ছিটমহল বিনিময় পরিকল্পনা পরিত্যাগ হতে পারে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় পরিকল্পনা পরিত্যাগ হতে পারে। এমনটা আশঙ্কা করছেন দু’দেশের ছিটমহলের অধিবাসীদের অনেকে। তারা মনে করেন, স্থানীয়দের কড়া আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত এ পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে, যেমনটা দেখা গিয়েছিল ১৯৩২ ও ১৯৩৪ সালে। গতকাল কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ‘সাম এনক্লেভ ফোক ফিয়ার এক্সচেঞ্জ প্লান মে বি অ্যাবানডন্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনটির লেখক মানস ব্যানার্জী। এতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৩২ সালে ছিটমহল বিনিময়ের প্রস্তাব নিয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে ১৯৩৪ সালে তা পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বাংলাদেশের ভেতরে ভারতীয় ছিটমহলের কিছু মানুষ ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের  ভেতরে বসবাসকারী কিছু মানুষের রয়েছে কোচবিহারে তাদের জমির বিষয়ে এক ধরনের আবেগ। সে জন্য তারা তাদের ভূমির অধিকার ছাড় দিতে চায় না। তবে মজার ব্যাপার হলো, ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে যেসব মানুষ বসবাস করছে তার মধ্যে বিরাট একটি অংশ বাংলাদেশী নাগরিক হতে উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু বাংলাদেশী ছিটমহলে বসবাসকারীরা ভারতীয় হতে  বেশি আগ্রহী। ছিটমহল বিনিময় কমিটি, কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটি, ইন্ডিয়ান এনক্লেভস ইউনাইটেড কাউন্সিলের মতো কুচবিহারভিত্তিক সংগঠন, এমনকি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)ও ছিটমহল বিনিময়ের পদ্ধতি নিয়ে তাদের আপত্তি প্রকাশ করেছে, যদিও তারা দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের বিরোধী নয়। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারতের  ভেতরে বাংলাদেশের ছিটমহল পাথুরকুঠি। সেখানকার এক অধিবাসী কাশেম মিয়া। তিনি বলেন, ছিটমহল বিনিময় নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা এড়ানোর জন্য অবশ্যই তিন বিঘা করিডর ইস্যুর সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ ইস্যুটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এটা বলা যেতে পারে যে, ভারতীয় দুটি ছিটমহল দাসিয়ারছড়া ও বাঁশকাটার অধিবাসীরা এরই মধ্যে প্রায় ১০০০ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে, তাতে ছিটমহলগুলোর সঙ্গে করিডরকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি করা হয়েছে। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে শিগগিরই স্মারকলিপি দেয়া হবে। কোচবিহারের আরএসএস-এর ইনচার্জ সাধন কুমার পাল বলেন, সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ভারত তিন বিঘা করিডর লিজ চুক্তি বাতিল করতে পারে। তাছাড়া, ছিটমহল বিনিময় পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে যে কেউ ভারতে গেলেই তাকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। যারা মূল অধিবাসী নন, তাদেরকে আমরা চাই না। আমরা এমন লোকদের চাই না, যারা অন্যের জমি গ্রাস করবেন। অবশ্যই নাগরিকত্ব দিতে হবে ভূমি রেকর্ডের ভিত্তিতে। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৩২ সালে বৃটিশ শাসনের সময়ও সীমানা নির্ধারণ শুরু হয়েছিল। তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই রকম বাধার মুখোমুখি হয়েছিল স্থানীয়দের কাছ থেকে। কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা দেবব্রত চাকি বৃটিশ শাসনের সময়কার বিরোধিতার কথা তুলে ধরেন। ‘ব্রাত্যজনের বৃত্তান্ত’ বইয়ে তিনি কিছু সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। ১৯৩৪ সালের ২১শে মার্চ পশ্চিমবঙ্গের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ-এর পরিচালকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব রাই জেএন সিরকার বাহাদুর। তাতে তিনি লিখেছিলেন- আপনি ১৯৩২ সালের ২২শে আগস্ট যে চিঠি লিখেছিলেন তার চতুর্থ প্যারাগ্রাফে  কোচবিহারের রংপুর জেলা ও জলপাইগুড়ির সঙ্গে রংপুর ও জলপাইগুড়ির ছিটমহল বিনিময়ের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তার প্রেক্ষিতে বলতে হচ্ছে প্রস্তাবিত ওই বিনিময়ের বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে তীব্র বিরোধিতা আছে। তাই সরকার এ প্রস্তাব পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.