সরকার নামলেই অবরোধ উঠবে

সরকার পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। একইসঙ্গে দেশব্যাপী চলমান বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার না মুক্ত- তা সরকারের কাছে স্পষ্ট করার দাবি জানান তিনি। গতকাল বিকালে বনানীর নিজ বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। হাফিজ উদ্দিন আহেমদ বলেন, সরকার দেশকে অন্ধকারে গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। আমরা এখনও বলছি, চলমান সংকটের অবসান করতে হলে সরকারকে পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। তাহলে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে সংলাপ হতে পারে। দেশে শান্তি ফিরে আসবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের নেতারা সাক্ষাৎ করতে পারছেন না অভিযোগ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন,  বেগম জিয়ার কার্যালয়ের গেইটের সামনে পুলিশ রেজিস্টার বই খোলা হয়েছে। কোন নেতাকর্মীর তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। একদিকে সংসদে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, খালেদা জিয়া মুক্ত মানুষ। অন্যদিকে কাউকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে জানিয়ে দিতে চাই, কেন বেগম জিয়ার টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন? কেন ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে? তিনি গ্রেপ্তার না মুক্ত- এ বিষয়টি সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে। পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে সহিংসতা সৃষ্টির জন্য সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, আমরা সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছি। বার্ন ইউনিটে পেট্রল বোমায় আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা এহেন ঘটনায় মর্মাহত ও সমবেদনা জানিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, তারা পেট্রল বোমা চেনেন না। ১৯৯৬ সালে শেরাটন হোটেলের কাছে তারাই বাসে গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। দুই বছরে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। তাদের সহিংসতার কারণে ওই সময়ে এসএসসি পরীক্ষা তিন মাস পেছাতে হয়েছিল। রোজার দিনেও তারা হরতাল করেছে। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি বোমাবাজের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। সরকার  বিরোধী দলের ওপর দোষারোপ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আজকের পত্রিকায় আছে রূপগঞ্জে বোমা বানাতে গিয়ে সরকারি দলের লোকজন আহত হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ করে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশি হেফাজতে গত এক মাসে ৩৩ জন হত্যা হয়েছে। ৭শ’ মামলায় ১৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্বৃত্তের সহিংসতায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসবের দায় সরকারকেই নিতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার দেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে। বার্ন ইউনিটে আহতদের দুর্দশা নিয়ে রাজনীতি না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করার সমালোচনা করে তিনি বলেন,  যেখানে গত এক মাস ধরে গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ  দেশনেত্রী অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। তার সঙ্গে নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করতে পারছে না। গুলশানের কার্যালয়ে টেলিফোন, ফ্যাক্স বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে কিভাবে বেগম জিয়া হুকুম দিচ্ছে? তাকে হুকুমের আসামি কিভাবে করা হয়। হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। মিড়িয়ার ওপর কড়াকড়ি সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়েছে। মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে বেগম জিয়াকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। সরকারকে বলবো, এখনও সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়ুন। দেশকে আর  নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবেন না। বিরোধী দলের ওপর মিথ্যা মামলা-নির্যাতন, হুমকি-ধমকি বন্ধ করুন।

No comments

Powered by Blogger.