শান্তিপুরের মিছিরন by আশরাফুল ইসলাম

অশীতিপর বৃদ্ধা মিছিরন বিবি। নিজের কোন জমিজমা নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই। ৮৪ বছর বয়সের এই বৃদ্ধা, বয়স্ক ভাতা বা ভিজিডির কোন সাহায্য পান না। এমনকি এই শীতে মিলেনি একটি শীতবস্ত্রও। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিছিরন বিবিকে লাঠিতে ভর করে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। হাওর উপজেলা ইটনার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের দরিদ্র মিছিরন বিবির স্বামী আবদুল মজিদ মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। ৩ ছেলে সন্তানের মধ্যেও বড় ছেলে নূর ইসলাম প্রায় ৫ বছর আগে এবং ছোট ছেলে অদিছ মিয়া প্রায় ৩ বছর আগে মারা যান। মেঝো ছেলে সিরাজুল ইসলাম পৃথিবীতে থেকেও যেন নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভূমিহীন সিরাজুলের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। এরপরও ছেলে সিরাজুলের সংসারের এক কোণে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে মিছিরন বিবির। এই বৃদ্ধ বয়সটাই যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে মিছিরন বিবির জন্ম তারিখ ১২ই সেপ্টেম্বর ১৯৩০। সেই হিসেবে তার বয়স ৮৪ বছরেরও বেশি। কিন্তু ৮৪ বছর বয়স হলেও তার ভাগ্যে এখনও সরকারের দেয়া বয়স্ক-ভাতার কার্ড জোটেনি। স্বামীর মৃত্যুর পর তিন ছেলের সংসারে কোন রকমে চলে গেলেও দুই ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করেন তিনি। লাঠিতে ভর করে বয়স্ক-ভাতার জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বার ও অফিসারদের পায়ে ধরেও এ পর্যন্ত কোন ভাতা তার ভাগ্যে জুটেনি। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, শান্তিপুর গ্রামে ছেলে সিরাজুলের জীর্ণকুটিরের এক কোণে পড়ে থেকে শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছেন মিছিরন বিবি। কিছুদিন আগে এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তার ভাগ্যে জুটেনি কোন শীতবস্ত্র। কেমন আছেন জানতে চাইলে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকেন কতক্ষণ। জানালেন, খেয়ে না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকেই নিয়তি হিসেবে ভেবে নিয়েছেন তিনি। বয়স্ক-ভাতা, বিধবা ভাতা কিংবা ভিজিডির কোন সাহায্য পান না জানিয়ে বলেন, কার্ডের লাগি চেয়ারম্যান-মেম্বাররে কতো কইছি। অইলো হেরার কেউরই দয়া অয় না। কেউঅই আমারে একটা কাড কইর‌্যা দিল না। অইলো হুনছি, আমার থাইক্যাও কম বয়সের বেইট্যাইন ভাতা পায়। বাইচ্যা
থাকতে কুনু ভাতা কিতা পাইতাম না? সরকারি নিয়মানুযায়ী, কর্মক্ষমতাহীন অথবা শারীরিকভাবে অক্ষম সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এছাড়া নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভূমিহীন ব্যক্তিদের ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার প্রদান করার বিধান থাকলেও মিছিরন বিবির ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড। পক্ষান্তরে মিছিরন বিবির মতো অসহায় মানুষদের সহায়তার জন্য সরকারের নানা কর্মসূচি চালু থাকলেও ৮৪ বছর বয়সী স্বামীহারা এই বৃদ্ধা পাচ্ছেন না বিধবা ভাতা বা ভিজিডি-ভিজিএফের কোন সুবিধা। অসহায় মিছিরনের কাছে টাকা না থাকায় তিনি সরকারি সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন জানান, মিছিরন বিবির বিষয়টি তার জানা নেই। ৮৪ বছর বয়স হলে তার বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কথা। তিনি কেন বয়স্ক ভাতার তালিকাভুক্ত হননি, তা খতিয়ে দেখা হবে।

No comments

Powered by Blogger.