সংলাপের উদ্যোক্তাদের বিতর্কিত করার কৌশল- এ পথ সমস্যাকে আরো জটিল করবে

জনগণের সত্যিকারের অংশগ্রহণে সব দল ও মহলের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন এখন চলমান। সময়ের সাথে এ আন্দোলন চরম আকার ধারণ করছে। ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন থেকে এ আন্দোলনের সূত্রপাত। আন্দোলনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সহিংসতা এর অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে। পেট্রলবোমায় মরছে সাধারণ মানুষ। সরকারপক্ষ বলছে, ২০ দলীয় জোট পেট্র্রলবোমা মেরে মানুষ মারছে। ২০ দলীয় জোট বলছে, তাদের আন্দোলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার হীন উ্েদ্দশ্যে সরকারের এজেন্টরাই এ ধরনের নাশকতা চালিয়ে সরকারবিরোধীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। অপর দিকে সময়ের সাথে বাড়ছে ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা। ২৭ দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশ-র‌্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘গাড়িচাপায়’ ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই রাজনৈতিক নেতাকর্মী। এর পাশাপাশি চলমান অবরোধ কর্মসূচির ফলে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায় -বাণিজ্যের ওপর যেমন ব্যাপক চাপ পড়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। অপর দিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি মামলা ও গ্রেফতারের ফলে কারাগারগুলোতে আজ ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। সব মিলিয়ে দেশে আজ এক চরম অস্থিরতা চলছে। এর ফলে চার দিকে রব উঠেছে, এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার। আর এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা। সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায়ই এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব। এর কোনো বিকল্প নেই। এমনই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহল থেকে সরকার ও সরকারবিরোধীদের মধ্যে সংলাপের তাগিদ দেয়া হচ্ছে জোরালোভাবে।
এর মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সঙ্কট নিরসনের জন্য জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছে নাগরিক সমাজের ব্যানারে একটি ফোরাম। এ ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শাসুল হুদা। দেশের চলমান সঙ্কট নিরসন ও সঙ্ঘাতময় অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণে জাতীয় সংলাপের আহ্বানকে কার্যকর করতে নাগরিক প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় এই ফোরাম। এ ছাড়া দেশের ব্যবসায়ী মহলসহ বিভিন্ন মহলও বারবার সরকার ও বিরোধীপক্ষের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানানো হচ্ছে। দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ মানবাধিকার সংগঠন সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছার তাগিদ দিচ্ছে। যারা সংলাপের মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের তাগিদ ও আহ্বান জানিয়েছেন, আমরা তাদের মোবারকবাদ জানাই। কারণ, আমরাও আন্তরিকভাবে চাই সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের পথ এড়িয়ে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে এর সমাধান।
আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ করছি, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংলাপের উদ্যোগ নেয়া সুশীলসমাজের প্রতিনিধিসহ যারাই সংলাপের পক্ষে কথা বলছেন, তাদের বিতর্কিত হিসেবে উপস্থাপনের কৌশল অবলম্বন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নাগরিক সমাজের সংলাপের প্রস্তাবকে অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেনÑ ‘শামসুল হুদা কেন, অন্য কেউ এ উদ্যোগ নিলেও এটি বাস্তবসম্মত হবে না।’ অপর দিকে সরকারি দলের কোনো কোনো নেতা বলছেন, যারা সংলাপের কথা বলেন, তারা এক-এগারোর কুশীলব। এভাবে সংলাপের পক্ষে যারা কথা বলছেন, তাদের নানাভাবে বিতর্কিত করার প্রয়াসই চালিয়ে যাচ্ছে সরকারপক্ষ। আমরা বলতে চাই, এটা সরকারের ভুল পথ অবলম্বন। দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারকে সঙ্ঘাতের পথ থেকে সরে এসে সংলাপের মাধ্যমেই বর্তমান সঙ্কটের সমাধান সম্ভব এবং সেটিই শান্তিপূর্ণ উপায়। অতএব, সরকারকে সংলাপ-সমঝোতার পথ ধরেই হাঁটতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.