অবৈধভাবে লোক পাঠিয়ে কোটিপতি ২৬ হুন্ডি ব্যবসায়ী by মহিউদ্দীন জুয়েল

বিদেশে অবৈধপথে লোক পাঠিয়ে কোটিপতি হয়ে গেছে দেশের শীর্ষ ২৬ হুন্ডি ব্যবসায়ী। গত ৫ বছরে এসব ব্যক্তির অনেকের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি। গোপনে মোটা অঙ্কের সুদের মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা লোক পাঠাতেন সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে। এসব ব্যবসায়ীকে ধরতে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, তালিকায় উল্লেখ করা শীর্ষ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যে  টেকনাফের জালিয়াপাড়ায় জাফর আলম ওরফে টিপি জাফর, একই এলাকার জাফর সাদেক, শাহপরীর দ্বীপের হেলাল উদ্দিন, ফাইসাল, আবদুল্লাহ, মো. জামাল, সাবরাংয়ের হারুন, আবদুস শুক্কুর, টেকনাফ  পৌরসভার ইসলাম, হামিদ  হোসেন, সাবরাংয়ের মফিজুর রহমান, টেকনাফের আবু বক্কর, নাইট্যংপাড়ার আবু বক্কর, টেকনাফ পৌরসভার নুরুল আবসার, ঢাকার গুলশানের জুবাইর হোসেন, চট্টগ্রামের খুলশীর পিচ্চি আনোয়ার, ইসলাম, কক্সবাজারের আবদুল্লাহকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। মূলত এরা খুবই দুর্ধর্ষ শক্তিশালী বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। তবে অভিযুক্তদের মধ্যে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার মং মং সেন কারাগারে গ্রেপ্তার রয়েছে। সেখানে বসেই সে আবার নেতৃত্ব দিচ্ছে বিদেশে মানবপাচারের। অন্যদিকে ইসলাম নামের যে ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে তিনি টেকনাফ পৌরসভার সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মুজিবুর রহমানের প্রধান সহযোগী বলে লেখা হয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এতোটাই শক্তিশালী যে, তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ফেলে। বিভিন্ন ঘটনায় তাদের নাম উঠে আসলেও তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। গত ৫ বছরে এসব ব্যক্তির মাধ্যমে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে পাচার হতে গিয়ে আটক হয়েছে ২ হাজার ৭৩৩ জন। এসব ঘটনায় ২৪২টি মামলা হলেও বারবারই তারা ছিলো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নির্দেশ অনুযায়ী  দেশের ৪১টি জেলা থেকে  লোক সংগ্রহ করে তাদের দালালরা। আর সমুদ্রপথে ৬০টি পয়েন্টে ট্রলারে পাচারের জন্য নিয়োজিত থাকে তাদের একাধিক সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট মালয়েশিয়া বসবাসকারী বাংলাদেশী, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে থাকা কিছু অসৎ লোকজনের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে হুন্ডি ব্যবসার নেটওয়ার্ক। এরা কৌশল হিসেবে লোক পাচার করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অদূরে ৯০ ডিগ্রি বামে। স্থানীয় সূত্র জানায়, হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ায় তাদের সম্পদের পাশাপাশি পরিবর্তন হয়েছে বাড়িঘরের চিত্রও। প্রতিটি ব্যক্তি কয়েক তলা ভবনের মালিক। নামে-বেনামে, স্ত্রীর নামে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের একাধিক জমি রয়েছে। রয়েছে কোটি টাকার গাড়িও। টেকনাফ পৌরসভার সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মুজিবুর রহমানের প্রধান সহযোগী ইসলাম হুন্ডি ব্যবসা করে কক্সবাজারে বেশ প্রতিষ্ঠিত। অথচ এক সময় তার আর্থিক অবস্থা ছিলো খুবই নাজুক। এসব ব্যক্তির প্রত্যেকের ব্যাংক একাউন্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধভাবে হুন্ডি ব্যবসা করে তারা এখন কোটিপতি। যেভাবে টাকা জমা হয়েছে তা খুবই অস্বাভাবিক।  এবিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা তৈরি করে আমরা গত ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকায় হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়েছি। সেখানে ২৬ জনের নাম রয়েছে। এসব ব্যক্তিরা কয়েক কোটি টাকার মালিক। অবৈধভাবে লোক পাঠিয়ে এরা মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। তিনি আরো বলেন, দুই একজন ধরা পড়ে এখন কারাগারে। বাকিদের বেশির ভাগই পলাতক। আমরা তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শুনেছি দেশের বাইরেও তাদের পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে তারা হুন্ডি ব্যবসা করে। বিষয়টি পুলিশের হেডকোয়ার্টারকে জানানো হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.