রাজাপক্ষেকে হারালেন সিরিসেনা

সিরিসেনার বিজয় নিশ্চিত হওয়ার
পর তাঁর সমর্থকদের উল্লাস। এএফপি
তৃতীয় মেয়াদে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে গেল মাহিন্দা রাজাপক্ষের। গত বৃহস্পতিবারের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে সাবেক সহযোগী মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি। অবসান ঘটেছে রাজাপক্ষের এক দশকের ঘটনাবহুল শাসনের। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায়ই শপথ নিয়েছেন সিরিসেনা। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের। রাজাপক্ষের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত মাইথ্রিপালা সিরিসেনা গত নভেম্বর মাসে পক্ষ ত্যাগ করে বিরোধী জোটের টিকিট নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামেন। গতকাল প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, তিনি বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে পড়া মোট ভোটের মধ্যে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ পেয়েছেন। রাজাপক্ষে পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ ভোট। আগে থেকেই বলা হচ্ছিল, কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে এটি। ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যেতেই রাজাপক্ষে পরাজয় স্বীকার করে নেন। রাজধানী কলম্বোসহ বিভিন্ন এলাকায় সিরিসেনার সমর্থকদের বিজয় উদ্যাপন শুরু হয়ে যায়। ৬৩ বছর বয়সী সিরিসেনা সংখ্যাগুরু সিংহলি সম্প্রদায়ের সদস্য হলেও সংখ্যালঘু তামিলদের বড় সমর্থন পেয়েছেন। পাশাপাশি ছিল মুসলমানদের সমর্থন। ঘনিষ্ঠজনেরা বলেছেন, তিনি দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রীলঙ্কা ক্রমবর্ধমানভাবে চীনঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতির পথে চলেছে। পর্যবেক্ষকেরা বলেন, মানবাধিকারের নাজুক অবস্থার কারণে পাশ্চাত্যের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া এর মূল কারণ। নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর সবার আগে একে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক বিবৃতিতে রাজাপক্ষে ভোটারদের রায় মেনে নেওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করে সিরিসেনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চীনা বিনিয়োগের ওপর ক্রমেই বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। দেশটিতে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ায় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক একটা ধাক্কা খাবে বলে অনেকের ধারণা। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। রাজাপক্ষের হারের সম্ভাব্য কারণ: নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলে দেখা গেছে, রাজাপক্ষে এখনো সিংহলি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়। আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সময়ও তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে খুব আশাবাদী ছিলেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী সিরিসেনার পেছনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জড়ো হলে রাজাপক্ষের পায়ের নিচের মাটি দুর্বল হয়ে যায়। সংখ্যালঘু গোষ্ঠী তামিলরাও এবার অন্য কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছে। রাজাপক্ষের হারের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এবং লাগামছাড়া দুর্নীতি। দুই ভাইসহ পরিবারের বেশ কয়েকজনকে রাজাপক্ষে বসিয়েছিলেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে। পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভোটাররা ক্ষুব্ধ ছিল। এর বিপরীতে সিরিসেনা দেশে ‘নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ চালু, রাজাপক্ষের ‘পারিবারিক শাসনের’ ইতি ঘটানো এবং দুর্নীতির মূল উচ্ছেদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.