নির্বিঘ্নে প্রথম দিনের পরীক্ষা- দেশবাসীর প্রত্যাশা উপলব্ধি করুন

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেই গতকাল শুক্রবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারা স্বস্তির খবর। প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী এবং অগণিত শিক্ষক ও অভিভাবক চরম দুশ্চিন্তা-উৎকণ্ঠা নিয়েই তিন হাজারের বেশি পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু সর্বত্র পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। এমনকি সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় অবরোধের পাশাপাশি হরতাল ডাকার পরও পরীক্ষা গ্রহণে কোনো সমস্যা হয়নি। প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে শত শত উদ্বিগ্ন অভিভাবকের ভিড় ছিল। অকস্মাৎ কোনো দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রোল বোমা কিংবা ককটেলে প্রিয়তম সন্তানের মুখ ঝলসে যাবে না তো, ভণ্ডুল হয়ে যাবে না তো সব আয়োজন_ এমন শঙ্কায় কেটেছে তাদের সময়। অবশেষে যাবতীয় দুর্ভাবনার অবসান ঘটেছে। প্রিয় সন্তানের হাত ধরে নিজ নিজ ঘরে ফিরতে পেরেছেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষা চলাকালে হরতাল-অবরোধসহ পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হয় এমন কোনো কর্মসূচি না দিতে ২০ দলীয় জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত। যারা টানা ৩২ দিন ধরে সহিংস অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি পরিচালনা করছেন, তারা প্রথম দিনের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সামনে ভিড় জমানো বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রত্যাশা কী, সেটা নিশ্চয়ই বঝুতে পারছেন। তাদের একটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে_ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যেন পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এত বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি ভণ্ডুল হয়ে যাক_ সেটা কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ চাইতে পারে না। যে কোনো আন্দোলনে সফলতার মূলকথা হচ্ছে জনসম্পৃক্ততা। ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে সেটা একেবারেই অনুপস্থিত। বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতারা বলেছেন, 'জীবনে এমন কিছু অপ্রিয় কাজ আছে যা সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য করতে হয়।' তাদের বিবেচনায় পরীক্ষা ভণ্ডুল করা একটি 'অপ্রিয় কাজ'। একটি ছাত্র সংগঠনের এ ধরনের বক্তব্য আমাদের বিস্মিত না করে পারে না। আমরা আশা করব, ছাত্রসমাজের স্বার্থে ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সব ধরনের সহায়তা প্রদানে যত্নবান হবে। গত কিছুদিন ধরে দেশের নানা স্থানে যে ধরনের সহিংসতা চলছে তা কেউই সমর্থন করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বাসে অগি্নসংযোগ এবং ট্রেন লাইনচ্যুত করার মতো বেপরোয়া সহিংস কর্মকাণ্ডের সাহায্যে নিরীহ জনগণকে হতাহত করার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সহিংস পন্থা অনুসরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেশেও বিভিন্ন মহল থেকে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি উঠছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা আগামীকাল রোববার সহিংসতার অবসানে দেশের সর্বত্র পতাকা হাতে ১৫ মিনিটের জন্য রাজপথে অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আমরা আশা করব, 'আন্দোলনকারী' দলগুলো দেশ-বিদেশের সব মহলের প্রত্যাশা উপলব্ধি করবে। যে কোনো দলের রাজনৈতিক দাবি থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা আদায়ে অব্যাহত সহিংসতা চালিয়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এ ব্যাপারে সরকারও প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে_ এটাই দেশবাসীর দাবি। মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানে সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এর প্রতি সমর্থন রয়েছে সবার। সরকারের কাছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং জনজীবন স্বাভাবিক করার জন্যও এ ধরনের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের প্রত্যাশা সবার।

No comments

Powered by Blogger.