দিল্লি বিধানসভায় বিরোধী দল নেই

ভারতের দিল্লি বিধানসভায় এই প্রথমবারের মতো কার্যত কোনো বিরোধী দল থাকছে না। নির্বাচনের একতরফা ফল সে কথাই জানান দিচ্ছে। আম আদমি পার্টি একচেটিয়াভাবে দখলে নিয়েছে বিধানসভার সব আসন। বিজেপি, কংগ্রেসের ওপর জনগণ এতই ক্ষিপ্ত যে তাদের বিরোধী দলের আসনে বসার মতো সমর্থনও দেয়নি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের ২২ গুণের বেশি সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করছেন দুর্নীতিবিরোধী নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বিজয়ী আম আদমি ৬৭ আসনের বিপরীতে বিজেপি আসন পেয়েছে ৩টি। কংগ্রেস ০, অন্যান্য ০। আর কোনো সর্বভারতীয় দলই ডাবল ডিজিটে পৌঁছাতে পারেনি। সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপি এমন হারের সম্মুখীন হয়নি।
দিল্লির ২০১৪ সালের বিধানসভায় যেখানে ৩২ আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি প্রার্থীরা, সেখানে এবার শুধু ৩টি আসনই দখলে রাখতে পেরেছে। আর কংগ্রেস? বলার মতো কোনো কিছুই করতে পারেনি দলটি। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মাকেন, এএপি ছেড়ে যাওয়া শাজিয়া ইলমি, বিন্নি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যা শর্মিষ্ঠার উপস্থিতিতেও নিট ফল শূন্য। কার্যক্ষেত্রেও শূন্যই। কারণ কোনো আসনে জয়ী হতে পারেনি কংগ্রেস। তবে কি পরিবারতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করলো জনতা? ফলাফলেই উত্তরটা পরিষ্কার। সাধ্বী নিরঞ্জনই হোন বা স্মৃতি ইরানি, কি মোহন ভাগবত, বার বার রাজনীতির সঙ্গে ‘ধর্মালোচনা’ যে নতুন ১১ লাখ ভোটারের কেউই শুনতে আগ্রহী নন, সেটাও এই রায়ে স্পষ্ট। সোজা কথায়, পরিবারতন্ত্র ও ধর্মীয় উগ্রতা প্রত্যাখ্যান করেছে দিল্লির মানুষ। একদিকে যেমন দলের হারের দায় নিয়ে কংগ্রেসের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অজয় মাকেন। অন্যদিকে, দিল্লির মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েও পরাজয়ের ভার নিজেই নিয়েছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদি। তিনি নিজেও হেরেছেন। তবে এটা জানাতেও ভোলেননি তিনি, ‘নির্বাচনে আমি হারিনি, হেরেছে বিজেপি’।
স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ
জানালেন কেজরিওয়াল
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ভালো ফলাফলের জন্য স্ত্রীকে জড়িয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এএপির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি ভক্ত-সমর্থকদের সামনেই নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারেননি। ভারতের রাজস্ব খাতে চাকরির সুবাদে পরিচয় হয় সুনিতা এবং কেজরিওয়ালের। দলের সমর্থকদের উদ্দেশে স্ত্রী সম্পর্কে বলেন, ‘সব পরিস্থিতি ওর (সুনিতা) সহায়তা এবং বুদ্ধিদীপ্ত ও যুক্তিযুক্ত মতামত ছাড়া সফলতা অর্জন সম্ভব ছিল না।’ সুনিতা সম্পর্কে কেজরিওয়াল আরও বলেন, ‘সম্মুখে ও (সুনিতা) না এলেও, পেছন থেকে আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছে। সুনিতা পাশে না থাকলে আমার পক্ষে কিছুই অর্জন সম্ভব নয়।’ স্মৃতিচারণ করে কেজরিওয়াল বলেন, ‘হঠাৎ একদিন একাডেমিতে গিয়ে দরজায় নাড়া দিয়ে সুনিতাকে প্রস্তাব করেছিলাম এবং সেও আমাকে হ্যাঁ বলেছিল।’ কেজরিওয়াল ও সুনিতার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এছাড়া কেজরিওয়ালের পরিবারে তার ছোট এক বোন এবং ভাই রয়েছে। আইআরএস কর্মকর্তা হিসেবে সুনিতা সরকারি একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন। ওই ফ্ল্যাটেই মা-বাবাকে নিয়ে থাকেন দিল্লির হবু মুখ্যমন্ত্রী।
আন্দোলনের কথা ভুলে যাবেন
না : আন্না হাজারে
দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সমাজকর্মী আন্না হাজারে। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সহযাত্রী কেজরিওয়ালকে শুভ কামনা জানিয়ে আন্না বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আন্দোলন সংগ্রামকে ভুলে যাবেন না।’ দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েই কেজরিওয়াল মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। আন্না আরও বলেন, ‘আমি ওনাকে অনুরোধ জানাবো আগের মতো ভুল এবার আর করবেন না।’
মহারাষ্ট্রে নিজের গ্রাম রেলেগাঁ সিদ্ধিতে বসে তিনি আরও বলেন, ‘দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিজেপির এই হার আসলে নরেন্দ্র মোদির হার।’ মোদির সমালোচনা করলেও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদিকে আড়াল করলেন আন্না। কিরণও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে আন্না ও কেজরিওয়ালের সঙ্গী ছিলেন। এদিকে এএপির জয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এক টুইটে বলেছেন, ‘ঔদ্ধত্য ও বিদ্বেষমূলক আচরণের যোগ্য জবাব পেল বিজেপি।’

No comments

Powered by Blogger.