উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অবজ্ঞা

ফ্রান্সে তিন দিনের সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ জন নিহত হওয়ার পর সংহতি প্রকাশে প্যারিসে এক ঐতিহাসিক র‌্যালিতে যোগ দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে বলা হয়েছে, প্রায় ৪০টি দেশের নেতারা সমাবেশে যোগ দেন। উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অবজ্ঞার অংশ হিসেবে এদিনের সমাবেশে উপস্থিতির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে খবরে বলা হয়েছে। সমাবেশের আগে ফ্রান্সের প্রসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ বলেন, ‘আজ বিশ্বের রাজধানী প্যারিস। সমগ্র দেশ আজ জেগে উঠেছে। সমাবেশ উপলক্ষে রাজধানী প্যারিসে নিরাপত্তা ব্যাপক জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় ২ হাজার পুলিশ ও এক হাজার ৩৫০ সেনা সদস্য। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নাদ কাজেনুভা বলেন, ‘সামনের সপ্তাহগুলোতেও ফ্রান্স সতর্ক থাকবে।’ সমাবেশের আগে তিনি ইউরোপের দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জঙ্গিদের হুমকি নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, প্যারিসে রোববারের সমাবেশকে সামনে রেখে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
উঁচু স্থাগুলোতে স্নাইপার রাখা হয়েছে। রোববারের সমাবেশে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা উপস্থিত হন। সমাবেশে আগতরা স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় মিছিল সহকারে প্যালেস দ্য লা রিপাবলিক ত্যাগ করেন। গত সপ্তাহে হামলায় নিহতদের আত্মীয়স্বজনরা মিছিলের নেতৃত্ব দেন। সমাবেশের আগে ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ। প্যারিসের পূর্বাঞ্চলে ইহুদিদের একটি সুপার মার্কেটে এক সন্ত্রাসীর হামলায় চারজন নিহত হয়। এর একদিন আগে বন্দুকধারী আমেদি কাউলিবালির গুলিতে এক নারী পুলিশ সদস্য নিহত হন। এছাড়া গত বুধবার শার্লি হেবদো পত্রিকার সদর দফতরে কালাশনিকভ রাইফেল ও রকেট লঞ্চার নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এতে পত্রিকাটির অন্যতম প্রধান সম্পাদক স্তেফান শার্বনেয়ার, তিন ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী উয়োলিন্স্কি, তিনু ও কাবু এবং পুলিশ সদস্যসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। হামলাকারী সন্দেহভাজন দুই ভাই পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে যোগ দেননি। মার্কিন কর্মকর্তারা এ কথা জানান। ফ্রান্সে ইসলামপন্থীদের হামলায় নিহত ১৭ জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রোববার এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের প্রায় ৪০ জন নেতা এতে অংশ নেন। সমাবেশে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি লোক অংশ নেন।
ইসরাইল তোমাদের নিজের বাড়ি-নেতানিয়াহু : ইসরাইলকে ফ্রান্সের ইহুদিদের নিজেদের বাড়ি বলে অভিহিত করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সব ইহুদিকে ইসরাইলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল তোমাদের নিজের বাড়ি।’ ফ্রান্সের প্যারিসে একটি শপিং সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলায় চার ইহুদি নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় শনিবার তিনি এ আহ্বান জানান। নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরাইল আসতে চায় এমন প্রতিটি ইহুদিকেই আমরা খোলা হৃদয়ে স্বাগত জানাই। তাদের আমাদের খোলা অস্ত্র দিয়ে নিরাপত্তা দেব।’ তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সসহ ইউরোপের সব দেশের ইহুদিদের জন্য অভিবাসী সুবিধা বাড়াবে ইসরাইল।’ ফ্রান্সের সব ইহুদি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ওলান্দকে আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। হাফিংটন পোস্ট। প্যারিসের মুসলিম হিরো : ফ্রান্সের প্যারিসে তিন দিনের মধ্যে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যখন মুসলিমদের দিকে তীর তাক করা হচ্ছে তখন প্যারিসবাসীর কাছে হিরো হয়ে উঠলেন এক মুসলিম যুবক। ওই যুবকের বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী আচরণেই শুক্রবার রক্ষা পেয়েছে কয়েক বন্দির জীবন। অন্তত ছয়জনকে নিরাপদ অবস্থানে রেখে পণ্য পরিবহনকারী লিফট দিয়ে মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসেন বাথিলি।
বাইরে এসেই দ্রুত পুলিশকে ভেতরের পরিস্থিতি জানান তিনি। মূলত তার কর্মতৎপরতায় ওই বন্দিদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার প্যারিসের পোর্তে দে ভিনসেনেসে ইহুদিদের খাদ্যপণ্য বিক্রয়কারী হাইপার ক্যাচার সুপার মার্কেটে হামলা চালায় এক ইসলামপন্থী বন্দুকধারী। ওই সময় সুপার মার্কেটটির ভেতরে কর্মরত ছিলেন মালি থেকে আসা ২৪ বছর বয়সী লাসানা বাথিলি। বন্দুকধারী মার্কেটের ভেতরে ঢুকে ক্রেতাদের বন্দি করে ফেলে। এ সময় কয়েক বন্দিকে দৌড়ে আসতে দেখে যে কক্ষে কাজ করছিলেন তার দরজা খুলে দেন বাথিলি। সঙ্গে সঙ্গে কক্ষের বাতি ও খাদ্যপণ্য রাখা ফ্রিজের সুইচ অফ করে দেন তিনি। ফ্রিজের ভেতর ঠাণ্ডা কমে এলে সেখানে ক্রেতাদের অবস্থান করতে বলেন বাথিলি। এ ঘটনায় চার বন্দি ও হামলাকারীসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৫ জনকে। এ ঘটনার পর ফ্রান্সের বিএফএমটিভি’তে সাক্ষাৎকার দেন বাথিলি। ওই সাক্ষাৎকার এবং ফেসবুক ও টুইটারে বার্তা পোস্টের পর পরই প্যারিসবাসীর কাছে হিরোতে পরিণত হন তিনি। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.