকরণ, মশক নিধন করা হবে।
শিক্ষা খাত : বিভিন্ন স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টার নৈশকালীন শিক্ষা কার্যক্রম চালু, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে বিভিন্ন কোর্স চালু, ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিরাপদ স্কুল বাস সার্ভিস চালু, কর্মজীবী নারী ও কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল তৈরি, বাস্তবভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রম জোরদারকরণ করা হবে।
পরিবেশ উন্নয়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : ধুলাবালি দূরীভূতকরণ এবং শব্দ দূষণ-বায়ু দূষণ প্রতিকারে কার্যকর আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, বনায়নের মাধ্যমে ঢাকাকে সবুজায়ন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘স্যানিটারি ল্যান্ডফিল’ গড়ে তোলা, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে সব আবর্জনা-বর্জ্য অপসারণ, বিদ্যমান খাল পুনঃখনন ও সংস্কার, খালের পাশে ওয়াকওয়ে এবং বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ, যথাস্থানে ডাস্টবিন স্থাপন করা হবে।
প্রযুক্তির ঢাকা : সিটি কর্পোরেশনের সব সেবা আধুনিকায়ন এবং সব ধরনের ট্যাক্স অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা করা, সিনিয়র সিটিজেন হেল্পলাইন সার্ভিস চালু করা, পাবলিক প্লেসে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা, শিক্ষিত বেকার যুবকদের ফ্রি-ল্যান্সিং বা ই-ল্যান্সিং ট্রেনিং প্রদানের মাধ্যমে অনলাইনে ঘরে বসে আয়ের পথ সৃষ্টি করা হবে।
সমাজসেবা : গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য আলাদা হাসপাতাল ও ডরমেটরি স্থাপন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু, অসহায়, আশ্রয়হীন ও পথশিশুদের জন্য আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, নিুবিত্তদের জন্য স্বল্পগু ভাড়ার আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
জননিরাপত্তা : পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সড়কে আলাদা লেন ও সিসিটিভির আওতায় আনা, অপরাধপ্রবণ জায়গা চিহ্নিতকরণ এবং অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিতকরণ এবং পুনর্নির্মাণ, নির্যাতনের শিকার নাগরিকদের আইনগত সেবা প্রদান করা হবে।
নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন : ওয়ার্ডভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন ও বিশেষজ্ঞদের অর্থনীতিবিদদের মতামত গ্রহণ, নগরীর সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ১৮০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ ও নগর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও সেবার মান উন্নয়ন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.