৮৫ হাজার বইয়ের পাঠক ১৯ এমপি by কাজী সোহাগ

দেশী-বিদেশী বই আছে ৮৫ হাজার। আছে সুসজ্জিত লাইব্রেরি কক্ষ। প্রতি মাসে লাখ টাকা ব্যয়ে চলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। উচ্চ ভল্টেজের লাইট আছে শতাধিক। সেবা দিচ্ছেন প্রায় ২০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু নেই পাঠক। বই পড়ার সব উপকরণ থাকলেও যাদের জন্য এ সংগ্রহশালা তাদের উপস্থিতি নেই। এ চিত্র সংসদ সচিবালয় লাইব্রেরির। কয়েক মাসে লাইব্রেরি কক্ষে ঢুঁ দিয়েছেন ১৯ জন এমপি। গত এক সপ্তাহে মাত্র দুজন এমপি লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন, স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরায়জী ও কাজী রোজী।  লাইব্রেরির সার্বিক উন্নয়নে আছে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের কমিটি। প্রতি মাসে কমিটি অন্তত একবার বৈঠক করে নানা সুপারিশ ও পরামর্শ দেন। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাইব্রেরি সরজমিনে পরিদর্শনের উদ্যোগ নেন। মজার বিষয় ১০ সদস্যর কমিটির মাত্র দুজন সদস্য ডেপুটি স্পিকার ও কাজী রোজী নিয়মিত লাইব্রেরি ব্যবহার করেন। বাকি ৮ এমপি নিজেরাই লাইব্রেরিতে যান না। ওই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন, সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, আবুল কালাম আজাদ, বজলুল হক হারুন, আবদুল মান্নান, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, সাইমুম সারোয়ার কামাল, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম। লাইব্রেরির প্রতি এমপিদের অনাগ্রহের জন্য বই না পড়ার অভ্যাসকে দায়ী করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। লাইব্রেরি কক্ষের তথ্য অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, মন্ত্রী হওয়ার আগে নিয়মিত লাইব্রেরি ব্যবহার করতেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। মন্ত্রী হওয়ার পর একদিনের জন্যও লাইব্রেরি ব্যবহার করেননি। এদিকে নিয়মিত লাইব্রেরি ব্যবহারকারী ১৯ এমপির তালিকায় আছেন- সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, রুস্তম আলী ফরায়জী, পঞ্চানন বিশ্বাস, আবদুল মজিদ খান, মঈন উদ্দীন খান বাদল, হাবিবে মিল্লাত, সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, তালুকদার আবদুল খালেক, আমান উল্লাহ, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, মাহবুব আরা, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, মীর শওকত আলী বাদশা, তারানা হালিম, ফজিলাতুন্নেসা (বাপ্পি), বেগম মাহজাবিন খালেদ, ওয়াসিকা আয়েশা খান ও নুরুল ইসলাম মিলন। লাইব্রেরিতে এমপিদের আসতে উদ্বুদ্ধ করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি স্পিকার। মানবজমিনকে তিনি বলেন, শিগগিরই লাইব্রেরি নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে। এতে এমপিদের আমন্ত্রণ জানাবো। পাশাপাশি কক্ষের ভেতরের পরিবেশ আরও উন্নত করা হবে। সংসদ ও সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামন মানবজমিনকে বলেন, এটা খুবই অবাক হওয়ার মতো তথ্য। লাইব্রেরি হচ্ছে এমপিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। এমপিরা হয়তো লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন না। এ থেকে বোঝা যায়, সংসদীয় কার্যক্রমের প্রতি এমপিদের খুব বেশি আকর্ষণ নেই। সংসদীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে একজন এমপিকে অনেক বিষয়ে জানতে হয়। জনগণকে তথ্য দিতে হয়। এজন্য লাইব্রেরির বিকল্প খুব কমই আছে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, লাইব্রেরিতে সাধারণত চার ধরনের পাঠকদের ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বর্তমান ও সাবেক এমপি, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও গবেষণা করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিরা। দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে সংসদ লাইব্রেরি। গ্রন্থাগারে উল্ল্যেখযোগ্য দুষ্প্রাপ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে-বঙ্গীয় আইন পরিষদ বিতর্ক ১৯৩৭-৪৬, গণপরিষদ বিতর্ক ১৯৭২, হাউস অব কমন্স বিতর্ক ১৮০৯-১৯৮০, পাকিস্তান গণপরিষদ বিতর্ক ১৯৪৭-১৯৫৯, অল ইন্ডিয়া রিপোর্টস ১৯১৪-৯৩, ইত্যাদি। লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে ২৭ এমপি বই সংগ্রহ করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদসহ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী সংগ্রহ করেছেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গীতবিতান, শওকত আলী ব্রিটানিকা এটলাস, এ কে এম মাঈদুল ইসলাম ইন্দিরা গান্ধী স্পিচেস ইন পার্লামেন্টসহ বেশ কিছু বই সংগ্রহ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.