আন্তর্জাতিক আইনে সন্ত্রাসবাদীদের বিচার হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৈরাজ্য সৃষ্টি ও পেট্রলবোমা হামলার প্ররোচণাকারীদের সাথে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনে এ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের হোতাদের বিচার হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্মম সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত বোমাবাজ এবং এর নির্দেশদাতা, অর্থের জোগানদার ও পরিকল্পনাকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাসবাদ দমন করব। এ জন্য যতদূর যেতে হয় আমরা যাবো।
তিনি গতকাল বার্ন ইউনিটে পেট্রলবোমা হামলায় আক্রান্তদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বর্বর হত্যাকাণ্ড ও জ্বালাও-পোড়াওকে রাজনীতি হিসেবে অভিহিতকারীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি রাজনীতি নয়। যারা এটিকে রাজনীতি বলছেন তারা ভুল কথা বলছেন। এ হচ্ছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ। এই নির্মম অপরাধীদের নির্মূল করতে যা প্রয়োজন আমরা তা করব।
সুশীলসমাজের একাংশের বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসার দাবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংলাপ কার সাথে? খুনিদের সাথে? সরকার কেন খুনিদের সাথে বসবে?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীকে তার খুনের মিশন বন্ধ করতে হবে। তাকে কেউ মানুষ মারার লাইসেন্স দেয়নি। যদি তাদের সংলাপে বসার সে ধরনের কোনো আগ্রহ থাকে, তবে আগে হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের প্রতি খালেদা জিয়ার কোনো দয়া-মায়া নেই। তা না হলে তিনি এভাবে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মানুষ মারতে পারতেন না। এ হচ্ছে বিকৃত মানসিকতা।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হরতাল বাড়ানোর তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হরতাল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও এসএসসি পরীক্ষায় মারাত্মক বিঘেœর সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয় থেকে এসব নৈরাজ্যের প্ররোচনা দিচ্ছেন। ওই কার্যালয়ে তিনি বিলাসী জীবনযাপন করছেন।
শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের অপশক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সংবাদ পরিবেশন না করতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রচার পরিবেশনা তাদের আরো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে প্ররোচিত করছে।
তিনি ৬৩ জন অগ্নিদগ্ধের হাতে পরিবার সঞ্চয়পত্র তুলে দেন।
তিনি প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে মোট ছয় কোটি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র প্রদান করেন। তিনি তাদের সাথে কথা বলেন ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তিনি পেট্রলবোমা হামলায় আহতদের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, সরকার তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ডা: সামন্তা লাল সেন ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্মজীবী নারীদের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে রাজধানী, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে আরো হোস্টেল নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার তেজগাঁও কার্যালয়ে নারী ও শিশু উন্নয়ন জাতীয় কাউন্সিলের সভায় এ কথা বলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
কাউন্সিলের সদস্য মন্ত্রীবর্গ, প্রতিমন্ত্রীরা, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট সচিবেরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের বিভিন্ন উপার্জনক্ষম প্রকল্পে নিয়োজিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি। এ জন্য তাদের জন্য আরো উপার্জনক্ষম প্রকল্প নিতে হবে।
সভায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের আন্দোলনের নামে নারী ও শিশুদের ওপর নৃশংসতার নিন্দা জানানো হয়।
এতে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি কার্যকরের অগ্রগতি, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের বিষয়, ভিজিডি, ভিজিএফ ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়।

No comments

Powered by Blogger.