দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি চায় মানুষ by মীর আব্দুল আলীম

দেশের দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি চায় মানুষ। কিন্তু কিভাবে? গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় সবারই উত্তর প্রয়োজন সংলাপ। তবে সংলাপ নিয়ে গোটা দেশ চিৎকার করলেও সরকারপক্ষ থেকে উদ্যোগ না নিলে তা হবে না। এ কারণেই উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। কিন্তু এমন লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না। টিভির টকশোতে সরকার দলের লোকজন গলা ফাটিয়ে বলছেন সংলাপ হবে না। খুনি, জঙ্গিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? এ অবস্থায় কেটে গেছে এক মাস। অবরোধের মধ্যে আবার হরতাল। পিছিয়ে গেছে এসএসসি পরীক্ষা। সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার দেশের বৃহত্তম এ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। দীর্ঘ এক মাসে অবরোধ হরতালে দেশ কতটুকু এগিয়েছে? এর উত্তর সবার জানা। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর দীর্ঘ এক বছর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আন্দোলন করেনি। দেশে কোন সহিংসতাও ছিল না। এক বছর ধরে বিএনপি বলে আসছিল সংলাপের কথা। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা। সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং সরকারের কোন কোন মন্ত্রী ও এমপি জোর গলায় বলতে থাকেন বিএনপির আন্দোলনের মুরদ নেই। গত ৩রা জানুয়ারি সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনকে তার গুলশান অফিসে অবরুদ্ধ করে ফেলে। ৪ঠা জানুয়ারি গোটা দেশ থেকে রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় সরকার নিজেই। আর ৫ই জানুয়ারি খালেদা জিয়া সেই অবরোধের ধারাবাহিকতা ঘোষণা করে, যা এখনও চলছে। এ সময়ে সবচেয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পেট্রলবোমা। বার্ন ইউনিটের আহাজারি গোটা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, গুম, খুন আর দেশে লাশের সারি যখন দীর্ঘ হচ্ছে, তখন নাগরিক সমাজ এগিয়ে আসে। অবশ্য সংলাপের জন্য জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গুরুত্বারোপ করে আসছে। সহিংসতা বন্ধেও তারা তাগিদ দিয়ে আসছে। পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ী সমাজ, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, সেমিনার ও বিবৃতির মাধ্যমে সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংলাপের উদ্যোগ নিতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে সহায়তা করতে চিঠি দেয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকেও। কিন্তু এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাব অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। পেট্রলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যাকারীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। নাগরিক সমাজ সন্ত্রাস, নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতাকে আড়াল করার জন্য এবং একটি গণতান্ত্রিক দলকে তাদের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। সংলাপের ব্যাপারে অনীহা দেখিয়ে সরকার উল্টো চলমান আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নির্দেশ দেয় সংশ্লিষ্টদের। এতে আশাহত দেশবাসী। দেশবাসী সংলাপ চায় শান্তির জন্য। সংলাপ হলে অন্তত দেশবাসী অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে। যে কোন মূল্যেই সংলাপ চায় দেশবাসী।
গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দল থাকবে এবং তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। আর এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে তাদের মধ্যে সহনশীলতা অবশ্যই কাম্য। দেশের কথা, জনগণের কথাও ভাবতে হবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে। ধৈর্য মহৎ গুণ। কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও শুধু নিজেদের অবস্থানে অনড় না থেকে জনগণের কথা ভেবে পরস্পর আলোচনায় বসতে হবে। এ সংলাপ কোথায় হবে, কারা কিভাবে এগিয়ে আসবে- এসব কারণ দেখিয়ে অযথা কালক্ষেপণ মোটেও সমুচীন নয়। উচিত নয় সংলাপের আগেই শর্ত জুড়ে দেয়া। একসঙ্গে সবাই সংলাপে বসুক- এটাই এখন সবাই দেখতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.