হল ছেড়েছে শিক্ষার্থীরা by দেলোয়ার মানিক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে অবরোধ সমর্থনে শিবিরের নাশকতার ভয়ে বন্ধ করা হয়েছে ক্যাম্পাস। গতকাল সকালে হলত্যাগের সময় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন তারা। সড়ক দুর্ঘটনায় এক ছাত্র নিহতের জেরে ৩৮ দিন ক্যাম্পাস বন্ধের পর ৭ই জানুয়ারি হল খুলে দিলেও আবারও শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ইবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপিসহ ২০ দলের ডাকা অবরোধে স্থবির পরিবহন ব্যবস্থায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গোটা দেশ। এমন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে সবেমাত্র ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছেছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা আবাসিক হলেও উঠেছিল। কর্তৃপক্ষের ঘোষণা মতে, গত ৮ই জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিগত তিন বছরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যমতে, প্রায় নয় বার এ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ক্যাম্পাস খালি করেছে কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের একটি সূত্রের দাবি, ক্যাম্পাসে বিরাজমান রাজনৈতিক হট্টগোলের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হলেও এর বাইরে শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পদোন্নতি, ছাত্রভর্তি, চাকরি ও টেন্ডার বাণিজ্যসহ এ প্রতিষ্ঠান থেকে নানামুখী সুবিধা আদায়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করে ক্যাম্পাসেরই কিছু কুচক্রী মহল পক্ষগণদের হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তখনই ঠিক ওই চিরাচরিত নিয়মে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। ইবি’র ছাত্র রাফিউল হক বলেন, টানা ৩৮ দিন বন্ধের পর ৭ই জানুয়ারি হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরেছে।  তবে সে ফেরা শুভ হয়নি বরং দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়েছে। একদিনের মাথায় আবারও হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা। হলত্যাগ করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা খালেদা জিয়া হলের ছাত্রী সুমাইয়া সানি জানান, রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু লোক কেবলমাত্র নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এক একটি সময় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। এর দায়ভার বহন করতে হচ্ছে আমাদের। বগুড়ার বাড়িতে যাওয়ার জন্য মহাসড়কে অপেক্ষমাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্র আশরাফ বলেন, কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক পরিস্থিতির অজুহাতে ক্যাম্পাস খোলার একদিন পরই যখন আবার বন্ধ ঘোষণা করলেন তখন আগে থেকেই কেন বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ক্যাম্পাস খোলার ঘোষণা দিলেন? সীমাহীন ঝক্কি-ঝামেলা মাথায় নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে শরীরটাও জিরোতে দিলেন না, মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মাথায় আবার সেই বন্ধ ঘোষণা ও হলত্যাগের নির্দেশ। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ও অবরোধে যানবাহন ব্যবস্থা কার্যত অচল হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে আবার নতুন করে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার শিবির অবরোধ সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনে মিছিল বের করে। সে সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় হলগুলোতে। অভিযোগ উঠে হলে অবস্থানকারী শিবির কর্মীরা অবরোধ সফল করতে আরো বড় ধরনের নাশকতা করতে পরিকল্পনায় ব্যস্ত। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও উপর মহলের চাপে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের দাবি দুর্ভোগের ব্যাপারটি চিন্তা না করে, শিবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের ভয়ে বন্ধ করা হয়েছে ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিবিরের ভয়ের ব্যাপারটা স্বীকার করে বলছে, তাদের অনেক কিছুই করার নেই উপর মহলের চাপে। অনিবার্য কারণবশত হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩০শে নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসচাপায় ছাত্র নিহতের ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় ৩৮ দিন বন্ধ থাকে। এরপর ৭ই জানুয়ারি হল খুলে দেয়া হয়। মাত্র একদিনের মাথায় বন্ধ হয় ক্যাম্পাস।

No comments

Powered by Blogger.