ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও ড. শামসুজ্জোহা by এবনে গোলাম সামাদ

ব্রিটিশ শাসনামলে তখনকার বাংলায় একটি বিধি চালু ছিল, বিধিটির সংপ্তি নাম Police Regulation of Bengal, যাকে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হতো PRB হিসেবে। এতে বলা হয়েছিল- Illegal order should not be carried out অর্থাৎ পুলিশকে বলা হয়েছিল, বেআইনি নির্দেশ পালন করা চলবে না। পালন করলে পুলিশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতে পারবে। ব্রিটিশ শাসন কেবলই পুলিশনির্ভর হতে চায়নি। হতে চায়নি স্বৈরতান্ত্রিক। ব্রিটেন চেয়েছে এ দেশের মানুষের সাথে বোঝাপড়া করে শাসন পরিচালনা করতে। কথাগুলো মনে পড়ছে; কারণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক’দিন আগে পুলিশকে বললেন ‘কঠিন ব্যবস্থা নিন, দায়িত্ব আমি নেব’ (প্রথম আলো; ২৯ জানুয়ারি ২০১৫)। তিনি কেন এমন কথা বললেন, আমরা তা জানি না। কেননা পুলিশ যদি বেআইনি নির্দেশ মানে তবে দেশের প্রচলিত আইনানুসারে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা সম্ভব। আমার মনে পড়ছে সাবেক পাকিস্তান আমলের কথা। আইয়ুব খান মতায় এসেছিলেন বন্দুকের নল উঁচু করে। কিন্তু তিনি পুলিশকে কখনো বলেননি, আপনারা কঠিন ব্যবস্থা নিন, দায়িত্ব আমি নেব।’ প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে তাকে ছাড়তে হয়েছিল মতা। আইয়ুব খান যথাসময়ে পরিস্থিতি উপলব্ধি করে সরে গিয়েছিলেন মতা থেকে। কেননা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, জনগণই মতার উৎস। আমার মনে পড়ছে, ১৯৬৯ সালের ফেব্র“য়ারি মাসের উত্তাল গণ-আন্দোলনের স্মৃতি। সে কথা নিয়ে কিছু আলোচনা করা মনে হচ্ছে দেশের আজকের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক।
রাজশাহী মোটামুটি শান্তিপূর্ণ শহর। কিন্তু এখানে ১৯৬৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে গণ-আন্দোলন গ্রহণ করেছিল প্রকট রূপ। তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস যাকে সংেেপ বলা হয় ইপিআর, তাদের গুলিতে মারা যান ড. শামসুজ্জোহা; যা নড়িয়ে দিয়েছিল আইয়ুব শাসনের ভিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মাহবুবর রহমান তার লিখিত বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৪৭-৭১ গ্রন্থে বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক ড. শামসুজ্জোহা পুলিশের বেয়নেট চার্জের ফলে মৃত্যুবরণ করেন (১৮ ফেব্রুয়ারি ৬৯)। ড. জোহার মৃত্যু সংবাদে সারা দেশে এমন ব্যাপক গণবিােভ সৃষ্টি হয় যে, সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেয় (বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৪৭-৭১। সময়, ঢাকা। তৃতীয় সংস্করণ- ২০০৩। পৃষ্ঠা- ২০৫)।’ খ্যাতনামা অধ্যাপকের লেখার মধ্যে একটা বড় রকমের ভুল থেকে গিয়েছে। ড. জোহাকে পুলিশ বেয়নেট চার্জ করেনি। পুলিশ সে দিন উপস্থিত ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে বা অন্য কোথাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কেবলই উপস্থিত ছিল ইপিআর-এর লোকেরা এবং ইপিআর গুলি চালিয়েছিল তাদের নিজেদের খেয়ালখুশিতে নয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নাছিম। খন্দকার মমতাজ বেগম (সাবেক প্রফেসর ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা, রাজশাহী কলেজ), তার প্রবন্ধে বলেছেন যে, ‘ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সমগ্র বাংলাদেশ যখন উত্তাল, ঠিক সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পাক সেনাদের গুলি ও বেয়নেট চার্জে মৃত্যুবরণ করেন ণজন্মা মহান শিক ড. শামসুজ্জোহা। ড. জোহা ছিলেন প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। তিনি জীবন দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তির আন্দোলনকে এগিয়ে দিয়েছিলেন।’ (ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও ড. শামসুজ্জোহা। রাজশাহী উৎসব-২০১১, প্রকাশক: রাজশাহী জেলা সমিতি, ঢাকা। পৃষ্ঠা- ১৭)। লেখিকা জোহার আত্মীয় (চাচাতো বোনের কন্যা)। প্রবন্ধটি পড়ে জোহা সম্পর্কে বহু তথ্য জানা যায়। কিন্তু এখানে বলা দরকার যে, পাক সেনাদের গুলি ও বেয়নেট চার্জে ড. জোহার মৃত্যু ঘটেনি। সে দিন অথবা তার পরে কোনো পাক সেনা আসেনি শহর অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারে কাছে। সে সময় রাজশাহীতে পাক সেনা বাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট ছিল তেরখাদা নামক স্থানে। ঘটনার দিন এবং তারপরেও সেনাবাহিনীর লোকেরা ছিল ক্যান্টনমেন্টের চৌহদ্দির মধ্যে। রাজশাহীতে ইপিআর সেক্টর কমান্ডের দফতর ছিল কাজীহাটা নামক স্থানে। ইপিআর এবং পাক সেনার মধ্যে পার্থক্য গুলিয়ে ফেলা কোনোক্রমেই উচিত নয়। পাক সেনাবাহিনী চলত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। অন্য দিকে ইপিআর ছিল পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এখন মনে হয় অনেক লেখক ইচ্ছা করেই এই দুই সংস্থার মধ্যে পার্থক্যকে এক করে ফেলছেন। এটা যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে বলে মনে হয় না আমাদের কাছে। আর একটি বিষয়ও ল করার মতো, তা হলো ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন হয়েছিল সে সময়ের সারা পাকিস্তানে। এটা কেবলই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কোনো আন্দোলন ছিল না। এর ল্য ছিল আইয়ুব খানের প্রবর্তিত বুনিয়াদি গণতন্ত্রের স্থলে ব্রিটিশ ধাঁচের পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের প্রবর্তন।
জোহার মৃত্যুটা আমার কাছে এখনো হয়ে আছে অনেক পরিমাণে রহস্যঘেরা। জোহা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের রিডার। পদটা তখন ছিল খুবই সম্মানের। রিডারদের পড়াশোনা করতে হতো প্রচুর। তারা সাধারণত সময় পেতেন না অন্য কিছু করার। রসায়নে প্রতিদিনই নতুন কিছু আবিষ্কৃত হচ্ছে। এর সংপ্তি বিবরণী পড়তে হলেও লেগে যায় অনেক সময়। জোহা রিডার হয়েও নিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদ। তিনি স্বেচ্ছায় কেন এই পদটি গ্রহণ করেছিলেন, আমি তা জানি না। সে সময় এই পদে তাদেরই নিযুক্তি দেয়া হতো, যাদের মনে করা হতো, দেশের সরকারের জন্য নিরাপদ। অর্থাৎ যারা কোনোভাবেই সরকার বা বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নন। জোহা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না; যদিও এখন অনেকে দাবি করতে চান যে, তিনি ছিলেন একজন বামঘরানার লোক। এটা আদৌ সত্য নয়। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন প্রফেসর শামসউল হক। তিনি নিজে রাজনীতি না করলেও রাজনীতির ব্যাপারে ছিলেন খুবই ওয়াকেবহাল। তিনি বেছে নিয়েছিলেন জোহাকে। আইয়ুবের পতনের পর, সাবেক পাকিস্তানে কিছু দিনের জন্য তিনি শিামন্ত্রী হন। পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় তিনি হন স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এমন একজন ব্যক্তি বাছাই করেছিলেন ড. শামসুজ্জোহাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদ গ্রহণ করতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুজব উঠেছিল যে, জোহা নাকি বামপন্থী ছাত্রনেতাদের সম্বন্ধে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে ‘নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করেন’। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তখন ছিল বিশেষভাবে বাম আন্দোলনের ঘাঁটি। সরকার থেকে মনে করা হয়েছিল, জোহাকে প্রক্টর করলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিকদের বামপ্রবণতা কিছুটা কমানো যাবে। জোহা নিহত হন ইপিআরের ছোড়া গুলিতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দণি দিক দিয়ে গিয়েছে নাটোর-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক। এর দেিণ সে সময় ছিল একটা বড় নয়ানজুলি। তার ওপারে ছিল উলুখড়ের বন। বনের মধ্যে অবস্থিত ছিল রাজশাহী সরকারি বেতার কেন্দ্রের ট্রান্সমিটার ভবন। গুজব উঠেছিল, ছাত্ররা নাকি এই উলুবনে আগুন ধরাতে পারে। উলুবন থেকে প্রতি বছর উলুখড় বিক্রি করা হতো। অনেক উলুখড় কেটে শুকিয়ে খড় করা হয়েছিল। ছাত্ররা চেয়েছিল গাদা করে রাখা শুকনো উলুখড়ে আগুন দিতে। ছাত্রদের মধ্যে কিছু ছিল খুবই উগ্র বাম। তারা মনে করত, দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে হবে। আর অরাজকতা এনে দেবে সমাজ বিপ্লবের সুযোগ। তাদের বলা চলে Situationists। তাই গ্রহণ করা হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। এসেছিল ইপিআর বাহিনীর লোক। তবে এই সাথে ছিলেন স্থানীয় প্রশাসনেরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। যেমন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নাসিম। ইপিআর প্রথমে গুলি চালিয়েছিল মিছিলকারী ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখানোর জন্য। ছাত্ররা যাতে মিছিল করে বড় রকমের কোনো হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য জোহা ছাড়া আরো অনেক শিক ছিলেন নাটোর-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের ওপরে। কিন্তু পরে তাদের মনে হয়, ইপিআর গুলি চালাতে পারে। তাদের অনেকেই চলে আসেন ক্যাম্পাসের মধ্যে। তিনজন শিক আশ্রয় নেন সড়কের দেিণ নয়ানজুলির মধ্যে। ছাত্রছাত্রীরা ঢুকে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে। কিন্তু জোহা দাঁড়িয়ে থাকেন সড়কের ওপর। শোনা যায় তাকে ছাত্রনেতা ভেবে গুলি করেন ইপিআরের একজন ক্যাপ্টেন। তার ওপর নির্দেশ ছিল পরিস্থিতি জটিল হলে গুলি চালানোর। আমি অকুস্থলে ছিলাম না। তাই ঠিক কী ঘটেছিল, জানি না। পরে অনেক কথাই শুনেছিলাম বিভিন্ন অধ্যাপকের মুখ থেকে। জোহা ভাবতে পারেননি, তাকে কেউ গুলি করতে পারে। ভাইস চ্যান্সেলর শামসউল হক নাকি তাকে সড়কের ওপর থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জোহার গায়ে গুলি লাগে সকাল প্রায় ১০টা নাগাদ। ইপিআর বিশেষ পিকআপ ভ্যানে করে আহত জোহাকে নিয়ে যায় দুই মাইল দূরে শহরে। এরপরে নিয়ে যায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে; যেখানে অপারেশন থিয়েটারে তার মৃত্যু হয়। ল করার বিষয়, এই দিন অর্থাৎ ১৮ ফেব্র“য়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো অধ্যাপকের গায়ে গুলি লাগেনি। গুলিতে আহত হয়নি মিছিলকারী কোনো ছাত্রছাত্রী। তাই জোহার মৃত্যু অনেকের কাছে এখনো হয়ে আছে রহস্যময়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে রাজশাহী শহরে ১৮ ফেব্র“য়ারি আন্দোলন হয়েছিল অনেক জোরালোভাবে। শহরের সোনাদীঘির মোড়ে ছাত্রনেতা নুরুল ইসলাম খোকা নিহত হন ইপিআরের গুলিতে। গুলি এসে লেগেছিল তার মাথায়। ইনি ভাসানী ন্যাপের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং পড়তেন রাজশাহী সিটি কলেজে। আর একজন ছাত্র গুরুতরভাবে আহত হয় ইপিআরের ছোড়া গুলিতে। গুলি এসে লেগেছিল তার পা ও বুকে। তার দেহের নিচের অংশ অসাড় হয়ে যায়। হাসপাতালে ছয় মাস ভুগে সে মারা যায়। এ ছাত্রের নাম আবদুস সাত্তার। এর বাড়ি ছিল শহরের পাঠানপাড়া মহল্লায়। সে ছিল রাজশাহী সরকারি মাদরাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। রাজশাহীতে ইতঃপূর্বে গুলিতে কোনো ছাত্র মারা যাওয়ার কথা আমার জানা নেই। রাজশাহী শহর ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। এই শহর ছিল অনেকটা ‘আইয়ুব ভক্ত’। কেননা আইয়ুব আমলে রাজশাহী শহরের হতে পেরেছিল প্রভূত উন্নতি। এ ছাড়া আইয়ুব মুসলিম পারিবারিক আইনের েেত্র যে পরিবর্তন আনেন, তা হতে পেরেছিল এই শহরের বার সমিতির কাছে বিশেষ প্রশংসিত। ইতঃপূর্বে আইয়ুব একবার এসেছিলেন রাজশাহী শহরে। তিনি পেয়েছিলেন নাগরিক সংবর্ধনা। কেবল একজন ছাত্র তার গাড়ি ল্য করে ছুড়েছিল একটা আধভাঙা ইট। এটা ছিল বিশেষ ব্যতিক্রম। যে ইট ছুড়েছিল সে তখন ছিল রাজশাহী কলেজের ছাত্র। তার ছিল বাম প্রণোদনা। সে পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েছিল এবং ঘটনাচক্রে হয়েছিল আমার ছাত্রদের একজন। আমার ছাত্ররা আমাকে অনেক কথাই বলত। আর ভাবত, হয়তো আমার লেখায় পেতে পারবে তাদের দেয়া তথ্য যথাযথ স্থান। আমি এই ছাত্রটির নাম ভুলে গিয়েছি। তাই নামটি দিতে পারলাম না।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র আন্দোলন প্রধানত পরিচালিত হচ্ছিল রাশেদ খান মেনন (বর্তমানে আলহাজ) ও বেগম মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে। তারা দুজনেই এখন মন্ত্রী। তাদের চিন্তাচেতনায় এসেছে বিরাট পরিবর্তন। তারা এখন বলছেন, ছাত্রদের রাজনীতি না করে লেখাপড়া করতে, জ্ঞানচর্চা করতে। কিন্তু তখন তারা দুজনেই ছিলেন বিশেষভাবে ‘জঙ্গি’, আর এক কথায় লড়াকু; ‘ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ মনোভাবাপন্ন।
অনেক কিছুই ঘটতে দেখলাম আমার এই সুদীর্ঘ জীবনে। দেখলাম বিরাট ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে। দেখলাম পাকিস্তান সৃষ্টি হতে। দেখলাম সাবেক পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতে। এসব ঘটনা থেকে আমার কাছে এই সত্য বিশেষভাবে ফুটে উঠতে চাচ্ছে যে, কেবল বন্দুকের জোরে মতায় থাকা যায় না। প্রয়োজন হয় জনসমর্থনের। রাজনীতির অন্যতম গোড়ার কথাই হলো, কে আমাকে শাসন করবেন, আর কেনই বা আমি মেনে নেব তার এই শাসন করাকে। এর শাসন মতার যুক্তি কোথায়? জঁ জাক রুশোর (১৭১২-১৭৭৮) ‘সামাজিক চুক্তি’ মতবাদকে এত দিন পরও আমার কাছে মনে হয়, যথেষ্ট সত্য। রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি জনগণের সার্বভৌমত্বকে। জনগণের উত্তাল আন্দোলনের ফলে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুবকে ছাড়তে হয়েছিল মতা।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.