চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে ধরে পুলিশের গুলি! by রুদ্র মিজান

চাঁদা না দিলে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বানিয়ে এক ব্যবসায়ীকে মামলায় আসামি করার হুমকি দিয়েছিল পুলিশ। চাঁদা না পেয়ে তাকে গুলি করে লক্ষাধিক টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী ফয়েজ আলী সরকারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর দক্ষিণখানের মধ্য আজমপুরে। তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, অবরোধের পক্ষে পিকেটিংকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকার সবাই বিএনপি-জামায়াতের লোক। ঘটনার সময় প্রতিবেশী নুরুল হাসানের বাড়ির সামনে তার সঙ্গে কথা বলছিলেন ফয়েজ আলী। নিজেকে আওয়ামী লীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে নুরুল হাসান জানান, হঠাৎ দক্ষিণখান থানার দুই পুলিশ সদস্যসহ উপ-পরিদর্শক (্এসআই) জয়নাল দ্রুত তাদের সামনে গিয়ে ফয়েজের জামার কলার চেপে ধরে বলেন, থানায় চল। ফয়েজ অবাক হয়ে তখন জানতে চান, কি হয়েছে, আমাকে থানায় যেতে হবে কেন? একইভাবে নুরুল হাসান জানতে চান, ফয়েজের বিরুদ্ধে কিসের অভিযোগ, তাকে কেন থানায় যেতে হবে? এ নিয়ে বাগবিত-ার একপর্যায়ে ফয়েজের বাম কাঁধ ধরে ঘুরিয়ে কোমরের নিচে এক রাউন্ড গুলি করেন এসআই জয়নাল। জয়নালকে তখন জাপটে ধরেন নুরুল হাসান। গুলিটি ফয়েজের পা ভেদ করে ওই সড়কের এক মাছ বিক্রেতার শরীরে আঘাত করে। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে জয়নাল পিস্তল দেখিয়ে দুই পুলিশ সদস্যসহ দ্রুত পালিয়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে ফয়েজকে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর মধ্য আজমপুর এলাকাবাসী পুলিশের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ফয়েজকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে গেলে সেখানে এসআই জয়নালকে দেখেছেন তার স্বজনরা। পরবর্তীতে দক্ষিণখান থানার আরেক এসআই জাহাঙ্গীরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখা গেছে। ঘটনার বিষয়ে জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। ফয়েজের স্ত্রী রেহানা ফয়েজ জানান, তাদের বাড়ির পাশে আরও একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন তারা। এজন্য লক্ষাধিক টাকা সঙ্গে নিয়ে সকালে বাসা থেকে বের হন ফয়েজ। এরপরেই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর তার সঙ্গে থাকা টাকা পাওয়া যায়নি। রেহানা অভিযোগ করেন, ফয়েজকে গুলি করে তার টাকা নিয়ে গেছে পুলিশ। এ বিষয়ে নুরুল হাসান জানান, রোববার ফয়েজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আজমপুরের আইয়ূব মাকের্টের এসএম নিপু এন্টারপ্রাইজে গিয়ে চাঁদা দাবি করেছিলেন এসআই জয়নাল। ওই সময়ে ফয়েজকে তিনি বলেছেন, টাকা না দিলে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার হিসেবে মামলায় আসামি করে দেয়া হবে। এরপরই সোমবার এ ঘটনা ঘটে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম অর রশিদ তালুকদার বলেন, ওই এলাকার সবাই বিএনপি-জামায়াত করে। তারা অবরোধের পক্ষে সকালে পিকেটিং করছিল। পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় ফয়েজকে আটক করতে গেলে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। তখন এসআই জয়নালের পিস্তল থেকে গুলি বের হয়ে যায় বলে তিনি জানান। এ ঘটনা সত্য হলে ফয়েজকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি বা কোন মামলা করা হয়নি- জানতে চাইলে তিনি জানান, মামলা করা হবে। আজমপুর এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ সিফাতসহ অনেকে জানান, ফয়েজ কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী না। তিনি কখনও কোন দলের মিছিল-সমাবেশে যান নন। এমনকি তার পরিবারের কোন সদস্য রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয়। ফয়েজ আলী সরকারের বড় পুত্র শান্তা মারিয়ামের ছাত্র রাহাদুল ইসলাম নিপু বলেন, আমার বাবা একজন নিরীহ মানুষ। তিনি কোন দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এমনকি আমরা কেউ রাজনীতি করি না। চিকিৎসাধীন ফয়েজের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সোমবার তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। গুলিবিদ্ধ ফয়েজ আলী সরকারের বাড়ি দক্ষিণখানের ১১৩ মধ্য আজমপুরে। তার পিতার নাম মৃত ইউসুফ আলী সরকার। তার দুই পুত্র রাহাদুল ইসলাম নিপু ও রিয়াদুল ইসলাম রিয়ন।

No comments

Powered by Blogger.