ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক, সংলাপে যেতে নেতাদের আপত্তি

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলার পক্ষে আওয়ামী লীগ। তাই এই মুহুর্তে বিরোধী জোটের সঙ্গে সংলাপে যেতে চায় না ক্ষমতাসীন দল। গতকাল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নেতারা এমন মত দেন। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সংলাপের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। হরতাল-অবরোধে সহিংসতার কড়া সমালোচনা করে তারা বলেছেন, যারা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করে তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আইন বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক বক্তব্য রাখেন। বৈঠক সূত্র জানায়, নেতারা তাদের বক্তব্যে সংলাপের প্রসঙ্গ এনে বলেন, বিরোধী জোট আন্দোলনের নামে মানুষ মারছে। গাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার মানে হলো সন্ত্রাসকে অনুমোদন দেয়া। এমন অবস্থায় তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। নেতাদের বক্তব্যে দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও সায় দিয়ে সংলাপের বিষয়ে তাদের নেতিবাচক মনোভাব তুলে ধরেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণও আমাদের সঙ্গে রয়েছে। কাজেই সন্ত্রাসীদের পরাজয় হবেই। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের আরো বেশি সচেতন ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান। সারাদেশে দলের তৃণমূল সম্মেলন দ্রুত সম্পন্নের তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসের আরেক রুপ হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এদের মোকাবেলায় দলের নেতাকর্মীদের আরও বেশি সচেতন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন প্রসঙ্গটিও আসে। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার বিষয়টিও আইনজীবী নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীকে। তবে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী। শুধু বলেন, দেশ ও দলের স্বার্থে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে হবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে চলমান মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পরিস্থিতি অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পদক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হরতাল-অবরোধে যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারে, কীভাবে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসব? সংলাপে তাদের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলব? তাদের সঙ্গে মানুষ পুড়িয়ে মারা নিয়ে কী আলোচনা করব? সৈয়দ আশরাফ বলেন, পেট্রলবোমা ও আগুনে পুড়ে যারা মারা গেছে, তারা এর আগে কোন না কোন নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দিয়েছে। অথচ তাদের তারা পুড়িয়ে মারছে। আসলে বিএনপি একাত্তরের মতো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। সৈয়দ আশরাফ বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে আলাদা নয়। সিরিয়া বা লেবাননে কি হচ্ছে তা সবাই জানে। খালেদা জিয়ার আন্দোলনের নামে এ সহিংসতার লক্ষ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচন নয়, তিনি বাংলাদেশে লেবানন ও সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কী জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে সমঝোতা করছে? তালেবানের সঙ্গে সংলাপ করছে? তাই বাংলাদেশেও খুনী-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন সংলাপের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আরও শক্ত হবে। বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এদিকে আসন্ন ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ই মার্চ, ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয় বৈঠকে। 
জানমালের নিরাপত্তায় যা করার তাই করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় যা করার দরকার তাই করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিরোধী জোট যে কার্যক্রম চলাচ্ছে তার সঙ্গে আইএস’র কোন তফাৎ নেই। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে হরতাল ও অবরোধ না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, অন্তত পরীক্ষার সময় যেন হরতাল অবরোধ না দেয়া হয়। গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। সঙ্কট নিরসনে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। মানুষের জান-মাল রক্ষার জন্য যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তাই করা হবে। এজন্য দেশবাসীর সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন।
হরতাল-অবরোধ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করবেন না। উনি একটু ক্ষান্ত দিক। তারপর আবার শুরু করুক।
চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বোমবাজদের বিরুদ্ধে প্রত্যেকটা মানুষকে বলিষ্ঠভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। কারণ এরা দেশের মানুষের শান্তি চায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশকে জল্লাদখানা বানানোর চেষ্টা করছে। আর কত লাশ দেখে, কত রক্ত দেখে শান্ত হবেন উনি? আর কত রক্ত চান উনি সেটাও আমার প্রশ্ন। পেট্রলবোমা তৈরির টাকা তারা কোথায় পাচ্ছে? মানুষ পুড়িয়ে মেরে কি পাচ্ছেন তারা? কি বীভৎস ঘটনা সব ঘটাচ্ছে? কিসের আশায়? রেললাইন উপড়ে ফেলছেন, ট্রেনের ফিসপ্লেট তুলে ফেলছেন, বাসে আগুন দিচ্ছেন।
সংলাপের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই টিভি টকশোতে আমাকে সংলাপের কথা বলেন। পুত্রশোক যাকে টলাতে পারলো না, আমি তাকে সান্ত্ব্ততা দিয়ে দেখতে গেলাম, আমাকে ঢুকতে পর্যন্ত দেয়া হলো না। নির্বাচনের আগে আমি তাকে ফোন করলাম। আমার সাথে কি কথা কি ব্যবহার করা হলো, কি বলা হলো দেশবাসী তা শুনেছেন। যারা এতো কথা বলেন, তাদের সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার করলে, তারা কী কথা বলতেন?
তিনি বলেন, তার ছেলে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়ে মারা গেছে। আর যাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে তাদের মায়েদের কি অবস্থা সেটা কী তিনি উপলব্ধি করতে পারেন? একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে ধ্বংসের খেলায় লিপ্ত হয়েছেন বিএনপি নেত্রী। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.