বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ- ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে এখন কারো কোনো ভাবনা নেই। অথচ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের ইতিবাচক অঙ্গীকার রয়েছে। দলের নেতৃবৃন্দ অসংখ্যবার জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার্থে তারা প্রশাসনকে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করবেন না। পৃথক সচিবালয় গঠনের ব্যাপারেও বড় দলগুলোর অঙ্গীকার রয়েছে। বাস্তবে গত এক মাসে শতাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বদলি ও পদোন্নতির আদেশ দিয়েছে সরকার অর্থাৎ নির্বাহী বিভাগ। এটি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চলে আসছে। নিয়ম অনুযায়ী, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবে নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারের প্রাধান্যই লক্ষ করা গেল।
কৈফিয়ত দেয়া হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে নিম্ন আদালতের বিচারকদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে যে জনবল থাকার কথা, তা না থাকায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাই সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় যত দিন পর্যন্ত না হবে, তত দিন নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব যাবে না। তাই বর্তমানে বিচার বিভাগ স্বাধীন, এটা বলারও কোনো যুক্তি নেই।  বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকেও বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে অথচ পরিস্থিতি এখন ঠিক বিপরীত। নিম্নœ আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত একই অবস্থা চলছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির কথা উল্লেখ করার বিষয়টি এখন শুধুই কাগুজে বিষয়। কার্যত নির্বাহী বিভাগের অধীনে সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে। একক এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের এমন কথার কোনো প্রতিফলন নেই।
বিচার বিভাগ পৃথক করার বিষয়টি এখন কার্যত অর্থহীন। এর ফলে বিচার-আচারে রাজনীতিকায়নই শুধু নিশ্চিত হয়নি, জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারেও শঙ্কিত। রাজনৈতিক মামলাগুলো হচ্ছে নির্বাহী বিভাগের আদেশে। নির্বাহী বিভাগ আদেশও দিচ্ছে আর নিয়ন্ত্রণও করছে। তাই ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ। এ অবস্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। উচ্চ আদালতই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা ও ন্যায়ানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.