চীন-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মোড় ৪৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের চুক্তি

পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে নতুন অর্থনৈতিক করিডোরে সূচনা হয়েছে। পাকিস্তানে ৪৬০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করছে চীন। পাকিস্তান সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এ সংক্রান্ত ৫১টি সমঝোতা চুক্তি বা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের এক নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে রয়েছেন চীনের একটি বিনিয়োগকারী গ্রুপ। গতকাল দুদিনের সফরে পাকিস্তান পৌঁছেন শি জিনপিং। চীনা রাষ্ট্রপ্রধানকে রীতিমতো রাজকীয় ধাঁচে গ্রহণ করে পাকিস্তান। চীনা প্রেসিডেন্সিয়াল বিমানটি পাকিস্তানের আকাসসীমায় প্রবেশ করা মাত্র ৮ টি জেএফ-১৭ থান্ডার ফাইটার জেটের একটি বাহিনী জিনপিংকে নিরাপত্তা দিয়ে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নিয়ে যায়। এছাড়াও বিমানবন্দরে সম্মানীয় রাষ্ট্রীয় অতিথিকে ২১ টি তোপধ্বনির মাধ্যমে সামরিক সালাম দেয়া হয়। জিনপিংকে গ্রহণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন নওয়াজ শরীফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ। সফরের প্রথমদিনে দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে ৪৬০০ কোটি ডলার মূল্যের ৫১ টি সমঝোতা চুক্তি বা স্বারক। নয় বছরে এটাই কোন চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম পাকিস্তান সফর। আর তাই পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলোতে চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফরকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেছেন, শি জিনপিংয়ের এ সফর পাকিস্তানে উন্নয়নের নতুন যুগের সূচনা করবে। এ খবর দিয়েছে ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। শি জিনপিংয়ের এ সফরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার প্রতিশ্রুতি আগে থেকেই ছিল। গতকাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত ঐতিহাসিক এক অনুষ্ঠানে উভয় দেশের মধ্যে ৫১ টি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। পাকিস্তান চীন অর্থনৈতিক করিডোরসহ বিস্তৃত খাতে পরিব্যপ্ত বিভিন্ন চুক্তি এতে অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ৮ টি প্রকল্পে উদ্ধোধন করা হয় ওই অনুষ্ঠানেই। এ সময় দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উভয় পক্ষের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়াও ১৬ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে গ্যাস, কয়লা, সৌর শক্তি প্রকল্পগুলোতে উভয় দেশের যৌথ সহযোগিতামূলক উদ্যোগ গৃহীত হবার কথা রয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে নওয়াজ শরীফ বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য পাকিস্তান দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, চীন তাদের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাকিস্তানের জনগন চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। তিনি চীনের ফার্স্ট লেডি পেং লিউয়ানকেও স্বাগত জানান। জিনপিং বলেন, পাক-চীন সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা যৌথ একটি সংস্কৃতি এবং এটা উভয় দেশের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা চীনের অর্থনৈতিক এজেন্ডার একটি অংশ। জিনপিং ইয়েমেনে আটকেপড়া চীনা নাগরিকদের উদ্ধারে সহায়তা করার জন্য পাকিস্তানকে ধন্যবাদ দেন। সস্ত্রীক শি জিনপিংয়ের সফরকারী দলে আরও ছিলেন সিনিয়র মন্ত্রীবর্গ, কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপর্যস্থ ব্যক্তিবর্গ এবং সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা। এছাড়াও ব্যবসায়ী মহলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তো ছিলেনই। বিমানবন্দর থেকে কনস্টিটিউশন এভিনিউ পর্যন্ত পুরো রাস্তা রঙিন ব্যানারে সাজানো হয়। এসব ব্যানারে স্লোগান ছিল ‘পাক-চীন বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক’, ‘পাক-চীন শান্তি ও উন্নয়নের অংশীদার’ ইত্যাদি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেইন চীনা প্রেসিডেন্টের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বিশেষ একটি অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ দেয়া হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০০৬ সালের পর ইসলামাবাদ সফর করা প্রথম চীনা রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং। গত বছর সেপ্টেম্বরে তার পাকিস্তান সফর করার কথা থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা বাতিল করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.